প্রকাশিত লেখা নিয়ে দীপেশ চক্রবর্তীর বক্তব্য

আমার ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ শীর্ষক লেখাটি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হওয়ার পর দেখছি কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, যা আমার কাছে অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং গভীরভাবে দুঃখজনক। এবং এই ভুল–বোঝাবুঝির যেটুকু আমারই ভাষার কারণে সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি আন্তরিক ও যারপরনাই দুঃখ প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশ আজকের যে অগ্নিগর্ভ অস্থির সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মানুষের ক্ষোভের বহুবিধ প্রকাশ হয়েছে, শত শত তরুণের প্রাণ নির্বাপণ করা হয়েছে এবং বহু অন্যায় সংঘটিত হয়েছে, তাতে বিচলিত হয়ে এবং সব বাংলাদেশির জন্য সেই অবস্থার একটি সুষ্ঠু ও স্থায়ী নিরসন প্রার্থনা করে, বাংলাদেশ আমার কাছে কেন একটি তাৎপর্যময় দেশ, কেন এই বিচলন আজকের বিশ্বে সংঘটিত আরও অন্য অনেক অন্যায়ের চেয়ে আমার বুকে একটু অন্যভাবে বাজে, এই কথা আলোচনা করতে গিয়ে এবং বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করে আমার কাছে বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের অর্থ কী, কী প্রতিশ্রুতি এই দেশ বাঙালির ইতিহাসে আজও বহন করে বলে আমি ভাবি, এইটাই ছিল আমার লেখাটির মূল কথা।

আমার ব্যক্তিগত আবেগের ‘ফ্রেমে’ আজকের সময়ের বাংলাদেশের উত্তাল রাজনীতির গতিপথ বুঝতে চাইনি। বাংলাদেশের রাজনীতি তার নিজস্ব স্রোতে চলবে, সেই স্রোতের কোনো বিশ্লেষণ এই লেখায় করিনি, তার কারণ এই রাজনীতির ও বাংলাদেশি সাধারণ মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতার আমার কোনো প্রাত্যহিক জ্ঞান নেই।

আমি প্রবাসী মানুষ ও জন্মসূত্রে বিদেশি। বরং বাংলাদেশি মানুষ নিজেরাই তাঁদের ভবিষ্যৎ যেভাবে নির্ধারণ করবেন তাকে যে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করব, এই কথা বলেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ আজ কত গভীরভাবে বিভাজিত ও আমার কথার অভীষ্ট অর্থ এবং তার পঠিত অর্থ যে কত আলাদা হতে পারে, আমার কথাগুলো যে কারও কারও মনে বিভাজনের ফাটলের মধ্যেই পড়তে পারে, এই সম্ভাবনা আমার কাছে পরিষ্কার ছিল না।

আরও একটি কথা বলি: আমি অবশ্যই অবগত যে এমন বাংলাদেশি মানুষ আছেন বাংলা যাঁদের মাতৃভাষা নয়, বাঙালি সত্তার কথা তুলে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁদের অস্তিত্ব বা অবদান আমি অস্বীকার বা ছোট করতে চাইনি। এখানে আমার ভাষার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি থাকলে তার জন্যও আমি দুঃখিত। বাংলাদেশে শুভবুদ্ধির ও ন্যায়ের জয় হোক, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুন, এই কামনা আরও একবার করি।

শিকাগো, যুক্তরাষ্ট্র

১ আগস্ট, ২০২৪