বিশেষ সাক্ষাৎকার: অমর্ত্য সেন
ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বহুপক্ষীয় মতাদর্শে আমার আগ্রহ
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সমাজবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য সম্প্রতি স্পেনের সম্মানজনক ‘প্রিন্সেস অব আস্তুরিয়াস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। সম্মাননা পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির নিজস্ব সংবাদমাধ্যম দ্য হার্ভার্ড গেজেট-এর পক্ষ থেকে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারটি নেন মাধ্যমটির লেখক ক্রিস্টিনা পেজানেজি। সাক্ষাৎকারে এই অর্থনীতিবিদের শৈশব থেকে শুরু করে ১৯৯৮ সালে নোবেল পাওয়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরিধি, উৎসাহ ও দর্শন নিয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে। প্রথম আলোর পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারটি কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে তুলে ধরা হলো।
হার্ভার্ড গেজেট: ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতে আপনার বেড়ে ওঠার গল্প বলুন।
অমর্ত্য সেন: আমার পরিবারের ভালো একটা একাডেমিক পটভূমি আছে। আমার বাবা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। পরে আরও বিভিন্ন জায়গায় পড়িয়েছেন। মায়ের পেশা তো বৈচিত্র্যময়। সে সময়েই তিনি একটি ম্যাগাজিন চালাতেন। সেটি ৩০ বছর ধরে সম্পাদনা করেছিলেন। মায়ের বাবা ছিলেন শান্তিনিকেতনের বেশ পরিচিতি পাওয়া একজন শিক্ষক। আমি ৭ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে বড় হয়েছি।
হার্ভার্ড গেজেট: বাবা-মায়ের সঙ্গে না থেকে নানা-নানির সঙ্গে থাকতেন কেন?
অমর্ত্য সেন: তখন জাপানের সঙ্গে ব্রিটিশদের যুদ্ধ (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) শুরু হয়েছে। জাপানি সৈন্যরা ভারতের কাছাকাছি চলে এসেছিল। কলকাতা আর ঢাকা তখন নিরাপদ না। শান্তিনিকেতনের পরিবেশ নিজেও পছন্দ করতাম। যেকোনো সময় পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ার সুযোগ ছিল।
হার্ভার্ড গেজেট: ক্লাসের বাইরে ওই বয়সে আপনার আগ্রহ ছিল কী নিয়ে?
অমর্ত্য সেন: ছোটবেলা থেকেই আমার মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। পাগলের মতো বাইসাইকেল চালাতাম। যেখানেই যাই সাইকেল চালিয়ে যাই। এক শিক্ষাসফর থেকে আমার ভারতের দুর্ভিক্ষ নিয়ে আগ্রহ শুরু হলো। ১৯৪৩ সালে বাংলার মন্বন্তর নিয়ে আগ্রহও এভাবেই শুরু। যুদ্ধকালীন অর্থনীতিতে কিছু মানুষের হাতে পয়সা জমে যায়। এরপর বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তখন খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে না। এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চাল কেনার ক্ষমতা থাকে না জনসংখ্যার একটি বড় অংশের। এরপর একসময় লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে আগ্রহী হলাম। দেখলাম, মেয়েশিশু আর ছেলেশিশুদের জন্মের সময় ওজন যেমনই থাকুক, তাদের পার্থক্য শুরু হয় বছর পাঁচেক বয়স থেকে। একই বয়সের মেয়ে আর ছেলেশিশুর মধ্যে পুষ্টিগত পার্থক্য বাড়তে থাকে।
■ ব্রিটিশ শাসকেরা কিন্তু হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা থামাতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছে বলে মনে হয়নি। ■ মানুষের জীবনের শোচনীয় পরিস্থিতি আমাকে উদ্গ্রীব করেছে। ■ কখনোই এমন কাজ করিনি যাতে নিজের আগ্রহ ছিল না। ■ সমাজের পছন্দ থাকতে পারে না, কারণ সমাজ কোনো ব্যক্তি নয়।
হার্ভার্ড গেজেট: আপনার শৈশবে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নানা উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৪৭-এর দাঙ্গার ঘটনা মনে আছে?
