২১ মার্চ ফেসবুকের একটি গ্রুপে দেখা একটি ভিডিও বেশ নাড়া দিয়ে গেল। তাতে দেখা যায়, নোংরা নর্দমায় পড়ে যাওয়া কুকুরকে সেখান থেকে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। শেষমেশ সফলও হলেন একজন। তিনিই ফেসবুকে দিয়েছেন ভিডিওটি।
এই কুকুরকে যিনি উদ্ধার করেছেন, তাঁর নাম মোহাম্মদ আল মা’মূর। নারায়ণগঞ্জের চৌধুরীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর মা’মূর পেশায় উদ্যোক্তা, গবাদিপশু খামারি। ২৫ মার্চ ঢাকার শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে তাঁর সঙ্গে কথা হয় কুকুর উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে।
অটোরিকশাচালকের পাশের আসনে বসে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে চৌধুরীবাড়ি যাওয়ার পথে নবীগঞ্জ গুদারাঘাট ও আইইটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঝামাঝি এম সার্কাস নামের জায়গায় খোলা নর্দমায় কুকুরটি আটকে থাকতে দেখেন মা’মূর। প্রায় চার ফুট গভীর গর্তের মধ্যে মোটা পাইপ বসানো থাকলেও পাইপটি মাটিচাপা ছিল না। পাশে গর্তের মধ্যে ময়লা যাওয়ার জন্য একাধিক পাইপ সংযুক্ত করা ছিল। একটি পাইপের ফাঁকে পিচ্ছিল জায়গায় ময়লা পানিতে কুকুরটির পেছন অংশ আটকে গিয়েছিল। অটোরিকশা থেকে নেমে প্রথমে ১২-১৩ বছরের এক ছেলেকে টাকার বিনিময়ে কুকুরটিকে বের করে আনার প্রস্তাব দেন তিনি। ছেলেটি বিনা পারিশ্রমিকে উদ্ধারচেষ্টায় রাজি হয়। কিন্তু কুকুরটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এবার মা’মূর নিজেই এসে হাত লাগান। ময়লা এড়ানোর জন্য কুড়িয়ে পাওয়া কাগজ পাইপে বিছিয়ে নিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া বাঁশ ও রশির সাহায্যে চেষ্টা করার পর যখন কুকুরটিকে উদ্ধারে সক্ষম হন, দেখেন আশপাশে তখন অনেক মানুষের জটলা। কেউ কেউ ধারণ করছেন ভিডিও।
মা’মূর বলেন, ‘কারও বাহবা পাওয়ার জন্য আমি এই কাজ করিনি। কুকুরটিকে ওই অবস্থায় দেখে খারাপ লাগছিল। তাই...।’
প্রায় চার মিনিটের সেই ভিডিও ধারণ করেছেন হাবিব নামের একজন পথচারী। তাঁর কাছ থেকে ভিডিওটি নিজের মুঠোফোনে নিয়ে ফেসবুকে দিয়েছেন মা’মূর, যেন অসহায় প্রাণীদের সাহায্য করতে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হয়।
নিজে খামারি বা পশু নিয়ে কাজ করেন, এ ব্যাপারটাই বিপদাপন্ন কুকুর উদ্ধারে উদ্বুদ্ধ করেছে কি না? মা’মূর বললেন, ‘প্রাণী কিংবা মানুষ—জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে, যেকোনো পরিবেশে যে কারও বিপদে তাঁর নিজের আয়ত্তের মধ্যে থাকলে সাহায্য করার চেষ্টা করি। এবারের ঘটনাও তাই।’