সাগরের বুকে জেগে ওঠা দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র নিঝুম দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত এ দ্বীপটি ভেসে ওঠার পর ৮০’র দশকে বন বিভাগ এখানে বনায়ন করে। এরপর ১৯৮৫ সালে সরকার এই দ্বীপে মাত্র দুই জোড়া হরিণ অবমুক্ত করলে পরবর্তীতে ২০০৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজারে এবং ২০১১ পর্যন্ত হরিণের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছিল। ২০০১ সালে সরকার নিঝুম দ্বীপকে জাতীয় উদ্যান ও হরিণের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ এই হাজার হাজার হরিণ। আর সেই নিঝুম দ্বীপে হরিণ নিধন চলে সারা বছর। শিকার কিংবা হত্যা নিষিদ্ধ হলেও মাংস বিক্রির জন্য সারা বছর চলে হরিণ নিধন নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপে হরিণ শিকারির বেশ কয়েকটি দল আছে। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে ‘ম্যানেজ’ করে নানা কৌশলে হরিণ হত্যা চলছে বনে। হরিণ হত্যার পর বনের ভেতরেই মাংস কেটে প্যাকেট করা হয়।
প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে স্থানীয়ভাবে ও বিভিন্ন শহরাঞ্চলে সেগুলো বিক্রি হয়। প্রধান সড়ক এড়িয়ে ছোট সড়ক বা নৌপথে পাচার হয় সেসব মাংস। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় ব্যবহার হয় ককশিটের প্যাকেট। বরফ দেওয়া মাছের সেই প্যাকেটের একেবারে নিচে থাকে হরিণের মাংস।
এ মুহূর্তে নিঝুম দ্বীপে হরিণের প্রকৃত সংখ্যা কত, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছেই। তবে পুরোনো জরিপ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে গত ১০ বছরে হরিণের অভয়ারণ্য নিঝুম দ্বীপে হরিণ ছিল প্রায় ৪০ হাজার। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজারে। হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপে এখন ৯০ হাজার হরিণ থাকার কথা কিন্তু এগুলো গেল কোথায়?
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক, শৌখিন মানুষের কাছে হরিণের মাংসের কদর অনেক। অনেক সময় উপঢৌকন হিসাবেও হরিণের মাংস, চামড়া এমনকি জ্যান্ত হরিণও পাচার হয়।
শুধু নিঝুম দ্বীপ নয়, হরিণের বিচরণ বৃদ্ধি পায় চরকবিরাসহ আশপাশের আরও ১০-১১টি দ্বীপ বনাঞ্চলে। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকেই দিন দিন কমতে থাকে নিঝুম দ্বীপের হরিণ। বর্তমানে নিঝুম দ্বীপে হরিণের পরিসংখ্যান বন বিভাগের কাছে না থাকলেও স্থানীয়দের মতে এর সংখ্যা ৪-৫ হাজারের বেশি হবে না। ফলে নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যা নিয়ে সরকারিভাবে জরিপ করা এখনই জরুরি হয়ে পড়েছে। হরিণ শিকার ও হরিণের মাংস পাচারে গোটা সিন্ডিকেটকে রুখতে না পারলে নিঝুম দ্বীপ তার ঐতিহ্য হারাবে।
মামুন রাফী
সংবাদকর্মী
হাতিয়া, নোয়াখালী