আমি বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করছি, যা একান্তই আমার নিজের উপলব্ধি করা, বাস্তবিকভাবে ধারণ করা। আমার এই আলোচনা অনেকেরই ভালো লাগবে, অনেকের ভালো লাগবে না। অনেকেরই আবার বিপরীত কোনো চিন্তাচেতনা বা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।
আমি আইসিটির শিক্ষক হওয়ায় আমাকে কম্পিউটারে অনেক কাজ করতে হয়। এই কাজের সুবাদে এবং বিভিন্ন পরিবেশে মিশে দেখেছি, ৯০ শতাংশ লোক নিজের পারা সহজ কাজগুলোও অন্যকে দিয়ে করাতে চায়। সবাই শুধু অপরের ঘাড়ে কাজ চাপিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। সবার যেন একটা দায়সারা মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশের মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য সহজ কাজ বেছে নিতে চায় এবং সহজ পদ্ধতিতে টাকা রোজগার করে ধনী হতে চায়। হয়তো অনেকেই আমার এই কথার বিরোধিতা করবেন। বিরোধিতা করতে পারেন, কিন্তু এটি বাস্তব চিত্র। এখন বলবেন, অশিক্ষিত লোক এমন করে! না। শিক্ষিত লোকের মধ্যে এমন মনোভাব বেশি। তাহলে এর জন্য দায়ী কে?
এর জন্য দায়ী আমাদের দেশের গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা। আমার বয়স এখন ৪০। আমি এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের তিন ধরনের পরীক্ষার ফলাফলপদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত। প্রথমত বিভাগ বা শ্রেণি, যেমন প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগ। এর মধ্যে আবার অনেক ভালো করলে স্টার বা বোর্ডস্ট্যান্ডও ছিল। এই পদ্ধতি দীর্ঘদিন ছিল। পাকিস্তান পর্ব এবং দেশ স্বাধীন থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। ২০০১ সাল থেকে শুরু হলো গ্রেডিং বা জিপিএ পদ্ধতি। মাঝে অনেক কারিকুলাম পরিবর্তন হয়েছে। প্রশ্নপদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের শিক্ষার হার বেড়েছে। পেশায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিদেশিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। এখন বলতে পারেন, বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলার দরকার কী?
জনগণের চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা পূরণের জন্য এবং ভৌগোলিক কারণে বিদেশিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই হবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা কি আদৌও আমাদের পেশাগত চাহিদা পূরণ করতে পারছে? আমি মনে করি পারছে না। পেশাগত দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়া জরুরি। একসময় আমাদের দেশে শিক্ষার হার কম ছিল। নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞান দরকার ছিল। এখন শুধু অক্ষরজ্ঞানদানের সময় শেষ।
এখন অক্ষরজ্ঞানের পাশাপাশি দরকার কারিগরি জ্ঞান। পেশাগত চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। সেদিক থেকে নতুন কারিকুলাম অনেক বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষকদের নিয়োগপ্রাপ্তির বিষয় ছাড়াও অন্য দু–একটি বিষয়ে পাঠদান করাতে হয়। আমি পাঠ্যবই ও শ্রেণিতে পাঠদানের সময় উপলব্ধি করেছি, এই কারিকুলাম আগের কারিকুলাম থেকে অনেক ভালো। শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয় হাতে–কলমে শিখতে পারছে। শুধু মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে না।
বর্তমান বইগুলোয় পারদর্শিতার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ও অনেক বিষয় আছে, যা শিক্ষার্থীদের একজন সৎ ও যোগ্য নাগরিক তৈরিতে সহায়তা করবে। কিছু ভুলত্রুটি আছে, খুব তাড়াতাড়ি আমরা এর সমাধান পাব। শিক্ষা কারিকুলাম–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বিভাগ কাজ করছে। নতুন কোনো বিষয় শুরু করতে গেলে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বড় সমস্যা হচ্ছে গুজব! আমরা না দেখে, নিজে যাচাই না করেই অন্যকে বলতে থাকি।
আমার কাছে বন্ধুদের মধ্যে সময়-সময় অনেকে অনেক কিছু বলেছে, কিন্তু আমি বইতে মিলিয়ে দেখেছি বিষয়টি সত্য নয়। পরে আমি ওই বন্ধুকে বই এনে দিয়ে পড়তে বলেছি। বই পড়ে সে বুঝতে পেরেছে, এটা গুজব ছিল। বইতে কোনো সমস্যা নেই। এ জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, গুজবে কান দেবেন না। নিজে আগে বই পড়বেন, দেখবেন পড়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
সঞ্জয় মিত্র
সহকারী শিক্ষক (আইসিটি)
গুমাইল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ
সাভার, ঢাকা।