অলিম্পিক নয়, তবে এক ঐতিহাসিক কুস্তি খেলা হচ্ছে জব্বারের বলীখেলা। বাংলাদেশেই এই খেলার উৎপত্তি স্থান। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় বলী। বলা হয়ে থাকে, চট্টগ্রামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার এই খেলার আয়োজন শুরু করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর খেলাটির নাম হয় জব্বারের বলীখেলা। দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটারজুড়ে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দান এলাকায় বৈশাখী মেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই খেলার ব্যবস্থা করা হয় প্রতিবছর।
দিদারুল হক, মর্মর সিংয়ের মতো বিখ্যাত বলীরা এ খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। গত বছরের ১১৩তম আসরে চকরিয়া উপজেলার তরিকুল ইসলাম জীবন নামের এক বলী চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ ছাড়া মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকেও অনেক নামীদামি বলী এ খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য এ দেশে পাড়ি জমাতেন।
প্রকৃতপক্ষে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা ও শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য এবং বাংলার মানুষদের মধ্যে মনোবল বাড়ানোর নিমিত্তে আবদুল জব্বার সওদাগর এই খেলার প্রচলন শুরু করেছিলেন। শোনা যায়, ব্যতিক্রমধর্মী এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বারকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলে পরে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
অনেকে চট্টগ্রামকে মল্লা বলীর দেশও বলে থাকেন। চট্টগ্রামে প্রায় ২২টি মল্লা পরিবার ছিল। যাদের বসবাস ছিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে। প্রকৃতপক্ষে এই মল্লারা ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী সাহসী পুরুষ। আর মূলত তাঁরাই ছিল এই কুস্তি খেলা, তথা বলীখেলার প্রধান আকর্ষণ এবং দর্শকের জন্য অনুপ্রেরণা। দর্শকেরা খেলা উপভোগের পাশাপাশি তাঁদের শারীরিক গঠন, চলাফেরা এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যেভাবে তাঁরা কুস্তি খেলতেন, তা দেখে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পেতেন নিজেদের মধ্যে।
বাংলার গ্রামীণ এবং নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন দেখা যায় লালদীঘির বৈশাখী মেলায়। সেই আনন্দে অন্যতম আকর্ষণ থাকে বলীখেলা। এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘ ঐতিহ্য। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলাতেও কুস্তি প্রতিযোগিতা হয় বৈশাখ মাসে। স্থানীয় এ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগুলো আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রশাসনের উচিত এই নিদর্শনকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
তৌহিদ-উল বারী
বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম