২০০৯ সালের মানবাধিকার আইনের ১২ ধারার ঠ উপ-দফা বলেছে, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন বা লঙ্ঘিত হইতে পারে, এমন অভিযোগের ওপর তদন্ত ও অনুসন্ধান করিয়া মধ্যস্থতা ও সমঝোতার মাধ্যমে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা।’ ১/১১ তে এই ধারা প্রয়োগ করে কমিশন চাকরিসংক্রান্ত একটি বিরোধ মিটিয়েছিল। কিন্তু সেই মধ্যস্থতা আর র্যাবের পক্ষে কথিত মধ্যস্থতা এক নয়। মধ্যস্থতা বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের যে অসতর্ক উক্তি ২৪ জুন প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে, তা তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। এ ধরনের প্রস্তাব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাগরিকের অধিকার রক্ষা করতে না পারুন, কিন্তু ন্যায়বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে উপহাস করতে পারেন না।
এখন এটা স্পষ্ট যে গত ৩০ মে ড. মিজানুর রহমান তাঁর নৈতিক কর্তব্য পালনের অভিপ্রায় থেকে র্যাবের করা দুটি মামলা প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাননি। তাঁর পদক্ষেপ সমাজের আইনের শাসনের ভঙ্গুরত্ব নির্দেশ করছে। তেলে-জলে মেশে না। অন্যায়ের সঙ্গে ন্যায় বিনিময়যোগ্য হতে পারে না। সত্যের সঙ্গে মিথ্যার, পাপের সঙ্গে পুণ্যের এবং নৈতিকতার সঙ্গে অনৈতিকতার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। ড. মিজান এই দ্বন্দ্বে দৃশ্যত অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর ‘মধ্যস্থতা’ এমন একটি সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন দ্বিতীয় মেয়াদে মানবাধিকার কমিশনে তাঁর পুনর্নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান ছিল।
লিমনের মায়ের বক্তব্য সত্য হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের এই উপলব্ধি একটি অপ্রিয় সত্যও বটে। রাষ্ট্র র্যাবের পক্ষে। রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে টেকা যায় না। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ লাভ প্রমাণ করে যে এই টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি সফল হয়েছেন। যে প্রস্তাব আড়াই বছর আগে ঝালকাঠির ডিসি দিয়েছিলেন, তাই আজ বেরিয়ে এসেছে আইনের অধ্যাপকের কাছ থেকে, অথচ সত্য ও ন্যায়ের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে যাঁর অবতীর্ণ হওয়ার কথা, তাঁর বক্তব্য শুনে লিমন ও তাঁর বাবা-মায়ের মনে বিচার না পাওয়ার শঙ্কা আরও বাড়বে।
এর পরও প্রত্যাশা, তিনি তাঁর অবস্থান বদলাবেন। মিথ্যা মামলা তুলে নিতেই রাষ্ট্রকে চাপ দেবেন। অত্যাচারিতকেই কাঠগড়ায় তুলতে হবে, ভুক্তভোগীকে নয়। এটা শুধু লিমনের পরিবারের জন্য নয়, সমাজে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যও জরুরি। আশা করব, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এই স্বপ্ন মুছে দেওয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না।