যখন দেশবাসী আশা করেছিল করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেবে, তখন তারা একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। গত ১৫ মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় লোকবল ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে অনেক হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
এ সংকটের সহজ সমাধান হিসেবে মন্ত্রণালয় ৪ ও ৫ জুলাই ১ হাজার ১৫১ জন চিকিৎসককে বদলি করে বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে যোগ দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসকদের বদলি করা যাবে না, এমন কথা নেই। কিন্তু সেটি হতে হবে আলোচনার মাধ্যমে, কোথায় কী রকম লোকবল আছে, কী রকম লোকবল প্রয়োজন, সেসব ভালোভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে।
কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কারও সঙ্গে আলোচনা না করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১ হাজার ১৫১ জন চিকিৎসককে কোভিড হাসপাতালে বদলি করেছে; যঁারা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে কর্মরত ছিলেন। এর ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিএমএর মহাসচিব অধ্যাপক এহতেশামুল চৌধুরী বলেছেন, যাঁরা এ বদলি করেছেন, তাঁরা চিকিৎসকদের কাজ সম্পর্কে কিছু জানেন না। সরকার-সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেছেন, এ বদলি আদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে।
চিকিৎসকদের আপত্তির মুখে মঙ্গলবার রাতে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানায়, চিকিৎসকদের বর্তমান কর্মস্থলের বিষয়ে তথ্যগত ভুল থাকার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদেশ ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণে আদেশ বাস্তবায়নে জটিলতা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিষয়ে বাস্তবায়ন কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তাদের অবিমৃশ্যকারিতার এখানেই শেষ নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসকদের বদলির যে তালিকা দিয়েছে, তাতে দুজন মৃত চিকিৎসকের নামও আছে। এ ছাড়া বদলির তালিকায় তারা এমন চিকিৎসকের নামও দিয়েছে, যাঁরা অনেক আগে অবসর নিয়েছেন। একজন চিকিৎসক বলেছেন, ‘এ তালিকা দেখে লোকে হাসাহাসি করে।’
প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেবল সমালোচিত নয়, হাসাহাসিরও পাত্র হয়েছে। বদলি নিয়েও হযবরল অবস্থা চলছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আদেশে বলা হয়, যেসব চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে, তাঁরা আগের কর্মস্থল (মূল কর্মস্থল) থেকে বেতন-ভাতা তুলবেন। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কাঠামো ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের বদলির আগে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করা জরুরি ছিল। কোন কোন চিকিৎসককে তারা ছাড়তে পারবে, কোন চিকিৎসক কার অধীনে কাজ করবেন, সে বিষয়ে আলোচনা করে নিলে এ সমস্যা এড়ানো যেত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা-অনিয়ম-দুর্নীতি সর্বত্র আলোচিত। অনেক দিন ধরেই করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত দেখে মনে হয় এত দিন তারা কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। প্রবাদ আছে, যার এক কান কাটা সে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাঁটে, যাতে মানুষ দেখতে না পায়। আর যার দুই কান কাটা, সে হাঁটে রাস্তার মধ্য দিয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাস্তার মধ্যখান দিয়ে হাঁটছে। মন্ত্রণালয়টি কি এভাবেই চলবে?