স্কুল-কলেজে রবীন্দ্র-নজরুলকে স্মরণের সময় আজ কোথায়! শুধু রবীন্দ্র-নজরুল উৎসব নয়, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন দিবসে অনুষ্ঠান উদ্যাপন যেন চিরতরে হারিয়ে গেছে আমাদের সমাজ থেকে। শিক্ষকেরা যদি কোচিং–বাণিজ্যে বিভোর হয়ে থাকেন, তাহলে স্কুল-কলেজে রবীন্দ্র-নজরুলকে স্মরণ করে উৎসব আয়োজন হবে কীভাবে!
কিছুদিন আগেই গেল রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখ, আর এগারোই জ্যৈষ্ঠ পেরিয়ে গেল কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী। বর্তমানে আমি বসবাস করি ঢাকার রূপনগর আবাসিক এলাকায়। এই এলাকায় একাধিক স্কুল-কলেজ রয়েছে। এর কোথাও ইদানীং নজরুল-রবীন্দ্রজয়ন্তী হতে দেখিনি। শুধু চোখে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত কোচিং–বাণিজ্য নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। তাহলে স্কুল-কলেজ থেকে বিচিত্রানুষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক উৎসব হারিয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমানকালের শিক্ষাপদ্ধতিই কি দায়ী নয়?
আমার জন্মস্থান পিরোজপুর শহরে। আমার কিশোরবেলা কেটেছে সেই মফস্বল শহরে। ১৯৬০–এর দশকের কথা। সেই সময়ে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী পালনের হিড়িক পড়ে যেত। গান, আবৃত্তি, নাটক, কত–কী হতো।
আজও ভুলিনি, ‘ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান’—এই গানের সঙ্গে লীলা দেবীর নৃত্যদৃশ্য! শ্রী রবীন যখন গাইতেন ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’, তখন কারও চোখে পড়ত না পলক।
কিন্তু ইদানীং আর শুনতে পাই না সেই অনুষ্ঠান।
পাড়ায় পাড়ায় লেগে থাকত একটার পর একটা অনুষ্ঠান। এক পাড়ার সঙ্গে আরেক পাড়ার সুস্থ প্রতিযোগিতাও চলত। এক মাস আগে থেকে চলত মহড়া। কোনো নামীদামি শিল্পী আনায় তেমন বাধ্যবাধকতা ছিল না। স্কুলে-কলেজে বা পাড়ায় ছোট–বড় সবাই অনুষ্ঠানে অংশ নিত—কথা বলতে শেখা শিশু থেকে বয়স্ক খালা-দাদারা। কিন্তু ইদানীং সেসব প্রাঞ্জল অনুষ্ঠান কোথায়?
আমাদের পিরোজপুরে সেই সময়ে রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী অনুষ্ঠান গানে গানে মাতিয়ে রাখতেন ক্ষমা দাসগুপ্তা। কোথায় সেই ক্ষমা দাসগুপ্তা? কেনইবা হারিয়ে গেল রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী উৎসব!
শিক্ষকেরা আজকে পাড়ায়-মহল্লায় তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। সমাজে তাঁরা এখন গুরুত্বহীন হয়ে গেছেন। সবাই এখন কোচিং-বাণিজ্য নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। ফলে নজরুল-রবীন্দ্র-সুকান্ত-জসীমউদদীনের জন্মজয়ন্তী পালনের অবকাশ কোথায়?
লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা