মানুষ শেষ বয়সে বোঝেন, তাঁর সময় কাটানোর জন্য হাতে কোনো কাজ নেই, আড্ডা দেওয়ার জন্য কোনো সঙ্গী নেই। নিজের সমসাময়িক লোকজন বা আত্মীয়স্বজনের একের পর একের মৃত্যু হওয়ার ফলে নিজস্ব বন্ধু-বৃত্ত বা পরিমণ্ডল ক্রমশ ছোট হয়ে যায়।
নিজের ছেলেমেয়েরাও বিয়ের পর আলাদা সংসার পাতে বা চাকরি সূত্রে অন্য কোথাও, অন্য কোনো শহরে বা বিদেশে গিয়ে থাকতে বাধ্য হয়। কেউই যেন বৃদ্ধ বাবা ও মায়ের দায়িত্ব নেয় না, তাঁরা জীবন্ত বোঝা, এই ভেবে তাঁদের ত্যাগ করে আলাদা করে সংসার পাতে। ৬ মাসে বা ৯ মাসে মা–বাবার খোঁজ নেয় দয়া করে বা লোকদেখানো তথা মুখ ও মান রক্ষা করতে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়, গভীর দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত।
এদিকে শেষ বয়সে দৃষ্টিশক্তি কমে আসে। চলাফেরায় দারুণ অসুবিধা হয়। বুড়োবুড়ির একজন গত হয়ে গেলে, যিনি বেঁচে থাকেন, তাঁর হয় যত সমস্যা। তিনি চরম একাকিত্বে ভোগেন, মনোবল হারিয়ে ফেলেন। টাকা খরচ করে কাজের লোক বা আয়া রেখেও অনেক সময় এই সমস্যা মেটানো যায় না। জীবন ছন্নছাড়া তথা অর্থহীন হয়ে পড়ে।
শেষ বয়সে বয়ষ্ক মানুষদের, যাঁদের দেখভাল করার কোনো লোক নেই, তাঁদের কম খরচে শান্তিপূর্ণ জীবন উপহার দিতে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। সরকারের তরফেই নানা বিভাগ বা ক্যাটাগরির বৃদ্ধাশ্রম বানানো উচিত এবং নিজেদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা উচিত।
সিঙ্গল বেডরুম, ডাবল বেড, ডরমিটরি, এসি, নন–এসি ইত্যাদি নানা ধরনের বৃদ্ধাশ্রম বানানো উচিত। যাঁর যেমন চাহিদা তেমন। যেখানে ঘরে ঘরে টিভি থাকবে, আবার ডাইনিং হল তথা কমনরুমও। প্রার্থনাঘর থাকবে। বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। সেলুন বা পারলারও রাখতে হবে।
সরকার এখানে ভর্তুকি দেবে, যাতে খরচ কম হয়। সিকিউরিটি ডিপোজিটও কম নেওয়া হবে। যাতে মানুষ বেসরকারি ছেড়ে সরকারি ব্যবস্থায় বেশি আগ্রহী হয়। এ ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে খরচ কম হতে বাধ্য। কারণ, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ও ব্যবসা চালু রাখতে তাদের লাভ কম করার কথা ভাবতেই হবে।
সরকারি ব্যবস্থায় বৃদ্ধাশ্রম চালু হলে বহু কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব কমবে। গৃহ নির্মাণের মতো বৃদ্ধাশ্রমব্যবস্থা বা প্রকল্পকেও পরিকাঠামো উন্নয়ন হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
সরকারি বৃদ্ধাশ্রম প্রকল্প চালু হলে তা অচিরেই আমজনতার কাছে গ্রহণযোগ্য ও লাভজনক হবে। সুইডেন, ডেনমার্কসহ বহু দেশে অনেক ঝাঁ-চকচকে বহুতল বৃদ্ধাশ্রম আছে। ওই সব দেশে লোকজনের অনেক সঙ্গ দেওয়ার বেশি অভাব। শেষ বয়সে সবাই একা। তাই সরকারি বৃদ্ধাশ্রমব্যবস্থা অনেক আগেই চালু হয়েছে, যা কিনা মানুষের উপকারে এসেছে। মানুষ শেষ বয়সে এখন অনেক নিশ্চিন্ত ও শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাচ্ছেন।
শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রম ছাড়া গতি নেই। তাই বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার দ্রুত বাস্তব রূপ দিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা