ইট-কাঠে গড়ে ওঠা নাগরিক সভ্যতায় শহর থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। চারদিকে শুধু ধুলোমলিন বড় বড় দালান। রুক্ষতার চিহ্ন কদমে কদমে। তা সত্ত্বেও মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজের সঙ্গে দূরত্ব যতই বাড়ুক, সবুজের কাছেই তাকে ফিরে যেতে হয়।
সবুজে ভরা গ্রাম-বাংলায় বেড়ে ওঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে আঁকড়ে ধরে আছে এখনো। সবুজের প্রতি তীব্র ভালোবাসাটা সবুজপ্রেমীদের অন্তরে চিরদিনই শক্ত করে গাঁথা। শৌখিন মানুষেরা তাঁদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছোট-বড় ছাদবাগান। বর্তমানে দেশের শহুরে কৃষিব্যবস্থার শৌখিন পদযাত্রা সময়ের বিবর্তনে এক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
পৃথিবীর বুকে সবুজকে ধরে রাখতে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। সুহৃদয়ের অধিকারী কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতিকে সদা সৌন্দর্যমণ্ডিত রাখতে। সম্প্রতি ‘কুমিল্লা শিশু পার্ক ও নগর উদ্যান’ সংলগ্ন ‘রানির কুটি’ এলাকায় এমনই একটি চমকপ্রদ উদ্যোগের দেখা মেলে। ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি জনমানুষের মনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য এক ধরনের অভিশাপ হলেও তাকে কীভাবে সুন্দরে রূপায়িত করা যায়, তারই একটি বাস্তব উদাহরণ উদ্যোগটি। ‘ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ-কুমিল্লা জেলা’ নামের একটি সংগঠন ‘যান্ত্রিক শহরের দেয়ালে সবুজের ছোঁয়া’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে চমৎকার উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে। ফেলনা প্লাস্টিক বর্জ্যগুলোকে শোধন ও রং করে তাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাটি দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে হরেক রকমের গাছ। দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিকের টবগুলো। এতে একদিকে যেমন প্লাস্টিক বর্জ্যের অভিশাপ থেকে পৃথিবী পরিত্রাণ পাচ্ছে, অন্যদিকে ধুলা-ময়লা পড়া দেয়ালগুলো পাচ্ছে বাহারি সজ্জা, সেই সঙ্গে সবুজের আন্দোলনও পাচ্ছে এক ভিন্ন মাত্রা।
শুধু একটি অঞ্চলই নয়, দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সবুজায়নের এ প্রচেষ্টা জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। আমরা সবুজে ফিরে যেতে চাই, সবুজেই বাঁচতে চাই।
শাহরিয়ার এম সোহান
শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়