সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বে পিএইচডি অর্জন করেছেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দারিদ্র্য, সুশাসন, স্থানীয় সরকার, মানসম্মত শিক্ষা, টেকসই উন্নয়ন, নগরায়ণ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা ও নীতি প্রণয়নের কাজ করছেন। তিনি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিপিআরসির প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে এর নির্বাহী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শক, বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডের সদস্য ও সার্ক প্রভার্টি কমিশনের সদস্য হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে হোসেন জিল্লুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়াপ্রথম আলো বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাকে কি আপনি সংকটকাল বলে মনে করেন?হোসেন জিল্লুর রহমান সামনের নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা আমাদের সত্যিই বড় সংকটে ফেলে দিয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক ও সমাজের নানা মহলে আলোচনা বা তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। সবার মনোযোগও এদিকে। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশের সামনে এখন সংকট তিনটি। প্রথমত, নির্বাচনী অনিশ্চয়তা; দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক শাসন বা সুশাসনের সংকট ও তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক গতিধারার সংকট। নানা মহল প্রথম সমস্যাটি অর্থাৎ নির্বাচনী অনিশ্চয়তার বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ পেলেও আমি একই সঙ্গে বাকি দুটি সমস্যাকেও সমগুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হলে এই তিনটি বিষয়কেই একসঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রথম আলো বাংলাদেশে তো রাজনৈতিক শাসনই কার্যকর রয়েছে। আর সুশাসনের সংকট তো সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে বরাবরই রয়ে গেছে। আপনি কি এর বিশেষ কোনো দিকের ওপর গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক শাসন বলতে আমি নির্বাচন-পরবর্তী ব্যবস্থাপনাকে বোঝাতে চাইছি। নির্বাচিত হওয়ার পর একটি সরকার যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তাতে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়ে গেছে। অর্থাৎ সুশাসন বলতে যা বোঝায় তা সরকার নিশ্চিত করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে প্রথম যে দুটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, তা হচ্ছে আইনের শাসনের ধস ও দুর্নীতির মহামারি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ব্যক্তি ইচ্ছাই শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকার পরিচালনা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধার অবমূল্যায়ন। দুর্নীতির প্রসার এত বেশি ঘটেছে যে অর্থমন্ত্রীর মুখে শুনতে হয় হল-মার্কের তহবিল তছরুপ এমন বড় বিষয় নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস বা জন-অসন্তোষের যে চিত্র আমরা দেখলাম, তা এই শাসন পরিচালনার ব্যর্থতা ও দুর্বলতারই প্রমাণ।
প্রথম আলো আপনি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও সংকটের কথা বললেন। কিন্তু বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ভালো করছে—এমন ধারণাই তো আমরা পাচ্ছি বিভিন্ন মহল থেকে।
হোসেন জিল্লুর রহমান দেখুন, আমি আসলে অর্থনৈতিক গতিধারার কথা বলতে চাইছি। সাধারণভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে আমরা দেখব যে খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি সহনশীল, অনেক দেশের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ভালো। প্রথম থেকেই প্রতি এক দশকে ১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এগুলো সবই ইতিবাচক, কিন্তু এই অর্থনৈতিক গতিধারাকে বিবেচনায় নিলে আমরা দেখব যে বর্তমানে আমরা একধরনের বন্ধ্যত্বের মধ্যে চলে আসছি। প্রবৃদ্ধির এই পর্যায়ে এসে আমরা যেন আটকে যাচ্ছি। শুধু খাদ্যনিরাপত্তা বা বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার দিয়ে অর্থনীতির গতিধারাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। যেমন ধরুন, প্রতিবছর আমাদের শ্রমবাজারে যে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী যুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের কর্মসংস্থান আমরা কীভাবে করব, সেটা কিন্তু বড় বিবেচনা।
