বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা—কোথায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী হাত নেই? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অবরোধ এবং সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে ঝুলছে তালা৷ রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষেও তারা ছিল সামনের সারিতে৷ সাম্প্রতিক সময়ে দেশময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা থেকে বোঝার উপায় নেই, তারা কি বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন, নাকি একটি অপরাধী চক্র?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীকে অপহরণ ব্যবসায় জড়িত থাকতে দেখা গেছে৷ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন এক ছাত্র৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অন্তঃকোন্দলে কিছুদিন পর পরই কেউ না কেউ নিহত হচ্ছেন৷ গত মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় দেখা যাচ্ছে, রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগেরই দুই পক্ষের টেন্ডার-দখলের মারামারিতে লাঠিয়ালের ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে ছাত্রলীগ৷ ছাত্রলীগে এখন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় দশা৷
দীর্ঘ ঐতিহ্যের দাবিদার ছাত্রসংগঠনের এমন পরিণতি নিয়ে কি কিছু ভাবছে আওয়ামী লীগ? সবখানেই আওয়ামী লীগ-যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা ব্যবসা-দখলদারি, টেন্ডারবাজি, এলাকায় দাপট ইত্যাদি কারণে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, অস্ত্রবণিক থেকে শুরু করে অন্ধকার জগতের হেন শক্তি নেই, যারা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে না! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কাজ উন্নয়ন ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বখরা আদায়৷ এই বখরা আদায়ের জন্যই তারা লিপ্ত হয় গ্রুপবাজির সংঘাতে৷ এই অবস্থায় ছাত্রলীগ আর ছাত্রদের অধিকার রক্ষা কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নের সহায়ক হয়ে নেই৷ সন্ত্রাস-দুর্নীতি-অপরাধের লাঠিয়াল হিসেবে তাদের দ্বারা কল্যাণকর কিছু করা আর কিছু সম্ভব কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷
কেবল ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদল, জাতীয় ছাত্র সমাজ ও ছাত্রশিবিরের অবস্থাও অতীতে এ রকমই ছিল; ভবিষ্যতেও ভিন্ন কিছু হবে, তেমন আশা করার কারণ নেই৷ ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ না হলে ছাত্ররাজনীতি তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিকেও চরম মূল্য দিতে হবে৷
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুঝতে হবে, ক্রমাগত ছাড় ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছাত্রলীগকে বেপরোয়া করে তুলছে৷ ভবিষ্যতে তাদের দ্বারা বড় বিপর্যয় ঘটার আগেই সরকারের উচিত রাশ টেনে ধরা৷