২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

যে আন্দোলন কেউ করে না

পৃথিবীতে কত আন্দোলন হয়! কিন্তু বই পড়ার কোনো আন্দোলন চোখে পড়ে না। আসলে আমরা বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সময় এখন আর বইয়ের পাতায় কাটে না। আমাদের সময় কাটে স্মার্টফোন আর ল্যাপটপ ব্যবহার করে। যে চোখের দৃষ্টি ছিল বইয়ের পাতায়, আজ তা স্মার্টফোনের পর্দায় থাকে। অথচ আমরা জানি যে তা আমাদের চোখ আর মস্তিষ্ক উভয়েরই ক্ষতি করে। তারপরও আমরা এসব ডিভাইসে চোখ বুলিয়ে সময় পার করছি।

চারপাশে প্রতিদিন কতশত আন্দোলন হচ্ছে। কখনো রাজনৈতিক আন্দোলন, কখনো অধিকার আদায়ের আন্দোলন, কখনো প্রতিবাদী আন্দোলন। কিন্তু বই পড়া নিয়ে কোনো আন্দোলন হয় না। তাহলে বই পড়া কি মানুষের অধিকার নয়? বই পড়ে কি রাজনৈতিক শিক্ষা গড়ে ওঠে না? বই পড়ার মাধ্যমে কি প্রতিবাদ করা যায় না? সবকিছুই হয়। কিন্তু আমরা এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করি না। বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে কখনো ভাবী না। জানি, বই পড়ায় অনেক সময় ব্যয় হয়। ধৈর্য ধরে বই পড়তে হয়। অনেক কষ্টের কাজ। করলা তিতা হলেও উপকারী। এরকম গভীর চিন্তাভাবনা আমরা করি না।

প্রতিনিয়ত দেশে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। এই বেকারত্ব বাড়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ তারা বই পড়ে অভ্যস্ত নয়। যদি বই পড়ে অভ্যস্ত হতো, তাহলে বেকার থাকত না। যেকোনো মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হতো। কারণ, বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়। কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয়। ধৈর্য শক্তি বাড়ে। ফলে নিজেকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে কাজের সন্ধানে বের হয়। অলস সময় কাটাতে মন চাই না।

মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। মানুষের অনেক কিছু করার সামর্থ্য আছে। শক্তি আছে। ধৈর্য আছে। সাহস আছে। কিন্তু এর সবকিছুই ঘুমিয়ে আছে সুপ্ত অবস্থায়। বই পড়লে এগুলো জাগ্রত হবে। কল্পনাশক্তি দ্বারা নতুন কিছু করতে ইচ্ছে হবে। একাডেমিক বহির্ভূত বই কেউ পড়ে না বললেই চলে। কিন্তু কেউ জানে না শুধু একাডেমিক পড়ায় জ্ঞানের পরিধি বাড়ে না। চিন্তা শক্তি তৈরি হয় না। বরং আরও চাপ বাড়ে।

অনেক লাইব্রেরি আছে, কিন্তু পড়ুয়া নেই। যা কিছু পড়ে শুধু চাকরির জন্য। একটা চাকরি কি জীবনে সব? এই প্রশ্ন কারও মাথায় ঘোরে না। কারণ, আমরা জানি না, পৃথিবীতে যত সোনার খনি মজুত আছে, তার থেকে বেশি সোনা আছে মানুষের মস্তিষ্কে। আকাঙ্ক্ষার শক্তি সীমাহীন। এটা আমরা ভাবী না। কারণ, আমরা বই পড়ি না। কখন কীভাবে যে একটা বইয়ের একটা বাক্য জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে, তা নিয়ে আমরা চিন্তাও করি না।

আমাদের যে সময়টা বইয়ে দেওয়া দরকার ছিল সেটা এখন টিকটক, ফ্রি ফায়ার, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে ব্যয় করছি। নিজের মেধা নিজেরা নষ্ট করতেছি। বই পড়লে জ্ঞান বাড়ত। কল্পনাশক্তি বাড়াতে বই পড়ার বিকল্প নেই। আকাঙ্ক্ষার শক্তি সীমাহীন এটা বই পড়লে জানা যায়। মানুষ যা কল্পনা করে তা বাস্তব করা যায় বই পড়ার মাধ্যমে। কারণ, বই পড়ার মাধ্যমে এই সাহস, শক্তি, ধৈর্য ইত্যাদি তৈরি হয়।

একটা ভালো বই এক শ বন্ধুর সমান। এক শ জন বন্ধু যে পথ দেখাবে, একটা ভালো বই সে পথ দেখাতে পারে। বন্ধুরা যে পরামর্শ দেয়, যে শক্তি জোগায়, সাহস জোগায়—একটা বই অনায়াসে তা দিতে পারে। তাই জীবন পরিবর্তনে বই পড়ার বিকল্প নেই। এর মানে এ নয় বন্ধুসঙ্গ থাকবে না। জীবনে চলার পথে ভালো বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম। এখন শুধু পড়লেই হবে না, বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, সেটি বন্ধুদের নিয়ে করতে পারলে আরও দারুণ। প্রতিটি জায়গায় বই পড়ার আন্দোলন করতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন, ব্যানার, পোস্টার, নেতৃত্ব ইত্যাদি দ্বারা বই পড়া আহ্বান করতে হবে। যেদিন এটা সম্ভব হবে, সেদিনই এ দেশ মুক্তি পাবে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে। কারণ, তখন মানুষের কল্পনা থাকবে সুদূরপ্রসারী। বিকল্প চিন্তাভাবনায় মানুষ তার জীবিকার সন্ধান করবে। এ জন্য স্কুল–কলেজ–ভার্সিটিতে বই পড়া বিষয়ে সভার আয়োজন করতে হবে। শিক্ষিত মহল এগিয়ে এলেই বই পড়া আন্দোলন সফল হবে।

মো. আজিজুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।