মুঠোফোন আবিষ্কার হয়েছিল মানুষের উপকারের জন্য; কিন্তু কে জানত, তা ভয়াবহ ক্ষতি করতে সক্ষম হবে! যে মুঠোফোন আবিষ্কার হয়েছিল মানুষের উত্তম ব্যবহারের জন্য, এখন বেশির ভাগ সময় এর নেতিবাচক ব্যবহার হচ্ছে। আর এই আধুনিক যুগে মানুষের বিনোদনের জন্য বের হয়েছে মোবাইল গেম। আর এই মোবাইল গেমে সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত হচ্ছে যুবসমাজ। শুধু যুবকেরা নন; ছোট-বড় সবাই এই গেমে মগ্ন হয়ে পড়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই তারা এই মোবাইল গেমের পেছনে ব্যয় করছে। কিন্তু তারা জানে না, এই মোবাইল গেমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
মোবাইল গেমের কারণে মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এর মারাত্মক ক্ষতি হয়। বেশি সময় ধরে মোবাইল গেম খেলার কারণে চোখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন অকালে চোখের সমস্যায় ভোগা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ জ্বালা করা, চোখে কম দেখা ইত্যাদি। বেশি সময় পর্যন্ত মোবাইল গেম খেলার কারণে আমাদের মনোযোগ শুধু মুঠোফোনেই ব্যস্ত থাকে। তাই হঠাৎ মুঠোফোন রেখে অন্য দিকে তাকালে প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয়। সাধারণত মোবাইল গেম খেলার সময় আমরা ঝুঁকে থাকি। খুব কম সময়ই আমরা শুয়ে শুয়ে খেলি। ঝুঁকে বসে বেশি সময় মোবাইল গেম খেলার কারণে ঘাড়ে ব্যথা হয়।
মোবাইল গেম খেলার সময় আমরা সম্পূর্ণ মনোযোগ গেমের দিকেই রাখি। তখন কেউ ডাকলে আমাদের তার প্রতি বিরক্তবোধ হয়। কখনো কখনো নিজের অজান্তেই খারাপ ব্যবহার করে অন্যকে আঘাত করি। এ ছাড়া বেশি সময় মোবাইল গেম খেলার পর আমরা স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্তি বোধ করি। এ সময় আমাদের কোনো কাজের কথা বললে আমরা অনেক বাজেভাবে রেগে যাই এবং নানা উল্টাপাল্টা কথা বলে থাকি।
এক্সেজ ইজ ভেরি বেড, অর্থাৎ অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ। অতিরিক্ত গেম খেলার কারণে মানুষের চিন্তাশক্তি কমে যায়। সৃজনশীল মেধা হ্রাস পায়। ফলে ব্যক্তির নতুন কিছু সৃষ্টির দক্ষতা কমে যায়। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও কমে যায়।
সৃজনশীল মেধা কমে যাওয়ার কারণে দেশও মেধাশূন্য হয়ে যেতে পারে। বর্তমান যুগে শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতী সবাই মোবাইল গেম নিয়ে এত বেশি আসক্ত যে তারা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। পড়ালেখার সময় পড়ালেখা ছেড়ে মোবাইল গেম খেলছে। অনেকে পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছে এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। মোবাইল গেমে আসক্ত একজন যুবক সাধারণত বাইরের সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখে।
মুঠোফোনের বাইরে সে অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারে না। এর ফলে সে তার মা, বাবা, পাড়া-প্রতিবেশী, গুরুজনের দেওয়া শিক্ষা, অর্থাৎ বিভিন্ন আদেশ নিষেধ ভুলে গিয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মুঠোফোন দিয়ে অতিরিক্ত গেম খেলার কারণে মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট হয়।
যুবকেরা হলো ভবিষ্যতের প্রদীপ। কিন্তু বর্তমানে যুবসমাজ মোবাইল গেমের প্রতি এতই আসক্ত যে তারা দায়িত্ব, কর্তব্য, কাজকর্ম ইত্যাদি বাদ দিয়ে সারা দিন মুঠোফোনের পেছনে পড়ে থাকে। এর ফলে কাজকর্ম না করায় বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের মানুষ ও চরম দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। মোবাইল গেমে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে এখনকার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার প্রতি মনোনিবেশ করে না। মা-বাবা, পাড়া-প্রতিবেশী ও গুরুজনদের দেওয়া শিক্ষাও গ্রহণ করে না। কীভাবে মানুষের সঙ্গে কথা ও আচরণ করতে হয়, তা-ও তারা ভুলে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক বিষয় নিয়ে তর্ক করে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বেশি সময় গেম খেললে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে মুঠোফোন গরম হয়ে যায়।
যেহেতু এই গেমের মাধ্যমে শিশু, নারী, পুরুষসহ যুবসমাজ ক্ষতির সম্মুখীন, তাই এখনই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। এ জন্য শিক্ষিত সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। মোবাইল গেমের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পত্রিকায় সচেতন বার্তা লিখতে হবে। তা ছাড়া পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় নাটকের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করতে হবে। মানুষকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। পত্রিকা ও বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। এভাবে সচেতন করে তুলতে পারলেই মোবাইল গেম থেকে যুবসমাজসহ সবাইকে বাঁচানো সম্ভব। ফলে ব্যক্তি, পরিবার, দেশ ও জাতির কল্যাণ সম্ভব হবে। উন্নত জীবনব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
আজিজ ওয়েসি
সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মোবাইল: ০১৭২৬৬৩০০৬৯
ই-মেইল: [email protected]