সালটা ১৯৪৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। নৌ প্রকৌশলী সুতুমু ইয়ামাগুচি (১৯১৬-২০১০) তখন তিন মাসের প্রকল্পে কাজ করছিলেন জাপানের হিরোশিমায়। নিজ দেশের জন্য জাহাজ আর অয়েল ট্যাংকারের নকশা তৈরির কাজ তাঁর।
প্রকল্পের কাজ শেষে ৬ আগস্ট প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রিয়তমা স্ত্রী আর আদরের কন্যাকে দেখতে যাওয়ার। রওনা দেওয়ার মুহূর্তেই দেখেন, প্যারাসুট দিয়ে কী যেন নেমে আসছে। সেটি আর কিছু নয়, হিরোশিমাকে মুহূর্তেই ধূলিসাৎ করে দেওয়া পারমাণবিক বোমা!
পারমাণবিক বোমা ইনোলা গে আকাশেই বিস্ফোরিত হয়। ইয়ামাগুচি নিকটবর্তী খাদে লাফ দেন। বোমাটি তাঁর অবস্থান থেকে প্রায় দুই মাইল দূরের শহরটিকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল। কিন্তু ভয়াবহতা সুতুমু ইয়ামাগুচিকেও আক্রান্ত করে। তাঁর শরীর ভয়াবহভাবে পুড়ে যায়, কানেও ভীষণ আঘাত পান।
শরীরে কিছুটা শক্তি ফিরে পেলে তিনি নিজ শহর নাগাসাকিতে ফেরার পথ ধরেন। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন অসংখ্য গলিত মৃতদেহের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যান ইয়ামাগুচি। একসময় পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে পৌঁছান স্ত্রী-কন্যার কাছে। পরদিন সকালে তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বোমা বিস্ফোরণের বিষয়টি জানান। কিন্তু কেউ তাঁর কথা বিশ্বাস করছিলেন না, অবিশ্বাসের কারণ ভয়াবহতা। একটি বোমা এত ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে, এই ধারণা তাঁদের ছিল না। ঠিক যখন সেই বৈঠক চলছিল, তখনই নাগাসাকিতে আঘাত হানে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমাটি। সেদিন ছিল ৯ আগস্ট। এই বিস্ফোরণে ইয়ামাগুচির সব ব্যান্ডেজ উড়ে যায় কিন্তু দৈবক্রমে ইয়ামাগুচি আবার বেঁচে যান। বাসায় এসে দেখেন ভাগ্যক্রমে তাঁর পরিবারও বেঁচে গেছে।
ইতিহাসের নৃশংস এই দুটো পারমাণবিক বিস্ফোরণ দেখে বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু সুতুমু ইয়ামাগুচিই দলিলপত্রে একমাত্র ব্যক্তি, যিনি দুটো পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে ফেরা মানুষ।