বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে। এই নতুন বিপ্লবের মূলে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস এবং বিগ ডেটা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বাংলাদেশকেও প্রস্তুত হতে হবে। তবে প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা কতটা প্রস্তুত এই বিপ্লবকে মোকাবিলা করতে?
বাংলাদেশ সরকার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে সামনে রেখে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প ও প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে যেখানে উদ্ভাবনী এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, ও গণিত) শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা সায়েন্সের ওপর কোর্স চালু করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে যাতে শিক্ষার্থীরা এই নতুন প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
দেশে ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়নেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে। শহরাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হচ্ছে এবং গ্রামাঞ্চলেও ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। তবে, এখনও অনেক ক্ষেত্রে উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। বিভিন্ন শিল্প ও প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞানসম্পন্ন কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা পূরণে বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে।
যদিও অনেক অগ্রগতি হয়েছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। দেশে এখনও একটি বড় অংশের মানুষ প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন নন এবং তাঁদের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা ও আগ্রহের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এই বিপ্লবের সুফল পেতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অবশ্যই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারবে।
সৌরভ হালদার
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
সরকারি ব্রজলাল কলেজ, খুলনা