উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত—এসব শ্রেণি ভাগ করা হয় মূলত মানুষের মৌলিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। কোনো রাষ্ট্র কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, তার ওপর নির্ভর করে এই শ্রেণিগুলো ভাগ করা হয়ে থাকে। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা যে রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে পারে, সেটিই তখন উন্নত রাষ্ট্র। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত যা প্রয়োজন, তাকেই মৌলিক চাহিদা বলে; যার মধ্যে আছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশ উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ছোট আয়তনে আমাদের দেশের জনসংখ্যা অত্যধিক। একদিকে যেমন জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু মৌলিক চাহিদা হিসেবে চিকিৎসাসেবা জনগণের দ্বারপ্রান্তে কতটুকু পৌঁছেছে। এখানে জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসাব্যবস্থা খুবই সীমিত। করোনাকালে তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। দেশ যেভাবে উন্নত হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হতে পারছে না। এখনো গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরমুখী হতে হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ নাগরিক মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। এই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম নয়। তাই তাদের শেষ আশ্রয় হয় সরকারি হাসপাতালগুলোতে।
কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেন ভোগান্তির শেষ নেই। রোগীর চিকিৎসা পাওয়া থেকে শুরু করে মেডিসিন ক্রয় করা পর্যন্ত ভোগান্তি। এর মধ্যে আছে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাওয়া, স্বজনপ্রীতি, দালালের দৌরাত্ম্য, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি। এমন সব ভোগান্তি পোহাতে হয় একজন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। দালালদের যোগসাজশে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে যাওয়ার জন্য মেনশন করে থাকে। শুধু তা–ই নয়, দালালদের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও যোগসাজশ রয়েছে।
দালালদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যদি কোনোরকমে ফার্মেসি পর্যন্ত যাওয়া যায়, সেখানেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মেডিসিনের পাতায় নির্দিষ্ট কোনো মূল্য না থাকায় যে যার মতো টাকা হাতিয়ে নেয়। একই ওষুধের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন দোকানে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সাধারণ জনগণকে এই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথ নজর দেওয়া।
মু. মেহেদী হাসান
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা কলেজ, ঢাকা।