প্রথম আলো আপনি কি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করছেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান আমি যা বলতে চাইছি তা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি পরিচালনার যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে বড় সমস্যা রয়েছে। অর্থনীতিতে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বলে একটি কথা আছে, বাংলায় বিষয়টিকে স্বজন বা চেলাচামুন্ডাদের অর্থনীতি হিসেবে বর্ণনা করা যায়। ব্যাংক ও বিমার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সম্প্রতি সরকার যা করল, তা এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। তবে বিষয়টি শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, অন্য সব ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় ধরনের বিভিন্ন নীতি উদ্যোগ দরকার হলেও সরকার তা নিতে পারছে না। যেগুলোতে নেওয়া হচ্ছে সেখানেও মেধা বা দক্ষতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রথম আলো বিষয়টি কি একটু ব্যাখ্যা করবেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান যেমন ধরুন, বিদ্যুৎ একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ খাত। কুইক রেন্টাল দিয়ে সরকার পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার একটি স্বল্পমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা। জ্বালানি খাতে সুদূরপ্রসারী ও ভবিষৎমুখী কোনো নীতি সরকার নিতে পারেনি। অথচ এই খাতে বড় ধরনের নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরি। কৃষি নিয়েও বলা যায়, আমরা রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছি। আমরা বেশ কিছু সময় ধরে খাদ্যনিরাপত্তার মধ্যেই আটকে রয়েছি। খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু এটা অর্জিত হওয়ার পর কি আমরা সেখানেই আটকে থাকব? আমরা যে প্রবৃদ্ধি চাইছি, সেখানে কৃষি খাত থেকে আমরা কতটুকু সমর্থন বা কী পেতে পারি, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা বা উদ্যোগ কোথায়? আমি তো মনে করি, আমাদের এখন শুধু খাদ্যনিরাপত্তায় আটকে না থেকে কৃষি কীভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা জরুরি। কিন্তু আমরা দেখছি, কৃষির যেসব উপখাত প্রবৃদ্ধি সহায়ক হতে পারে যেমন ডেইরি, মৎস্য বা পশুসম্পদের মতো খাতগুলোতে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
প্রথম আলো আপনি কি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরও সামনে দৃষ্টি দেওয়ার নীতি গ্রহণের কথা বলছেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান বিষয়টি আসলে তা-ই। সমস্যাটা হচ্ছে, সরকার বলছে দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের কথা, কিন্তু যে নীতি গ্রহণ করছে তা হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি। সরকার ভিশন ২০২১-এর কথা বলছে, এটা দীর্ঘমেয়াদি বিষয় অথচ নীতির ক্ষেত্রে সবকিছুই স্বল্পমেয়াদি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা যে নীতিতে চলছি, তাতে আর যা-ই হোক, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নেই। প্রবৃদ্ধিকে বেগবান করার জন্য ব্যতিক্রমী কোনো উদ্যোগ লক্ষণীয় নয়। আগেই বললাম যে অর্থনীতি পরিচালনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মারাত্মক সমস্যা রয়েছে। আসলে সামগ্রিক ক্ষেত্রেই বলিষ্ঠ ও জোরালো নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে।
প্রথম আলো যেমন...
হোসেন জিল্লুর রহমান শহর ও নগরগুলো প্রবৃদ্ধি অর্জনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। কিন্তু দেখুন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ চলছেই। এ ধরনের অপরিকল্পিত নগরায়ণ দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বড় বাধা। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন জোরালো ও বলিষ্ঠ নীতি গ্রহণ। কিন্তু সরকার তা নিতে পারছে কই? দুর্বল অবস্থান ও নীতি বলিষ্ঠতার অভাবের কারণে ঢাকায় গণপরিবহন বলে কিছু নেই। অথচ একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এটা খুবই জরুরি বিষয়। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাথায় এ ধরনের কিছু নিয়ে ভাবনা আছে, এর প্রমাণ আমরা পাইনি। এ ছাড়া শাসন-প্রক্রিয়া যেমন এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে, উন্নয়নের ধারাও তেমনি ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। বিকেন্দ্রীকরণের কথা মুখে বলা হলেও এ ক্ষেত্রে সরকার ও রাজনৈতিক মহল আসলে পেছনে হাঁটছেন। মফস্বলের পুনর্জাগরণের মতো একটি বৃহৎ ও কার্যকর স্বপ্ন খুবই জরুরি। কিন্তু কার্যত তা অনুপস্থিত।
প্রথম আলো শিক্ষা খাত নিয়ে সরকারের সন্তুষ্টি রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রগতি রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান শিক্ষা নিয়ে যা হচ্ছে তাতে আসলে সরকারের স্থূল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পাচ্ছে। শিক্ষার মান নিয়ে কোনো চিন্তুাভাবনা আছে বলে মনে হয় না। যা করা হচ্ছে তা জনতুষ্টির কথা মাথায় রেখে। আমরা সামনে এগোতে চাই, এগিয়ে যাওয়ার কথা বলি, শিক্ষার এই মান বজায় রেখে তা সম্ভব নয়। সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক কিছু ফ্রি করেছে, সুযোগ দিচ্ছে। এই বিনা মূল্যের শিক্ষা আসলে যে দর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তা হচ্ছে বিনা মূল্যে নিম্নমানের শিক্ষা। শিক্ষা বিষয়ে বলা যায়, দেশে একধরনের আত্মঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জাতির যে আকাঙ্ক্ষা তার সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও মানের সংগতি নেই। সমাজে একদিকে যখন মানসম্মত শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে, তখন শিক্ষার মান দিনে দিনে নিম্নমুখী হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে সুশাসনের অভাব পরিস্থিতিকে শোচনীয় করে তুলছে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এসব হচ্ছে।
