টিকা না দিয়ে প্রবৃদ্ধির কথা বলে লাভ নেই
আমরা কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে আছি। আমাদের জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির এতটা ক্ষতি এত বছরে কেউ করতে পারেনি, যতটা করেছে কোভিড। ফলে বাজেটও হওয়া উচিত ছিল কোভিড মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেখলাম না।
চলতি অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, কিন্তু পুরোটা খরচ হলো না। আগামী অর্থবছরের জন্যও রাখা হচ্ছে একই পরিমাণ তহবিল। এভাবে থোক না রেখে এত দিনে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে যাওয়া উচিত ছিল। শহর-গ্রাম মিলিয়ে ১২ কোটি মানুষকে ২৪ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে। কিন্তু এখন যে গতিতে দেওয়া হচ্ছে, তাতে কয়েক বছর লেগে যাবে। তার মানে, আগামী কয়েক বছর আমাদের কোভিড নিয়েই থাকতে হবে? টিকা না দিয়ে কিসের প্রবৃদ্ধির চিন্তা? জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ না ৮ শতাংশ, টিকা না দিয়ে এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই।
মাসে নয়, দিনে ২০ থেকে ২৫ লাখ করে টিকা দিতে হবে। নইলে ভারতের মতো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে। আশা করেছিলাম, অর্থমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন। তিনি অনেক কথাই বলেছেন, কিন্তু এ বিষয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় হতাশ হয়েছি।
আমি বলব, অর্থনীতির তুলনায় এবারের বাজেট ছোট। এমনকি জিডিপির বিবেচনায় ১৯৭২ সালের চেয়েও ছোট। এবারের বাজেট যেমন জিডিপির ১৭ শতাংশের বেশি, যদিও তা অর্জিত হবে ১৫ শতাংশের মতো। অর্থনৈতিক ইতিহাস বলে উন্নয়নের সঙ্গে জাতীয় আয় না বাড়লে বাজেটের আকার বাড়তে পারে না। আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত এখনো ৮ শতাংশের ঘরে।
অবশ্য এবারের বরাদ্দ প্রস্তাবগুলো আগেরবারের চেয়েও বাস্তবসম্মত হয়েছে। যেমন সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। তবে কোভিডে কিছু মানুষ যে নতুন করে গরিব হয়েছে, তাদের জন্য কিছুই রাখা হলো না। তারা কিন্তু ভাতা নেওয়ার লোকও না। আরেকটি কথা, যথাযথ নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের সুদ প্রতিবছর আধা শতাংশ করেও কমানো যায়। কায়েমি স্বার্থের কারণে নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে চুপ।
তবে কর ছাড় এবার অনেক বেশি হয়ে গেছে। আরেকটি কথা বলতে চাই, পকেটের পয়সায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে এ দেশের কত মানুষ যে গরিব হয়ে পড়েন, সেই অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য ৫০ বছরেও বাংলাদেশ কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পারল না, এ জন্য বড় আফসোস হয়।