ফখরুজ্জামান যেখানে বল যায় সেখানে
মানুষের কত বিচিত্র শখ থাকে! ফখরুজ্জামান তেমনই একজন। বল মাথায় তিনি অবিরাম ছুটে বেড়ান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলের সঙ্গে মিতালি পাতান। বল মাথায় দৌড়ানো, হাঁটা, চা খাওয়া, বাঁশি বাজানো, রিকশা চালানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো—কত অদ্ভুত সব কাজ তাঁর! একসঙ্গে পাঁচটি বল নিয়েও কারিকুরি দেখাতে পারঙ্গম। বল মাথায় দুহাত ছেড়ে মোটরসাইকেল চালানোর বিদ্যাটাও রপ্ত করেছেন দারুণভাবে।
ফখরুজ্জামান তাঁর কীর্তির ফিরিস্তি দেন, ‘বল মাথায় আমি চলন্ত মোটরসাইকেলে খাওয়াদাওয়া, লেখাপড়া, জামাকাপড় পাল্টানো—সবই করতে পারি। চলন্ত মোটরসাইকেলে বল মাথায় রেখে বই পড়ি, লিখি, খাই, জামাকাপড় খোলা, চা খাওয়া, বাঁশি বাজানোর মতো কাজও করেছি অনেক।’ শুধু কি তাই, ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে পারেন একটি বল মাথায় রেখে। একটু ধীরে মোটরসাইকেল চালালে দুটি বলও নাচাতে পারেন হাতের আঙুলে। এই বিদ্যায় ৪০ বছরের সাধনা ফখরুজ্জামানের।
ফখরুজ্জামান বল মাথায় অবলীলায় গাছের আগায় উঠে নিজেকে আলাদা করে নেন। নারকেলগাছ থেকে ডাব নিয়ে নেমেছেন বল মাথায়। খেজুর, সুপারি পেড়েছেন বল মাথায়। উঠেছেন বিশাল তালগাছেও। আর পায়ের পাতার ওপর টানা ১০-১২ ঘণ্টা বল নাচানোর কথা নাই-বা বলা হলো। ঊরু, দুই কাঁধ, মাথায় বিরতিহীনভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল নাচান। বল নিয়ন্ত্রণের সময় হঠাৎ ডিগবাজি খেয়ে আবার বল বাতাসে রেখেই মাথায় নিতে পারেন নরসিংদীর এই বিস্ময়মানব।
ফখরুজ্জামানের চোখে এখন বড় স্বপ্ন, ‘বল মাথায় সবচেয়ে বেশি সময় মোটরসাইকেল চালিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বইয়ে নাম তুলতে চাই। ১০-২০ কিলোমিটার বল মাথায় নিয়ে সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য আছে আমার। বল মাথায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটা এবং ৪০ কিলোমিটার বেগে মোটরসাইকেল চালিয়ে ১৫০-২০০ কিলোমিটার যাওয়ার ইচ্ছা রাখি। ইতিহাসের পাতায় নাম লিখতে চাই। এটা আমার স্বপ্ন।’ সেই স্বপ্নপূরণে কষ্ট করে চলেছেন অবিরাম। ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বল নিয়ে এভাবে নানা রকম খেলা দেখানো সহজ নয়। ভোরে উঠে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা অনুশীলন করতাম। অনুশীলন করে করে সব রপ্ত করেছি। এখনো নতুন নতুন কিছু রপ্ত করতে অনুশীলন করে যাচ্ছি।’
২০০৪ সালে কাতার ফুটবল ফেডারেশন তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যায় বল নিয়ে কসরত দেখাতে। কাতার আল রায়হানস স্পোর্টস ক্লাবে কসরত দেখান কয়েক ঘণ্টা। অনেক ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলা দেখিয়েছেন। হানিফ সংকেতের ইত্যাদি কিংবা রায়হান গফুরের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁকে চিনেছেন অনেকেই। এত দূর আসার পেছনে কৃতজ্ঞতা জানান মনসুর স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মনসুর আলীকে। যাঁর ক্লাবে খেলেছেন ফখরুজ্জামান। দুই ছেলে, এক মেয়ের জনক ফখরুজ্জামান থাকেন পুরান ঢাকার নবাবপুরে। সুখ-দুঃখকে আলিঙ্গন করে এগিয়ে চলছে তাঁর জীবন। যেখানে তিনি মিতালি পেতেছেন বলের সঙ্গে।