মধ্যপ্রাচ্য এখন একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের মুখোমুখি। এ প্রেক্ষাপটে দেশটির উচিত হবে, খুব দ্রুত তাদের কৌশল পরিবর্তন করা।
গত রোববার জর্ডানে ড্রোন হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত ও ৩০-এর বেশি আহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর এটাই মার্কিনদের নিশানা করে পরিচালিত কোনো প্রাণঘাতী হামলা।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা একই বিষয়ে নানা রকম ভাষ্য দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে এ সংঘাত যেন আর না ছড়ায়, সে চেষ্টা চালিয়েছেন কঠোরভাবে।
তা সত্ত্বেও গত চার মাসে আমরা কী কী দেখেছি, তার একটা ফিরিস্তি দেওয়া যাক—লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ ও মার্কিন রণতরিতে হুতিদের নিয়মিত ড্রোন ও মিসাইল হামলা এবং হুতিদের নিশানা করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাল্টা হামলা।
লেবাননে হিজবুল্লাহকে নিশানা করে ইসরায়েলিদের প্রাত্যহিক হামলা এবং হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলা।
ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে দেড় শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল হামলা। জবাবে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের সমর্থনপুষ্ট মিলিশিয়ার ওপর মার্কিন হামলা।
ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, সিরিয়ার এমন সব লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের উপর্যুপরি হামলা।
ইরানে আইএসআইএসের ভয়ংকর হামলা। পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা।
গাজায় পুরোদমে যুদ্ধ চলছে এবং এ যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই। এর মধ্যেই আবার ইসরায়েলের একটি অংশ জোর গলায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে দেশটির যুদ্ধে জড়ানো উচিত বলে দাবি তুলছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, ইরান-সমর্থিত দলগুলোর ছোড়া রকেট থেকে রক্ষা পেতে কয়েক লাখ ইসরায়েলি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
বাইডেনের জন্য হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার বিষয়টি জটিল, যেহেতু তিনি এ অঞ্চলে সংঘাত আরও বিস্তৃতি পাক, তা চাইছেন না। আবার তিনি এমনভাবেও পাল্টা আক্রমণ চালাতে চান না, যা ইরানকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে ফেলবে।
ক্রমবর্ধমান এই আঞ্চলিক সংঘাতে মোটাদাগে ১০টি দেশ জড়িয়ে পড়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। দেশগুলো হলো জর্ডান, ইরান, ইসরায়েল, সিরিয়া, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী এবং হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি ও আইএসআইএসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
এদিকে ইরানের মদদপুষ্ট ইরাক সরকার তাদের মাটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে চাপ দিচ্ছে।
আমি মনে করি, ইসরায়েল সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের যে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে, এবার সেসব প্রভাব খাটাতে পারে ইসরায়েল। কারণ, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাব ইসরায়েলের ওপর আছে, তা অব্যবহৃত থেকে যায়। অন্তত সাধারণ মানুষ তা-ই বলে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল সরকারকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে আসতে রাজি করাতে পারে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি ও মার্কিন জিম্মিদের তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
এরপর বাইডেন প্রশাসনের উচিত হবে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। চিরস্থায়ী শান্তির এটিই একমাত্র পথ। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্রদের সমর্থন আবশ্যক হবে। এখন পর্যন্ত কাতার ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা যা করেছে, তাকে কথার কথাই বলা যায়। বছরের পর বছর তারা অর্থহীন কথা বলে যাচ্ছে।
এর জন্য মার্কিন কূটনীতির জোর প্রয়োগ দরকার হবে। কূটনীতি এর আগেও সমস্যার সমাধান করেছে। প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁর রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ইসরায়েল ও মিসরকে মীমাংসার টেবিলে বসাতে পেরেছিলেন। ক্যাম্প ডেভিডে দেশ দুটি বৈঠকে বসার আগে তিনটি বড় যুদ্ধে জড়ায়। কিন্তু মীমাংসার পর গত অর্ধশতাব্দীতে তাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান।
একই সঙ্গে যুদ্ধে না জড়িয়েই ইরানের কৃতকর্মের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। কারণ, এখন যুদ্ধে জড়ালে ইরানকে হয়তো নিষ্ক্রিয় করা যাবে, তবে এ অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র সাইবার হামলা চালিয়ে ইরানের সঙ্গে দেশটির সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোর যে যোগাযোগ, তা বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।
বাইডেনের জন্য হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার বিষয়টি জটিল, যেহেতু তিনি এ অঞ্চলে সংঘাত আরও বিস্তৃতি পাক, তা চাইছেন না। আবার তিনি এমনভাবেও পাল্টা আক্রমণ চালাতে চান না, যা ইরানকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে ফেলবে।
ভারসাম্য রক্ষা করাটাই এখন বাইডেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
পিটার বার্গেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।
সিএনএনে প্রকাশিত। ইংরেজি থেকে অনূদিত