দেশে যেখানে সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয় সেখানে গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তার ইস্যুটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে। গণপরিবহনে নারীদের যাতায়াত করাটা যে অনেক সময় অনিরাপদ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়টি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণপরিবহনে নারীদের উপর যৌন নিপীড়ন হওয়ার অনেক ঘটনাই সামনে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, নারীরা ধর্ষিত হয়েছে বাস, লেগুনা, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, এমনকি নৌকায়ও। যৌন নির্যাতন বা হয়রানি হয়েছে ট্রেনেও। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রাপ্তবয়স্ক নারী থেকে শুরু করে তরুণী, কিশোরী এমনকি শিশুও।
রাতে-দিনে চলাচলের ক্ষেত্রে নির্জন রাস্তায় পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজন অথবা পুরুষ যাত্রীদের দ্বারা শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন নারীরা। দেশের গণপরিবহনগুলোতে ৯৪ ভাগ নারী যাত্রী মৌখিক, শারীরিক যৌন নিপীড়নের শিকার হন। নিপীড়িতদের অধিকাংশই এসবের প্রতিবাদ করেন না আরো হয়রানি হওয়া কিংবা মানসম্মানের ভয়ে। একক নারী যাত্রীদের হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং এমনকি হত্যার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে একদিকে আস্থাহীনতা অন্যদিকে সামাজিক অসচেতনতার কারণে দিন দিন এসব ঘটনা বাড়ছে।
দেশে শিক্ষা, ভ্রমণ ও কর্মক্ষেত্রে নারীর পদচারণ বেড়েছে। তাদের প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মস্থলে যেতে হয়। এ ছাড়া সংসারের নানা ধরনের প্রয়োজনে নারীদের ঘরের বাইরে বের হতে হয়। তাদের অনেকের যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনই একমাত্র মাধ্যম। অথচ গণপরিবহনে যাতায়াত করতে গিয়ে তারা প্রতিনিয়ত হেনস্তা ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুরুষ যাত্রীরা তো আছেনই পাশাপাশি চালক, সহকারীরাও এ ধরনের অপকর্মে অংশ নিচ্ছেন। গণপরিবহনে নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত না হলে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে নারীরা বাধাগ্রস্ত হবেন। যে দেশে তাদের বড় হয়ে ওঠা সে দেশেই একাকী গণপরিবহনে যাতায়াত করাটা তাদের কাছে রীতিমতো ঘোর অস্বস্তিকর যেন না হয়।
একাকী নারীদের নিরাপত্তা বোধের ভীতি দূর করার কি কোনো উপায় নেই? অবশ্যই এর থেকে উত্তরণের পথ দায়িত্বশীলদের দ্রুত বের করতে হবে। বিদ্যমান আইন এবং নীতিমালার বাস্তবায়ন সাপেক্ষে একাকী নারীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে গণপরিবহন ব্যবহার নিশ্চিত করুন পাশাপাশি সকল নারীদের প্রতি সংবেদনশীল হোন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই।
মুনযির আকলাম
কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা।