যুবসমাজের বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শে আজকের বিশ্ব বহুমুখী নতুনত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে যুবসমাজের সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব এবং উদ্যমে নড়ে উঠছে সমগ্র বিশ্ব। শিক্ষা, উদ্ভাবন, সেবা, সৃজনশীলতা ও পরিবেশ সংরক্ষণে যুবরা কাজ করে যাচ্ছে, যা গোটা বিশ্বের সমাজকাঠামোর অগ্রগতিতে বিশেষ ইতিবাচকতা এনে দেয়। আজকের এই সৃষ্টিশীল যুবসমাজের হাত ধরেই বিশ্বের অদেখা সব স্বপ্নরা বাস্তবরূপে আবির্ভূত হবে একদিন। যুবসমাজের কর্মের স্পৃহায় চোখ রেখে তাই হয়তো আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন, ‘একটি সরল জীবন্ত যুবক সমাজের দরকার হইয়াছে, গন্ডীছাড়া স্বাধীন শিক্ষালাভের জন্য উৎসুক কর্মোৎসাহে চির নবীন যুবক সম্প্রদায় চাই। তাহারাই এ দেশকে নতুন করিয়া গড়িবে, নতুন মহিমায় মহিমান্বিত করিয়া তুলিবে।’
একালে বেড়ে ওঠা যুবসমাজের অধিকাংশই তাদের অস্তিত্ব, জীবনবোধ হজম করে ফেলছে বর্তমানের প্রযুক্তির কাছে। বিশ্বের চাহিদায় নিজেকে নিয়োজিত না করে অসাধু কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে রোজ। অনেকেই জীবন বিমুখ হয়ে পড়ছে বিভিন্ন অসামাজিক নেশায় আসক্ত হয়ে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির অসৎ ব্যবহারে যুবদের হাতছানি বেশ প্রখর। কিন্তু এসবের বাইরে গিয়েও যারা লড়ে যাচ্ছে, বিশ্ব মানবতায় স্বাক্ষর রাখতে দৌড়াচ্ছে, তারাই এ বিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পদ।
বিশ্বকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে দাঁড় করাতে দেশে দেশে গড়ে উঠেছে বিপ্লবী সব গবেষণাগার। শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, প্রকৌশল ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে যুবরা বেশ এগিয়ে রয়েছে। গবেষণার মধ্যে বর্তমানে প্রযুক্তিগত গবেষণা বেশ উল্লেখযোগ্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে দেশ, তথা বিশ্বের উন্নতিকে পরখ করে দেখতে সক্ষম আজকের যুব শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষাগত গবেষণাও পিছিয়ে নেই।
শিক্ষকের পাঠদান, সময়ানুবর্তিতা, পাঠ্যবস্তু ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণাও বিশ্বব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান। অপর দিকে রয়েছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যা চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত ও মহাকাশবিষয়ক বিশ্লেষণের আওতাভুক্ত। এসব গবেষণাপ্রক্রিয়া যুবসমাজকে তীব্র বিচক্ষণভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করছে। এরই মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং এ পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে শিক্ষাভিত্তিক গবেষণার অগ্রগতি অসামান্য।
এ ছাড়া বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক বিশ্বে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক যুবসংগঠনও। যেসব সংগঠনে থেকে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান। এসব কর্মসংস্থানে আবার রয়েছে নিজ নিজ আগ্রহের কাজ বেছে নেওয়ারও সুবর্ণ সুযোগ। কেউ নেতৃত্ব দিচ্ছে, কেউ ভালো শ্রোতা, কেউ লেখালেখিতে পারদর্শী, কেউ গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষ আবার কেউবা বাকপটু। এবং এই যুবরাই আয়োজন করছে সংগঠনভিত্তিক সাংস্কৃতিক জোটের। করছে কর্মশালা, বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপ। সাহিত্যপ্রেমীরা আয়োজন করছে উৎসবমুখর পাঠচক্র, যেখানে আলোচিত হচ্ছে বিশ্ববরেণ্য লেখকদের বই। এসব কাজের মধ্য দিয়ে যুবরা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সামাজিক উন্নয়নেও যুবদের নেতৃত্ব পরিলক্ষিত হয়। সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি, সম-অধিকার, ন্যায়নিষ্ঠতা এবং সুপরামর্শেও যুবদের নেতৃত্ব রয়েছে। সমাজের দুস্থদের পাশে দাঁড়াতে যুবরা দারুণ কর্মচঞ্চল। তাদের অসময়ে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা, খরা, নদীভাঙন, ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে যুবরাই। সৎ ও যৌক্তিক পরামর্শের মাধ্যমে তারা গড়ে তুলছে আদর্শ সমাজকাঠামো। সুশৃঙ্খলবদ্ধ সামজ তৈরিতে যুবদের যে প্রচেষ্টা, তা সামজকে পরিবর্তন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও অনুপ্রাণিত করছে।
পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও যুবদের কাজ দৃশ্যমান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতিমধ্যেই পরিবেশ সংরক্ষণের পথ স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে তারা প্লাস্টিক, যা পচনশীল নয়, এসব বস্তুর পরিবর্তে গাছের চারা ও বই প্রদান করে আসছে, যা পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে, সেই সঙ্গে এসব কর্মকাণ্ডে বিপথে চলা যুবদের দৃষ্টিতেও আসে। সব মিলিয়ে যুবদের আজকের চেতনার সঙ্গে ভবিষ্যৎ পরোক্ষভাবে জড়িত। বাস্তবিক অর্থে বর্তমানে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যুবদের যে কর্মপ্রভাব, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ধারায় যুবসমাজেরও যে হাত রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আজকের পরিশ্রমী যুবরাই আগামী দিনে বিশ্বের নেতৃত্বে আসবে। যুবসমাজের মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও বিশ্বের উন্নতি সাধনের পথ সুদৃঢ় করতে আদর্শ পরামর্শের বিকল্প নেই।
মো. আবির হাসান
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল: [email protected]