অমর্ত্য সেন: ব্রিটিশ শাসকেরা কিন্তু হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা থামাতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছে বলে মনে হয়নি। বরং তাদের ভারতবর্ষে থাকাটা প্রয়োজনীয় করে তুলতে দাঙ্গা উসকে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দাঙ্গার শুরুর দিকে, আমার বয়স তখন ১০ বা ১১ বছর হবে, একদিন বাগানে খেলছি। হঠাৎ বাইরে থেকে আমাদের কম্পাউন্ডের ভেতর একজন মানুষ ঢুকে পড়লেন, যাঁর পিঠে ছুরি মারা হয়েছে। ভয়ানক রক্তপাত হচ্ছে। তিনি কাতর কণ্ঠে পানি চাচ্ছিলেন। বাবা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচাতে পারেননি। মানুষটি ছিলেন দিনমজুর। মৃত্যুর আগে তিনি কয়েকটি বাক্য বলতে পেরেছিলেন। তাঁর ঘরে বাচ্চাদের জন্য কোনো খাবার ছিল না। এ কারণে তিনি ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। হিন্দু সন্ত্রাসীরা তাঁর পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয়। একই ঘটনা আবার হিন্দু দিনমজুরদের সঙ্গেও ঘটেছে। হিন্দু বা মুসলিম না, আসলে নিগৃহীতই তাঁদের বড় পরিচয়। ওই সময়ের দাঙ্গায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন সেই হিন্দু-মুসলিমদের অধিকাংশই কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ।
হার্ভার্ড গেজেট: এই অভিজ্ঞতা আপনার পেশাজীবনে কি কোনো ছাপ রেখেছে?
অমর্ত্য সেন: অবশ্যই। সহিংসতা ও অপ্রত্যাশিতভাবে এত মৃত্যুর ঘটনার অভিজ্ঞতা বহন করেছি। দুর্ভিক্ষে মানুষ না খেয়ে মরেছে, অসুস্থ হয়েছে, অপুষ্টিতে ভুগেছে। মানুষের জীবনের এমন শোচনীয় পরিস্থিতি আমাকে উদ্গ্রীব করেছে। নিজের জীবনে সে অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি।
হার্ভার্ড গেজেট: রাজনীতিতে আপনার আগ্রহ কি কলেজজীবন থেকেই?
অমর্ত্য সেন: আরও আগে। শান্তিনিকেতনের জীবন থেকে। আমার পরিবারের সদস্যরা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি চাইত। আমার বাবা ও মায়ের ভাইয়েরা, বন্ধু, আত্মীয়সহ অনেকেই ব্রিটিশের ‘প্রিভেনটিভ ডিটেনশন’ আইনে গ্রেপ্তার হয়েছে।
হার্ভার্ড গেজেট: আটক হওয়া আপনার আত্মীয়দের নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগ ছিল কেন?
অমর্ত্য সেন: আসলে আমার আত্মীয়েরা লেখার মধ্য দিয়ে বারবার প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কেন ব্রিটিশ সরকারের এ দেশে থেকে চলে যাওয়া উচিত। তখন আমি বেশ ছোট। আমাকে সঙ্গে নিয়ে দিদা আর দাদু গেলেন এক ব্রিটিশ রাজকর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে। জানতে চাইছিলেন, কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটালেও তাঁদের ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে কেন? সেই সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন, ব্রিটিশবিরোধী লেখা বন্ধ করার জন্য আটকে রাখা হয়েছে।
হার্ভার্ড গেজেট: কেমব্রিজে পড়তে ভারত থেকে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন জাহাজে, ১৮ দিনে। এভাবে কেন গেলেন?
অমর্ত্য সেন: আমার বাবার পরিকল্পনা। কলকাতায় ছাত্রাবস্থায় আমার মুখের ভেতর একধরনের স্কিন ক্যানসার ধরা পড়ে। রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়ার ফলে মুখের ভেতরের অনেকগুলো পাতলা হাড় ভেঙে গিয়েছিল। চিকিৎসক তখন আমার বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। বলেই দিলেন, ৫ বছর বেঁচে থাকার সুযোগ আছে মাত্র ১৫ শতাংশ। ওই অবস্থা থেকে যখন অনেকটা সুস্থ হলাম, বাবা ভাবলেন হয়তো ইংল্যান্ডে থাকলে আরও সুস্থ হয়ে উঠব। কিন্তু সেখানে রেখে আমাকে মাত্র ৩ বছর পড়ানোর সামর্থ্য ছিল তাঁর। প্রথমে আমি
সুযোগ পাইনি। তবে পরে যখন সুযোগ পেলাম তখন তিনি পড়ার খরচসহ জাহাজে যাওয়ার খরচও জোগাড় করেছিলেন।
হার্ভার্ড গেজেট: ওই সময়ে কেমব্রিজের অর্থনীতি বিভাগের সুনাম কি আপনাকে আকর্ষণ করেছিল?
অমর্ত্য সেন: আমি যখন কেমব্রিজে যাই, তখন পুরো বিশ্বে ওখানকার অর্থনীতি বিভাগের সুনাম। কিন্তু আমার আগ্রহ ছিল গণিতে। আর কেমব্রিজে তখনো বার্ট্রান্ড রাসেল, হোয়াইটহেড, ভিটগেনস্টাইনদের গণিতের দর্শনের প্রভাব কম ছিল না।
হার্ভার্ড গেজেট: সে সময় অর্থনীতির কোন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল?
অমর্ত্য সেন: অনেক প্রসঙ্গের মধ্যে গুরুত্ব পাচ্ছিল বেকারত্ব সমস্যা। কেইনেশিয়ান পলিসি (অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনসের তত্ত্ব) নির্ধারণে এ সমস্যার সমাধান হবে, নাকি সরকারি ব্যয়নীতি এবং পরিকল্পিত পদ্ধতি দরকার—এসব নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল। এর মধ্যে আরও একটি প্রসঙ্গে আমার আগ্রহ বরাবরই ছিল, দরিদ্রের অর্থনীতি। তাঁরাই দরিদ্র, যাঁদের আসলে শ্রম ছাড়া নিজের বলতে আর কোনো সম্পদ নেই। এই মানুষগুলো শ্রম বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করে। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি গুরুত্ব পায় সেটি হলো তাদের ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত। শ্রমতত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে বলেই তাঁদের অর্থনীতি আর শ্রমের মূল্য নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছি।
হার্ভার্ড গেজেট: সে সময়ে আপনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?
অমর্ত্য সেন: বলতে পারেন অনেকটাই বামঘেঁষা মধ্যপন্থী। তবে বরাবরই ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বহুপক্ষীয় মতাদর্শে আমার আগ্রহ। ভাবতাম অনেক কিছু বামেদের দেওয়ার আছে। কেমব্রিজে আসার আগে কলকাতায় থাকতে এমনই মনে করতাম। তবে বামেরা কখনো কখনো মানুষকে স্বাধীনতা ও ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে ‘বুর্জোয়া বিলাসিতা’ বলে মনে করে। এটা আবার আমার পছন্দ নয়।
হার্ভার্ড গেজেট: ভারতে আপনি শিক্ষকতার মতো যথেষ্ট সম্মানজনক একটা চাকরি ছেড়ে কেমব্রিজে চলে এসেছিলেন দর্শন নিয়ে পিএইচডি করতে। দর্শন কেন?
অমর্ত্য সেন: দর্শন নিয়ে আমার সব সময়ই আগ্রহ ছিল। অল্প বয়সে যখন সংস্কৃত পড়তে শিখলাম তখন থেকেই বাড়িতে যেসব প্রাচীন যুগের পুঁথি ছিল সেগুলো আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। দর্শনশাস্ত্রের মধ্যে নীতিশাস্ত্র ও জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনায় আকর্ষণ বোধ করতাম বেশি। এর মধ্যে গণিতের দর্শন টানত সবচেয়ে বেশি। কলেজ থেকে আমাকে হঠাৎ করেই যখন একটা সুবিধা দেওয়া হলো যে পরবর্তী ৪ বছরের জন্য নিজের পছন্দমতো যেকোনো একটি বিষয়ে কাজ করতে পারব, তখনই সুযোগটি কাজে লাগালাম।
হার্ভার্ড গেজেট: দর্শন পাঠের সময় কোন চিন্তাবিদেরা আপনাকে বেশি প্রভাবিত করেছেন?
