শিশুর অধিকার যেন আজ সবার মাঝে সোচ্চার কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কিন্তু কী দেখছি আমরা? পথশিশুদের দিকে তাকালে তাদের নানা করুণ চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তারা ক্ষুধায় পায় না অন্ন, চিকিৎসার জন্য পায় না ওষুধ। শুধু তাই নয় বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও তারা বঞ্চিত। হাজার হাজার শিশু অসহায় ও পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ে আছে। অনেক পথশিশু পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ।
বিশ্বের একটি অংশের শিশুরা যেসব অধিকার ভোগ করেছে অপর দিকে পথশিশুরা তা থেকে বঞ্চিত থাকছে। সেসব অধিকার ভোগের কোনো সুযোগই তাদের নেই। তারা পাচ্ছে না ক্ষুধায় অন্ন, পরনের কাপড় স্বাস্থ্য আর শিক্ষার সুবিধা। অধিকারবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা বর্তমান বেশি। শহরে দেখা মিলে পথ শিশু হরহামেশা তাদের বয়স দুই থেকে শুরু হয়। সাত-আট বছরের পথ শিশুরা হাতে ফুল নিয়ে সবার কাছে ছুটে যায় বিনিময়ে কিছু টাকা। কতজনেই বা সহযোগিতা করে তাদের।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথ শিশুদের ৫১ ভাগ ‘অশ্লীল কথায় শিকার’ হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ২০ শতাংশ। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশুদের যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ২০ শতাংশ। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ যৌন নির্যাতনের শিকার।
সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত পথশিশুরা। পথশিশু দুরবস্থার জন্য দায়ী, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা।
শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু পথশিশুরা সেই সুযোগ পাচ্ছে কই? বর্তমান বাংলাদেশে রাস্তার শিশুদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে, তাদের সংখ্যা গণনা করাও কষ্টসাধ্য। পথশিশুরা স্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত নয় এমন খাদ্য তারা খেয়ে থাকে। পথশিশুদের স্কুলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। পথশিশুরা অবহেলা, শোষণের শিকার হয় চরমভাবে। পথশিশুদের কাছে শীতকাল মানেই বিপদ। এক-প্রকার লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। এই শীতে পথশিশুদের শীতবস্ত্র বিতরণ করেই চুপ হয়ে যাওয়া উচিত নয়।
পথশিশুরা প্রতিটি মোড়ে ভিক্ষা করে, রাতের বেলা ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকে। ক্ষুধার জ্বালা, একাকিত্বের কষ্ট বা সঙ্গদোষে তারা নানা ধরনের মাদক গ্রহণ করে। ডান্ডি এমন এক মাদক যা অসংখ্য পথশিশু সেবন করে থাকে। পথশিশুরা ডান্ডি, গাঁজা, পলিথিনের মধ্যে গামবেন্ডিং দিয়ে এবং পেট্রোল শুঁকে নেশা করে নগরীর মোড়ে মোড়ে এমন অবস্থা হরহামেশাই দেখা মিলে।
পথশিশুদের পুনর্বাসনসহ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা উচিত। ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্য রয়েছে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায়। সেই লক্ষ্যমাত্রায় সরকার অনেকখানি কাঠামোগতভাবে এগিয়েছে।
কেবলমাত্র কাগজে-কলমে পথশিশুদের অধিকার কথা লিখে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাস্তবে এর রূপ দিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সবার। হাজার হাজার পথশিশুদের রাস্তায় জীবন কাটাতে হয়। তাদের নির্দিষ্ট আশ্রয়ের ব্যবস্থা দিকে নজর দেওয়া জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবশ্যই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু বস্তু-বাসস্থান নয় শীতে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা যায় তারজন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ- চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা ছাড়া সরকার কর্তৃক বাজেট পথশিশুদের জন্য সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা দায়িত্বশীলদের নজর দেওয়া একান্ত জরুরি।
ফাতেমাতুজ জোহুরা
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
কলেজ রোড, চকবাজার, চট্টগ্রাম