রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই

ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকায় আটক রাসেলস ভাইপার নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে কৃষক রেজাউল খান। শনিবার রাতেছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপের তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’ নামে  পরিচিত সাপটিই মূলত রাসেলস ভাইপার। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে এর লক্ষণীয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও বহু বছর ধরে ধারণা করা হচ্ছিল এই প্রজাতির সাপ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ।

ইতিমধ্যে দেশব্যাপী এই সাপ নিয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে অনেকে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, সেই সঙ্গে প্রকাশ করছেন নানান তথ্য, যার অধিকাংশ সঠিক নয়।

মূলত সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জেলায় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়াতে সাহায্য করেছে। মানুষ ভাবতে শুরু করেছে এই সাপে কামড়ালে নিশ্চিত মৃত্যু। অনেকে না জেনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।

সাপ দেখে সবাই ভয় পান এবং এর কামড়ে নিশ্চিত মৃত্যু এটা অনেকের মনে গেঁথে গেছে। এর যে চিকিৎসা আছে এবং চিকিৎসা নিলে যে ভালো হওয়া যায় সেটা বেশির ভাগের অজানা বলেই আতঙ্ক মাত্রা ছাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  তথ্যমতে, ২০২৩ সালে চার লাখ সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের। যাদের বেশির ভাগই কোবরা ও কেউটে প্রজাতির সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে। তবে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যু হতে পারে।

রাসেলস ভাইপার সাপটি সাধারণত রাতে চলাচল করতে পছন্দ করে। ঘাস বন, ঝোপ ঝাড়, ফসলের গোলা কিংবা জমির বড় গর্ত এদের পছন্দ। সাধারণত এরা বাড়িতে থাকে না। তাই রাতে চলাচলে সতর্ক হতে হবে। কৃষকেরা গামবুট পড়লে এবং জমিতে নামার আগে লাঠি দিয়ে নাড়ালেই এরা সরে যায়। আতঙ্কিত না হয়ে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

রাসেলস ভাইপার নিয়ে যেভাবে আতঙ্কের কথা ছড়াচ্ছে সেটি মূলত ভয় এবং অপর্যাপ্ত জ্ঞান থেকে। কাজেই পর্যাপ্ত তথ্যসহ এর বিস্তার, কামড়ালে করণীয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বিশেষ করে, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ, গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরবরাহ করতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, অ্যান্টিভেনম সাপ্লাই এবং আইসিইউ এর স্বল্পতা আছে, সেহেতু দ্রুত পরিকল্পনা নিয়ে গ্রাম পর্যায়ে সাপের ভ্যাকসিন পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

মো. মিলন হোসেন
শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।