২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ইসলামের বসন্তকাল মাহে রবিউল আউয়াল

রবি অর্থ বসন্ত। আউয়াল মানে প্রথম। রবিউল আউয়াল হলো আরবের বসন্তের প্রথম মাস বা প্রথম বসন্ত। রবিউল আউয়াল আরবি হিজরি চান্দ্রমাসের তৃতীয় মাস। প্রকৃতি বসন্তকালে ফুলে–ফলে সুশোভিত হয়। নবজাগরণের সূচনা হয়। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুখের সমীরণে অবগাহন করে। আনন্দের সমুদ্রে আবেগের বান আসে। (লিসানুল আরব)

রবিউল আউয়াল মাসে এই পৃথিবীতে শুভাগমন করেন মানবতার মুক্তিদূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এই মাসে তিনি প্রিয় জন্মভূমি মক্কা মুকাররমা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। রবিউল আউয়াল মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্ম ও ওফাত দিবসটি মুসলিম সমাজে ফাতেহায়ে দোয়াজদাহুম নামে পরিচিত।

‘ফাতেহায়ে দোয়াজ দাহুম’ কথাটি ফারসি। ‘দোয়াজদাহুম’ মানে ১২, ফাতেহায়ে দোয়াজদাহুম অর্থ হলো ১২ তারিখের ফাতিহা অনুষ্ঠান।

মিলাদুন্নবী (সা.)–এর মূল শিক্ষা মহানবী (সা.)–এর ভালোবাসার, কঠোর সাধনার, দাঁতভাঙা, রক্তঝরা, পরিপূর্ণ ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম বা জীবনবিধান ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করে ইসলামকে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা

কালক্রমে এই দিনটি মিলাদুন্নবী (সা.) নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এর অর্থ নবী (সা.)–এর জন্ম অনুষ্ঠান। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ রূপ লাভ করে। যার অর্থ মহানবী (সা.)–এর জন্মোৎসব। এ পর্যায়ে আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হতে থাকে ‘সিরাতুন্নবী (সা.)’ অর্থাৎ নবী (সা.) জীবনচরিত বা জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান।

এ দিবসে অনেকে জশনে জুলুশ বা শোভাযাত্রা ও আনন্দ র‍্যালিও করে থাকেন। মিলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ জন্মলগ্ন, জন্মক্ষণ, জন্ম সম্পর্কে আলোচনা। আমাদের পরিভাষায় মিলাদ বলতে বোঝায় প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্ম ও জীবনী আলোচনা এবং তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা।

কোরআন করিমে রয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল (সা.)–এর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ তাঁর জন্য দোয়া করেন; হে বিশ্বাসীগণ তোমরা তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ ও যথাযথরূপে সালাম পেশ করো।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৫৬)।

মিলাদুন্নবী (সা.)–এর মূল শিক্ষা কালেমা তাইয়্যেবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত রাসুল)।

কালেমার নিগূঢ় অর্থ হাজারো প্রকারে বিশ্লেষণ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ অথচ অতি সংক্ষিপ্ত ও অতি নিখুঁত বিশ্লেষণ হলো, ‘বিশ্বপ্রভু আল্লাহর প্রতি আমি ইমান আনলাম, তাঁর সব আদেশ–নিষেধ মেনে নিলাম।’ (ইমানে মুজমাল)

মিলাদুন্নবী (সা.)–এর মূল শিক্ষা মহানবী (সা.)–এর ভালোবাসার, কঠোর সাধনার, দাঁতভাঙা, রক্তঝরা, পরিপূর্ণ ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম বা জীবনবিধান ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করে ইসলামকে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা। এটাই নবী–রাসুল প্রেরণের আসল উদ্দেশ্য।

পবিত্র কোরআনে বিবৃত হয়েছে, ‘তিনি সে মহান প্রভু, যিনি রাসুল প্রেরণ করেছেন, সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্মসহযোগে; যাতে সে ধর্মকে বিজয়ী করতে পারেন সর্বধর্মের শিখরে, যদিও কাফির-মুশরিকেরা তা অপছন্দ করে।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩৩; সুরা-৬১ ছফ, আয়াত: ৯)

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর পথ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) যা যা করতে বলেছেন, তা করতে হবে, আর যা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, ‘রাসুল (সাধারণ) তোমাদের যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা: রও হাশর, আয়াত: ৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর ভালোবাসা ইমানের পূর্বশর্ত। ভালোবাসা প্রকাশ পায় নির্দেশ পালন ও অনুকরণের মধ্যে। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘(হে রাসুল সা.!) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো; (তাহলে) আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)

 প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা–পুত্র ও যাবতীয় সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হব।’ (বুখারি: ১৩ ও ১৪)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • [email protected]