পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের একাধিকবার অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগের মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একের অধিক ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ না দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। ২০১৪ সাল থেকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১. প্রশ্নপত্র ফাঁস, ২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভালো বিষয়ে পড়ার সুযোগ হওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনগুলো ফাঁকা হয়ে যায় এবং ৩. দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থীরা বেশি সময় পেয়ে বেশি শিখে আসেন, ফলে প্রথমবারের পরীক্ষার্থীরা বঞ্চিত হন।
প্রথমত, প্রশ্ন তৈরি এবং প্রশ্ন বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রেরণের দায়িত্বে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সুতরাং প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য দায়ী যদি করতেই হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই করতে হবে। তাহলে কেন তাদের ব্যর্থতার দায় আমাদের সেকেন্ড টাইমার বা দ্বিতীয়বারের ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানো হচ্ছে?
দ্বিতীয়ত, একজন শিক্ষার্থীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আগের থেকে ভালো বিষয়ে পড়তে পাওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। কারণ, শিক্ষা আমাদের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি। একান্তই যদি তারা আসন ফাঁকা হওয়ার অজুহাত দিতে চায়, তাহলে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বন্ধ করে দিতে পারে। এতে যাঁরা পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয়ে পড়তে চান, তাঁরা আর খারাপ বিষয়ে ভর্তি হবেন না। ফলে ঢাবির আসন ফাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই না।
তৃতীয়ত, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ চালু হলে মোটেও প্রথমবারের পরীক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবেন না। কারণ, তাঁরাও পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যাঁরা বেশি শিখে আসবেন, তাঁরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অধিক যোগ্যতা রাখেন, এটাই হওয়া উচিত। আমাদের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া এমন, সেখানে কম বা বেশি শিখে আসাটা খুব বেশি নির্ভর করে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখাদেখি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এমন ‘অমানবিক’ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় আমাদের ওপর। আবারও বলছি, উন্নত বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাধিকবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে তাঁদের কাছে এমন অযৌক্তিক বক্তব্যও আমরা দেখি না, যা দেখতে পাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে।
তারপরও ঢাবি প্রশাসন যদি তাদের এ চিন্তাভাবনা পরিবর্তন না করতে পারে, তাহলে বলব, তারা যেন বাংলাদেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মতো দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থীদের মোট নম্বর থেকে কিছু নম্বর কর্তন করতে পারে। আশা করি এতে প্রথম ও দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা আসবে। কেউ বঞ্চিত হবেন না।
আহমেদ শিহাব
একজন ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী