দৈনিক পাকিস্তান যেভাবে দৈনিক বাংলা হলো

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হওয়ার পর দৈনিক পাকিস্তান, সেখানে পাকিস্তান নাম কেটে বাংলাদেশ লেখা হয়
ছবি: সংগৃহীত

‘বিজয়ের পর কি ছিল বাংলাদেশের সংবাদপত্রে’ শিরোনামে গত শুক্রবার প্রথম আলো পত্রিকার প্রকাশিত নিবন্ধটি তথ্য বহুল ও স্মৃতি জাগরুক। তবে মামুন সিদ্দিকীর লেখাটিতে একটি তথ্য বিভ্রান্তি রয়েছে যা তুলে ধরার জন্য এ প্রতিক্রিয়া।

লেখাটির এক জায়গায় মামুন সিদ্দিকী উল্লেখ করেছেন যে, ‘সরকার দ্বারা পরিচালিত দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকাটি ১৮ ডিসেম্বর থেকে নাম পরিবর্তন করে দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হতে থাকে’। এটা সঠিক নয়, কেননা তার লেখার সঙ্গে সংযোজিত কতিপয় পত্রিকার প্রতিচ্ছবি থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দৈনিক পাকিস্তান কেটে দৈনিক বাংলাদেশ নাম রাখা হয়েছে। দৈনিক বাংলাদেশ নামে সাবেক দৈনিক পাকিস্তানটি কয়েকদিন যাবত প্রকাশিত হচ্ছিল। এটা আমাদের পছন্দ হচ্ছিল না, কারণ মুক্তিযুদ্ধকালে পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশ নামক একটি সাপ্তাহিকী প্রকাশিত হতো। পূর্বাঞ্চল মুজিব বাহিনীর মুখপত্র ও পূর্বাঞ্চলের একমাত্র সাময়িকী হিসেবে এর বড় চাহিদা ছিল। সশস্ত্র যুদ্ধের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বা উপ–সম্পাদকীয় আমি লিখতাম। প্রিন্টার লাইনেও আমার ছদ্মনাম আবুল হাসান চৌধুরী ছাপা হতো। ঢাকায় ফিরেও আমরা পত্রিকাটি চালিয়ে যেতে লাগলাম।

তবে পাকিস্তান সরকার পরিচালিত পত্রিকাটির রাতারাতি নাম বদল থামাতে আমি কয়েকজন সশস্ত্র যোদ্ধা নিয়ে একদিন দৈনিক পাকিস্তানে হাজির হলাম। পত্রিকাটির এমন ভূমিকার জন্যে তার সম্পাদক শামসুর রাহমানের প্রতি আমাদের বিরূপ মনোভাব কাজ করছিল। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তার সামনে বসা ছিলেন। আমি তাকে চিনতাম না। দু’জনকে ধমকের স্বরে বললাম যে, এই নামে কোনো পত্রিকা আপনারা বের করতে পারবেন না। বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাঁরা আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো বিতর্ক হয়নি কিন্তু পরদিন থেকেই দৈনিক বাংলাদেশ তথা দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা’য় রূপান্তরিত হলো।

বিষয়টি আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। বহুদিন পর নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এই ঘটনাটি বর্ণনা করলে লজ্জায় আমি নীল হয়ে গিয়েছিলাম। কেননা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের জন্য ঘটনাটি অনভিপ্রেত ছিল, যদিও রক্ত গরম যোদ্ধার কাছে তা অনাকাঙ্খিত ছিল না। আমার আরও খারাপ লেগেছিল যখন জানলাম যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় শামসুর রাহমান বেনামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কবিতা লিখে সেসব কোলকাতায় নিভৃতে পাঠাতেন। আর সেগুলো জয় বাংলা ছাড়াও কোলকাতা ভিত্তিক অন্যান্য পত্রিকায় ছাপা হতো। এগুলোও ছিল যোদ্ধাদের জন্য প্রেরণার উৎস।

ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষক ও বর্তমানে উপচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