বড় শিল্প খাত হিসেবে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে হয়তো আলোচনা বেশি, কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থা সব ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম। কম বেতন-ভাতা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের পরিবেশ ও অধিকারহীন অবস্থা—এটাই যেন শ্রমিকদের নিয়তি। আন্তর্জাতিক চাপ, ক্রেতাদের শর্ত—এসব কারণে দেশের পোশাকশ্রমিকদের বেতন-ভাতা বা কাজের পরিবেশ উন্নত করার বিষয়টি এখন গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু এর চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছেন, এমন খাতের শ্রমিকদের নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথা নেই। জাহাজভাঙা শিল্প দেশের এমনই একটি খাত।
দেশের গণমাধ্যমে এই খাতের শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশা, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা এবং নানা সময়ে দুর্ঘটনায় জাহাজভাঙা শ্রমিকদের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর কম প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু এই খাতের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু বেসরকারি সংস্থার উদ্বেগ ও চাপ ছাড়া যেহেতু ক্রেতাদের কোনো শর্ত বা বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয় না, তাই তাদের মজুরি বা কর্মপরিবেশ মানবিক করার জোরদার উদ্যোগও নেই। কোনো চাপ, আইন বা বাধ্যবাধকতা ছাড়া কোনো মালিক শ্রমিকের স্বার্থরক্ষায় উদ্যোগী হয়েছেন, এমন নজির পাওয়া কঠিন। জাহাজভাঙা শ্রমিকদের বেলায় সরকারই এ ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা।
যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকীর গত মঙ্গলবারের সংখ্যায় বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শ্রমিকদের দুর্দশার জীবন নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কার্যত ন্যূনতম নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই শ্রমিকেরা সেখানে কাজ করেন। দুর্ঘটনা এই শিল্পে তাই নিয়মিত ঘটনা। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিবেশদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের তরফে নীতিমালা করা হলেও শিল্পমালিকেরা তা মেনে চলেন না। শুধু আইন বা নীতিমালা তৈরি নয়, সেটা মানতে বাধ্য করাও সরকারের দায়িত্ব।
দেশের ৭০টি জাহাজভাঙা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। এই শিল্পের মালিকদের এটা বোঝা উচিত, শিল্পের স্বার্থেই শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ নিশ্চিত করা জরুরি। এই শিল্পের মালিক ও উদ্যোক্তারা তা কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করতে পারেন না।