পর্যটন সম্ভাবনাময় দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়া। কিন্তু কয়েক যুগ ধরে এখানে উন্নয়নের কোনো নামগন্ধ নেই বললেই চলে। নদীভাঙনরোধ, ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, অভ্যন্তরীণ ও নদীপথে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, উন্নত চিকিৎসা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ চরাঞ্চলের জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নের দাবি বহু পুরোনো। এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এখানকার মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে।
হাতিয়ার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে নদীতে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। আর নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা বিপদের মুখে পড়ছেন। জেলেরা এখনো জলদস্যুদের ভয়ে দিন কাটান। বারবার অভিযানে জলদস্যুদের তৎপরতা কিছুটা কমলেও কিছুদিন পর তা আবার বেড়ে যায়। অথচ জলদস্যু দমন এলাকাবাসীর প্রধান দাবিগুলোর অন্যতম।
হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট থেকে নলচিরা পর্যন্ত মেঘনা নদী পারাপারের সমস্যা যুগ-যুগের। এ পথে সি-ট্রাক থাকলেও তা নিয়মিত চলে না। সি-ট্রাকের ইজারাদারদের কাছে জিম্মি সাধারণ যাত্রীরা। সি-ট্রাক চলে ইজারাদারদের ইচ্ছায়।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক সমস্যা তো আছেই। জোয়ার-ভাটা ও নদী উত্তাল থাকা না থাকার ওপর নির্ভর করে চলে এ যানবাহন।
হাতিয়ায় যাতায়াতে ভরসা ট্রলার। এই ট্রলারগুলোতে যাত্রী পরিবহনের কোনো ফিটনেস সনদ কিংবা অনুমতি নেই। যাত্রী বহনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। সমুদ্রে মাছ ধরার বড় ট্রলারগুলো যাত্রী আনা–নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফিটনেসবিহীন এসব ট্রলারে যাতায়াত করতে গিয়ে স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত অন্তত দুই হাজারের বেশি যাত্রীর সলিলসমাধি ঘটেছে। প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই এই তৎপরতা চলে আসছে।
নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীই এলাকার মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যাত্রী এই বিপদসঙ্কুল পথে যাতায়াত করে। বর্ষাকালে এই ঝুঁকি অতিমাত্রায় বেড়ে যায়।
রাজধানী ঢাকা থেকে হাতিয়ার তমরুদ্দির সঙ্গে সরাসরি লঞ্চ যোগাযোগ রয়েছে। লঞ্চঘাটে কোনো পন্টুন নেই। চলে দুর্নীতির মহড়া, ঘাট এলাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
হাতিয়ার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা একেবারেই খারাপ। নলচিরা ঘাট থেকে হাতিয়া উপজেলা সদর ওছখালী বাজার পর্যন্ত মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ যাতায়াতেই সেটা অনুমান করা যায়। সোনাদিয়া ইউনিয়নের বেকের বাজার থেকে হিল্টন রোড সড়ক, পাকা রাস্তার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি, উন্নয়ন হয়নি কাঁচা রাস্তার। নিঝুম দ্বীপ পায়নি পর্যটনকেন্দ্রের মর্যাদাও।
মামুন রাফী
হাতিয়া, নোয়াখালী