অমর্ত্য সেন: স্কুলে থাকতেই দার্শনিক আর্যভট্টের দর্শন আমাকে টানত। ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালের আর্যভট্ট ছিলেন একাধারে গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক। তাঁর বেশি আগ্রহ ছিল পৃথিবীর নিত্যদিনের গতি নিয়ে। আর্যভট্ট ভাবতেন, পৃথিবী গোল তাহলে এক পাশে মানুষ থাকলে অন্য পাশের মানুষ বা বস্তুগুলো স্থির থাকছে কেমন করে? তাঁর শিষ্য ব্রহ্ম গুপ্তসহ কয়েকজন তখন আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের সেই সময়ের ভাবনাগুলো ছিল যথেষ্ট আধুনিক। স্কুলে থাকতে অধিকাংশ সময় কাটাতাম সংস্কৃত ধাঁধা নিয়ে। এসব অধিকাংশই আসলে ধর্মচিন্তার বাইরে যুক্তিবাদী ভাবনা। যখন কেমব্রিজে এলাম তখন এখানে ক্রমেই আধুনিক গণিতশাস্ত্রের দর্শনের গুরুত্ব বাড়ছে। রাসেল বা হোয়াইটহেডের প্রভাব বেশ আছে তখন। তবু তখন আমার নীতিশাস্ত্র ও জ্ঞান–বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ যথেষ্ট। নীতিশাস্ত্রে জন রলস আমার জন্য বড় পথপ্রদর্শক।
হার্ভার্ড গেজেট: অর্থনীতিতে আপনার কাজের গুরুত্বপূর্ণ দিক নারী-পুরুষের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য। এ নিয়ে কেন আগ্রহী হয়েছিলেন?
অমর্ত্য সেন: শৈশবে খুব প্রগতিশীল স্কুলে পড়লেও সেখানে দেখেছি, ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু সাধারণ বিষয়েও বৈষম্য ছিল। একই ফলাফল করলেও একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর চেয়ে ছেলে শিক্ষার্থীর প্রশংসা বেশি হতো। এর পারিপার্শ্বিক ফলাফল কী হতো জানেন? মেয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গুটিয়ে রাখতে শুরু করত। এসব আমাকে ভাবাত।
হার্ভার্ড গেজেট: অর্থনীতির এমন অনেক প্রচলিত তত্ত্ব আছে যেগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে, আপনার নিজের এমন কোনো তত্ত্ব আছে, যেটা আবার বিবেচনা করতে চান?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ আছে। সামাজিক পছন্দ তত্ত্বের কথা বলতে পারি। প্রথম দিকে আমিও অ্যারোর মতো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিলাম, সমাজের একটি সংগঠিত, নিয়মতান্ত্রিক পছন্দ থাকতে হবে। যদিও সমাজের এমন পছন্দ থাকতে পারে না, কারণ সমাজ কোনো ব্যক্তি নয়। ব্যক্তিদের নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে। প্রচলিত সামাজিক পছন্দ তত্ত্বের অন্তর্নিহিত ভাবটা হচ্ছে, অসম্ভব বলে কিছু থাকতে পারবে না, যেটা আসলে নিজেই একটা অসম্ভব ভাবনা।
হার্ভার্ড গেজেট: অর্থনীতিতে বিভিন্ন অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে আপনাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রায়ই অনেক বিজয়ীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে তাঁদের ক্যারিয়ার থেমে যায়। আপনার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। কেমন করে সম্ভব?
অমর্ত্য সেন: মানুষ আমার অবসর নেওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছে (হাসি)। কাজ করতে পছন্দ করি আমি। কখনোই এমন কাজ করিনি যাতে নিজের আগ্রহ ছিল না। এখনো কাজ চালিয়ে যাওয়ার পেছনে এটাই কারণ। বয়স ৮৭ চলছে। শিক্ষকতা করার জন্য এটা উপযুক্ত বয়স নয়, তবে আমি পছন্দ করি বলেই কাজটা করছি। আমার ছাত্রছাত্রীরাও তাঁদের শিক্ষকের পড়ানোয় অসন্তুষ্ট বলে মনে হয় না। তাই যত দিন সম্ভব এটি চালিয়ে যেতে চাই।
● অনুবাদ: সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম।