চট্টগ্রামে গত রোববার যে বৃষ্টি হয়েছে, তা আবহাওয়াবিদদের ভাষায় মাঝারি থেকে ভারী। এই বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে নগরের তিন ভাগের দুই ভাগ। বর্ষা বলতে যা বোঝায়, তা এখনো শুরু হয়নি৷ মৌসুমের প্রথম এ ধরনের বর্ষণেই যদি এই নগরের অবস্থা এ রকম দঁাড়ায়, তবে সামনের দিনগুলোয় সম্ভবত আরও বিপদই অপেক্ষা করছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হওয়ার কারণে নগরের বিভিন্ন রাস্তার কোথাও হঁাটুসমান আবার কোথাও বুকসমান পানি জমেছে। এই অবস্থায় স্বাভাবিক কারণেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সপ্তাহের শুরুর দিনটিতে নগরবাসী, বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। এই মৌসুমে বৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক; তা হালকা, মাঝারি বা ভারী—সব ধরনের হতে পারে। রোববারের বৃষ্টি এমন অস্বাভাবিক ছিল না যে নগরের এই অবস্থা হওয়ার কথা।
এটা স্পষ্ট যে নগরের পানিনিষ্কাশন-ব্যবস্থা বলে কিছু কার্যকর থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। আর বর্ষা-বাদলের সময় শুরুর আগে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পানি নামার পথগুলো, মানে খাল, নালা ও নর্দমাগুলো যে পরিষ্কার করা প্রয়োজন, সেটি ঠিকভাবে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। অথচ চট্টগ্রাম নগরকে শুধু জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতেই গত চার বছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা। নর্দমার মাটি উত্তোলন ও অপসারণ, নালা-নর্দমা নির্মাণ, খাল সংস্কার—এসব কাজে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে, এখনো দুটি প্রকল্প চলছে। এত অর্থ ব্যয়ের কী সুফল পেল চট্টগ্রামবাসী?
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র দেড় শ কোটি টাকা খরচ হয়েছে িক না, সে ব্যাপারেই নিশ্চিত নন। তিনি রোববারের পরিস্থিতিকে জলাবদ্ধতা বলতে রাজি হননি। তঁার কাছে এটা ‘সাময়িক জলজট মাত্র’। তিনি দাবি করেছেন, চাক্তাই খালসহ বিভিন্ন খাল খনন করায় জলাবদ্ধতা হয়নি। তবে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সরেজমিন তথ্য হচ্ছে, চাক্তাই খালের অধিকাংশ জায়গায় খননকাজ হয়নি। নামমাত্র খনন করায় মুরাদপুরের মির্জাপুর খালও কিছুদিনের মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। অর্থ খরচ হয়, কিন্তু কাজ হয় না—এমন হলে যা হয়, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। এর দায় সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে। পুরো বর্ষা শুরুর আগেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে৷