পৃথিবীর সব মা-বাবা সন্তানের কল্যাণ কামনা করেন। সন্তানের মঙ্গলের জন্য যা কিছু করা দরকার, সেটা তাঁরা করতে প্রস্তুত থাকেন। কেননা, এই সন্তানদের নিয়েই তাঁরা স্বপ্নের পৃথিবীতে রঙিন আলোর মুখ দেখতে চান। কিন্তু একসময় এই আশা কারও জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। আদর্শবান কোনো সন্তান চায় না, তার কারণে তাঁর মা-বাবার সম্মানহানি হোক। আবার কিছু ক্ষেত্রে অনেক মা-বাবার কারণে সন্তানেরা হতাশায় ভোগে। মা-বাবার ইচ্ছার কাছে সন্তানের চাওয়া-পাওয়া অনেক সময় মূল্যহীন হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই মানসিক যাতনা তৈরি হয়। এই যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে অনেক ছেলেমেয়ে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়।
সন্তানের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে আপনজন এবং কাছের মানুষ হচ্ছে মা-বাবা। কিন্তু মা-বাবার কাছে অনেক সময় সন্তানেরা কিছু বলতে পারে না। অথচ বন্ধুদের কাছে নির্ভয়ে বলতে পারে। সেই বন্ধুত্বসুলভ আচরণ যদি মা-বাবা সন্তানদের করতেন, তাদের সুখ–দুঃখ ভালো লাগার বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখতেন, তাহলে মা-বাবাই হতেন সন্তানদের কাছে শ্রেষ্ঠ বন্ধু। দুঃখজনক হলেও সত্য, মা-বাবা নিজেদের পছন্দ অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, সন্তানের মত আছে কি না, সেটা দেখার চেষ্টা করেন না। সন্তান চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে, মা-বাবা চায় ডাক্তার বানাতে, সন্তান চায় ভালো কোথাও পড়াশোনা করবে, মা-বাবা চায় নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে। এমন চাপ যখন সেই ছোটবেলা থেকে আসতে থাকে, একসময় সন্তানের তখন নিজেকে কয়েদির মতো মনে হতে থাকে।
আসলে আমাদের কি কোনো সাধ–ইচ্ছা নেই? শৈশব–কৈশোর শেষে যৌবনে পদার্পণের পর ঘটে নানা ঘটনা। মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এলে অনেক মা-বাবা পাত্রের ক্যারিয়ার, টাকা-পয়সা, বংশ, খ্যাতি দেখেই মহাখুশি হয়ে যান। নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন। এটি ভাবেন না যে ছেলেটি একজন ভালো মানুষ কি না। সেটি যাচাই–বাছাই না করেই মেয়েকে বুঝিয়ে বা বাধ্য করে বিয়ে দেওয়া হয়। মানুষটা ভালো না হলেও অনেক মেয়ে মা-বাবা, পরিবার ও সমাজের কথা ভেবে মন না চাইলেও সংসার করেন। কেউবা এসব অশান্তির দাবানলে পুড়তে পুড়তে পৃথিবী থেকে অকালে হারিয়ে যান। আমাদের কাছ থেকে আমাদের প্রিয় মানুষ, ভাই, বোন, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন। এ সব ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।
পরিশেষে প্রতিটি মা-বাবার উচিত সন্তানের প্রতি আন্তরিক হওয়া। সন্তান কোনো ভুল কাজ করার আগে তার মন-মস্তিষ্কে এসব ভুলের পরিণাম সম্পর্কে জানাতে হবে। তাকে সে হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সামান্য ভুলের কারণে কোনো সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটাক। সারা জীবন আফসোসে ভোগার আগে সন্তানদের বুঝতে চেষ্টা করুন।
মো. আব্দুল করিম গাজী
শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তর, হাদিস বিভাগ
আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী
ই-মেইল: [email protected]