বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর আগে। ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের গদি কাঁপিয়ে দিয়েছিল। গণ–অভ্যুত্থানের কারণে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকেরা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ উভয়েই আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগের সরকার গঠন করার কথা থাকলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানিরা টালবাহানা শুরু করে। ২৫ মার্চ রাতে তারা ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়ে অনেক মানুষ হত্যা করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সে রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রাণ ও ২ লাখ মা–বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়, তার চারটি মূলনীতি হলো জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির এসব মূলনীতি অনুসারে চলার কথা ছিল।
স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গড়ার কাজে বিশাল ভূমিকা রাখেন। পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার ঘটনায় সেই দেশ গড়ার কাজ থমকে যায়। এরপর খন্দকার মোশতাক প্রেসিডেন্ট হন এবং পরে সামরিক আইন জারি করেন। ফলে বাংলাদেশ তার মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়। মুক্তিযুদ্ধের যে অন্যতম চেতনা ছিল গণতন্ত্র, তা থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়।
পরবর্তী সময়ে মেজর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ ও তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর জেনারেল এরশাদের শাসনামল ছিল মূলত স্বৈরশাসন। নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের মধ্যে এরশাদের পতন হলে এ দেশের মানুষ নতুন করে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিল। গণতন্ত্রকামী মানুষ তার অধিকার পাওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল।
নব্বইয়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ছিল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তারা এ দেশের মানুষকে গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। পরে ’৯১–এর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।
তারপর পালাক্রমে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, ২০০১ সালে বিএনপি এবং দুই বছর সেনাসমর্থিত সরকার থাকার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং বর্তমান সময়ে তারা ক্ষমতায় রয়েছে।
স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর থেকে যে দল ক্ষমতায় গিয়েছে, তারা তখনই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছে, গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। সেটা বিএনপির ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হোক বা ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া অথবা ২০১৮ সালের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন।
১৯৯১ থেকে ২০২৩ তেত্রিশ বছরে এ দেশের কোনো ক্ষমতাসীনই সেই অর্থে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তাই কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে বলতে হয়, ‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!’
আল-আমীন
পাকুটিয়া, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল
২য় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
শাজাহান সিরাজ কলেজ, কালিহাতী