ঈদযাত্রায় ট্রেন ভ্রমণে যেসব সতর্কতা না জানলেই নয়

দেশের সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের অন্যতম হচ্ছে ট্রেন ভ্রমণ। ট্রেন ভ্রমণ কে না ভালোবাসে? আর ভ্রমণের গন্তব্য খুব বেশি দূরত্বের হলে কম খরচে অবশ্যই ট্রেন ভ্রমণ সবচেয়ে উপযুক্ত বলা যায়। দুঃখের বিষয়, যে ট্রেন সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী, সেই ট্রেনই কখনো আবার অনিরাপদ, অস্বস্তিদায়ক ও অতিব্যয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই ট্রেন ভ্রমণে সতর্কতা পালন করা জরুরি। ট্রেন ভ্রমণকারীদের উদ্দেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হলো।

টিকিট সংগ্রহ না করে ট্রেন ভ্রমণে আইনত অপরাধ ও জেল-জরিমানা রয়েছে। তাই ভ্রমণের আগেই টিকিট নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই স্টেশনে আসুন। অনেক সময় ট্রেন অথবা বগি চিনতে অসুবিধার কারণে অন্য ট্রেন অথবা নির্ধারিত ট্রেনের অন্য বগির, অন্য একজনের আসনে বসতে হয়।

ফলাফলস্বরূপ, অনেক ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়। তাই এ ক্ষেত্রে আগেই স্টেশনে দায়িত্বরত মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন। ট্রেন ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন, বমির আশঙ্কা থাকলে বমির ওষুধ খেয়ে নিন। যেকোনো ভ্রমণের আগে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, আর ট্রেন ভ্রমণ হলে অবশ্যই নয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টাকাপয়সা এক জায়গায় না রেখে কয়েকটি স্থানে ভাগ করে রাখুন। যেমন পকেটে কিছু টাকা, অন্য ব্যাগে কিছু টাকা, মানিব্যাগে কিছু টাকা—এভাবে রাখলে একটি অংশ হারিয়ে গেলে অথবা পকেটমার হলেও একেবারে সব টাকা হারিয়ে যাবে না। অনেক স্টেশনে খাবারের মান ভালো নয়, খাবার তৈরি করার পরিবেশও ভালো নয়। তা ছাড়া খাবারের দামও মানের তুলনায় অনেক বেশি। তাই বাড়ি থেকেই খাবার নিয়ে যাওয়া শ্রেয়। প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক জিনিস চার্জ করে নিন এবং চার্জার, পাওয়ারব্যাংক সঙ্গে রাখুন। অনেক সময় ট্রেনে তাড়াতাড়ি ওঠার প্রয়োজন হয়, তখন ভিড় ঠেলেই উঠতে হয়। তাই ওই সময়ে পকেটমারের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও প্রয়োজনীয় কিছু সম্পর্কে খুব সতর্ক হোন।

বাংলাদেশের ট্রেন ভ্রমণে অনাকাঙ্ক্ষিত মারাত্মক একটা সমস্যা হলো ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ। চলন্ত ট্রেনে ‘পাথর নিক্ষেপ’ যাত্রীদের কাছে এক ভয়ংকর আতঙ্ক। দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরে হতাহত হচ্ছেন চালক, প্রহরী ও যাত্রীরা। পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। রেলওয়ে কন্ট্রোল রুমের তথ্যসূত্র অনুযায়ী, চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চল রেলে পাথর ছোড়ার ঘটনা বেশি পাঁচ জেলায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ‘স্টোন থ্রোয়িং’ বা পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে ৩০টিরও বেশি স্পটে। আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-ঢাকা, সিলেট-ঢাকা রেলপথে চলন্ত ট্রেনে শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তাই ট্রেন ভ্রমণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি সময়ের ছুটি দুটি ঈদ ও দুর্গাপূজায় হয়ে থাকে। ওই সময় অনেকেই ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে অথবা শখের বশে ট্রেনের ছাদে অবস্থান করেন, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদের ওপর একটু এদিক–সেদিক হলেই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের জন্য কান্না। তাই কোনো পরিস্থিতিতেই চলন্ত ট্রেনের ছাদে থাকা যাবে না।

আপনার জিনিসপত্রের নির্ধারিত জায়গায় আপনার পরিচয় লিখে রাখুন, যাতে আপনার কোনো সমস্যা হলে বা হারিয়ে গেলে পুলিশ অথবা উদ্ধারকারী ব্যক্তি এই ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন। ট্রেনের টয়লেট যেহেতু দরজার পাশে, তাই চলন্ত ট্রেনে খুবই সাবধানতার সঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করুন।

শিশুরা ছোটাছুটি করতে ভালোবাসে। ছোটাছুটি করতে গিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার যেন না হয়। তাই সঙ্গে শিশু থাকলে তার দিকে বিশেষ নজর রাখুন। ট্রেনের বগির দরজা অনেক সময় খোলাই থাকে। ওরা দরজায় গেলে ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিচিত নয়—এমন মানুষের দেওয়া খাবার না খাওয়াই ভালো, কারণ খাবার দেওয়ায় অনেকের অসৎ উদ্দেশ্যে থাকে। ট্রেনে এমন অনেক ব্যক্তি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলে টাকা নেওয়ার ধান্দায় থাকে, তাদের প্রশ্রয় না দিয়ে এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, ট্রেনের ভেতরে সুযোগ-সুবিধার জন্য টাকা দেওয়া ও নেওয়া—দুটিই দণ্ডনীয় অপরাধ। ভ্রমণের নতুন ঠিকানায় আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হতে পারে, তাই পরিচয়পত্র, করোনা সনদসহ আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন। ঘুমানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে প্রয়োজনীয় জিনিস নিরাপদে রাখুন।

পরিশেষে বলব, আসুন আমরা সতর্ক হই, অন্যদের সতর্ক করি। তাহলেই আমাদের ট্রেন ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হবে।

সুমন চৌধুরী
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।