প্রথম আলো আপনি শুরুতে ত্রিমাত্রিক সংকটের কথা বললেন এবং তা মোকাবিলা করতে না পারলে সামনে বড় সংকটে পড়তে হবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু চারদিকে তো আমরা বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথাই শুনছি।
হোসেন জিল্লুর রহমান আমাদের বর্তমান সমস্যা আসলেই ত্রিমাত্রিক। এখন আমরা শুধু নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই ব্যতিব্যস্ত আছি। সুশাসন ও অর্থনৈতিক গতিধারার সংকটকে উপেক্ষা করে চলেছি। আমার বলার বিষয় হচ্ছে, এই বহুমাত্রিক সংকটকে আমাদের একই সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে, একই সঙ্গে আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে। শুধু নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে খণ্ডিত আলোচনার সুযোগ নেই। যদি তা-ই হয়, তবে এসব সমস্যা দিনে দিনে আরও দৃঢ় হতে থাকবে, যা আমাদের সম্ভাবনা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে নষ্ট করবে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ভালো করেছি, কিন্তু আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো এগিয়েছে এমন অনেক দেশই পরবর্তী সময়ে ব্যর্থ হয়েছে। এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে বাস আমাদের ধরতে হবে, তা হয়তো রয়েছে, কিন্তু আমরা যেভাবে চলছি, তাতে এই বাস মিস করার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রথম আলো কিন্তু যে অগ্রগতি আমাদের হয়েছে, তা তো একটি ভিত্তি তৈরি করেছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান অবশ্যই করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ভালো করেছি। কিন্তু পুরোনো মাপকাঠি ধরে আপনি যদি অগ্রগতি বিবেচনা করে সন্তুষ্ট থাকেন, তাতে সামনে এগোনো যাবে না। একসময়ে আমরা খাদ্যের অভাব নিয়ে চিন্তা করতাম, সেই মাপকাঠিতে আমরা অনেক এগিয়েছি, সেই সমস্যা এখন নেই। এখন আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমাদের যে ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষা, সে তুলনায় আমরা কতটুকু এগোচ্ছি। অতীতে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, তা সামনে যাওয়ার ভিত্তি তৈরি করেছে। এখন আমাদের অগ্রগতির মাপকাঠি হওয়া উচিত আমাদের ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে। কোনোভাবেই পুরোনো অগ্রগতির মাপকাঠি দিয়ে বিষয়টিকে বিবেচনা করা যাবে না।
প্রথম আলো আপনি যে বহুমাত্রিক সমস্যার কথা বললেন এবং এ নিয়ে যে আলোচনার সূত্রপাতের কথা বললেন, এই কাজটি করবে কারা? রাজনীতিবিদেরা তো এখন আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে এবং তাঁদের ক্ষমতায় আসা না-আসা নিয়েই ব্যস্ত।
হোসেন জিল্লুর রহমান নির্বাচনী অনিশ্চয়তা নিয়ে রাজনীতিবিদেরা তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনা করছেন, তাঁরা তা করুক এবং এই বিষয়ে একটি সমাধান হোক, এই আশাই আমি করি। তবে এটাও ঠিক যে আশাবাদী হওয়ার ভিত্তি ক্রমাগত নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। আমি বাকি যে দুটি বিষয়ের কথা বলেছি তা আলোচনায় নিয়ে আসার দায়িত্ব আসলে নাগরিক সমাজের। আমরা দেখছি যে এককেন্দ্রিক শাসন ও ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি সব সীমা অতিক্রম করে চলে গেছে। দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা জরুরি। অন্যদিকে দেশে পরিকল্পিতভাবে অনৈক্য ও বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। সংবেদনশীল নানা বিষয়কে রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্বার্থের কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে। যখন বাংলাদেশের সম্ভাবনা একদিকে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিবেচনায় অনেক বেশি বাড়ছে, তখনই আমরা নিজেদের সৃষ্ট সমস্যার গ্যাঁড়াকলে পড়েছি। এ বিষয়টিও কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
আগামী কয়েক মাস হয়তো দেশ নানা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তর পরিসরে সমঝোতা সৃষ্টির জন্য জোরদার জাতীয় আলোচনা জরুরি হয়ে পড়েছে। নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা এখানে অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু নীতি বলিষ্ঠতার বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে যেমন অনুপস্থিত, তেমনি নাগরিক সমাজেও কার্যকর সক্রিয়তার অভাব লক্ষণীয়। যে বহুমাত্রিক সমস্যাগুলো আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলোকে আমাদের নাগরিক সমাজ বৃহত্তর আলোচনার মধ্যে নিয়ে আসতে পারছে না। নাগরিক সমাজের উচিত আর বিলম্ব না করে এই বিষয়গুলো নিয়ে জোরালো জাতীয় আলোচনার সূত্রপাতে সক্রিয় হওয়া।
প্রথম আলো এ ধরনের জাতীয় আলোচনা থেকে কী ফলাফল আশা করেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান সংকট যেমন বহুমাত্রিক, চ্যালেঞ্জও বহুমাত্রিক। নাগরিক সমাজের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আলোচনার পাশাপাশি সুফল আনার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। সমস্যা ও দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করা নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু আমি মনে করি, আলোচনা হওয়া উচিত সমাধানমূলক ও বাস্তবসম্মত। কেতাবি সমাধান নয়।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
হোসেন জিল্লুর রহমান ধন্যবাদ।