আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব বেতার দিবস। ইউনেসকো ঘোষিত দিবসটি ২০১২ সাল থেকে পালিত হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বেতার থেকে সারা দেশের সব কটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে একযোগে দিবসটি পালনের সূচনা হয় ২০১৬ সাল থেকে।
এ উপলক্ষে প্রতিবছর ঢাকার আগারগাঁও জাতীয় বেতার ভবনে সারা দেশের শ্রোতাদের নিয়ে মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘শতাব্দীজুড়ে তথ্য, বিনোদন ও শিক্ষাবিস্তারে বেতার’।
বাংলাদেশ বেতার; একটি নাম, একটি ইতিহাস। এই ইতিহাস এক দিনে রচিত হয়নি, যার শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৮৪ বছর আগে। সেই ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ দেশে বেতারের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। সেদিন যে বীজ উপ্ত হয়েছিল, তা-ই আজ শাখা-প্রশাখা, পত্র-পল্লবে সুশোভিত এক বিশাল মহিরুহ। কালক্রমে এটাই আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন, সর্ববৃহৎ ও শক্তিশালী গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস।
দেশের অনেক স্থানে এখনো বিদ্যুৎ নেই, থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন নয়; কিছু স্থানে স্যাটেলাইট সংযোগও নেই। সেখানে এত সংখ্যক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও বিনোদনের চাহিদা পূরণের একমাত্র নির্ভরশীল মাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। বাংলাদেশ বেতারই একমাত্র ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, যা দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এই দেশে প্রায়ই উপকূলবর্তী এলাকাগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকে; তখনো সেসব এলাকাতে তথ্য, আবহাওয়া কিংবা মুহূর্তে সংবাদ পৌঁছে দিয়ে থাকে বেতার। এ ছাড়া প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ বেতার তার কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ, সংসদ, খেলাধুলা, সাক্ষাৎকার, জনসচেতনতা, সরকারি নীতি, কার্যক্রম, উন্নয়ন, জনগণকে অবহিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে বাংলাদেশ বেতার তার শিকড়সন্ধানী মনোভাব নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান শ্রোতাদের প্রতিনিয়তই উপহার দিয়ে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর আকাশছোঁয়া প্রযুক্তির বিস্তারের পরও বেতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। অনেকেরই ধারণা, ইন্টারনেটের অগ্রযাত্রার এই সময়ে রেডিও তার গুরুত্ব হারিয়েছে। ধারণাটি মোটেই সঠিক নয়!
কারণ, সময় যেমন বদলেছে, ঠিক তেমনই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রচারণার ধরনও বদলে গেছে, এখন মানুষ রেডিও শোনে মুঠোফোনে কিংবা ইন্টারনেট অ্যাপস দিয়ে। এখনো রেডিওর ওপর নির্ভর করে অনেক মানুষ। সারা বিশ্বে বেতার এখনো অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বের ২০ শতাংশ মানুষ এখনো প্রতিদিন একবার করে রেডিও শোনে (তথ্য দৈনিক সমকাল)। বেতারের রয়েছে পৃথিবীর দুর্গম স্থানে পৌঁছানোর অসীম শক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রসারের ফলে সম্প্রচারের জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিযোগিতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। গ্রামগঞ্জ ও দুর্গম এলাকায় এখনো বেতার তথ্য আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হিসেবেই বিবেচিত। তাই বলা চলে, ‘বেতার সবার জন্য, সব সময়, সবখানে’। বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে গণমানুষের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে বেতার আরও সামনে এগিয়ে যাবে, বেতার এগিয়ে চলুক তার স্বমহিমায়।
মেনহাজুল ইসলাম
সভাপতি
মন-তার আন্তর্জাতিক বেতার শ্রোতা সংঘ
পার্বতীপুর, দিনাজপুর।