ঢাকার গণপরিবহনে বা লোকাল বাসগুলোতে বলতে গেলে প্রায় সব ধরনের মানুষের চলাচল। ধনী মানুষেরা নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা সামর্থ্যবান মানুষেরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ব্যবহার করলেও মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, ছাত্র-ছাত্রী এমনকি উচ্চবিত্তের অনেক মানুষের পক্ষে তা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এখানে ভাড়ার থাকে বিস্তর ফারাক।
সে যাই হোক, যেহেতু নারী-পুরুষকে একসঙ্গে যানবাহনে চলাচল করতে হয় সেহেতু নারী-পুরুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা দুঃসাধ্যই বলা চলে। কিন্তু এর মাঝেও কিছু পুরুষ ইচ্ছাকৃত সংস্পর্শের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। যেটার প্রতিবাদ করলে নারীটিকেই হতে হয় লাঞ্ছনার শিকার, শুনতে হয় অকথ্য ভাষা, যেগুলো মোটেও কাম্য নয়।
আমাদের নারীদের ক্ষমতায়নের যুগেও কেন এই লাঞ্ছনা? কেন সচেতনতার অভাব? দিন শেষে প্রতিটি পুরুষকে তো নারীর কাছেই ফিরতে হয়। তবুও নারীকে কেন অসম্মান? তারা কি তাদের ঘরের নারী, ঘরের মা-বোন-স্ত্রী-মেয়ে নয় তাই? প্রশ্ন থেকেই যায়।
আবার, আরেকটি খুবই লক্ষণীয় বিষয় যে, নারীদের নির্ধারিত সিটে পুরুষেরা বসে থাকে। তাদের সামনে নারীরা গাড়ির ঝাঁকিতে দোল খেতে থাকে, নিজের একটু দাঁড়ানোর শক্ত জায়গা পর্যন্ত পায় না, আর পুরুষের ঠেলাঠেলি তো আছেই।
যে ঝুঁকি একটি পুরুষ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, একই ঝুঁকি নারীর দ্বারা নেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এসবের প্রতিবাদ ছুড়লে প্রত্যুত্তর আসে, এতই সমস্যা যখন লোকাল বাসে কেন? নারী হিসেবে আমার উত্তর: পুরুষ যেমন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে লোকাল বাসে চড়ে নারীরাও ঠিক একই কারণে তেমন উপায় অবলম্বন করে।
অন্য কিছুই তো চাওয়া নয়, ন্যূনতম সম্মান অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত স্পর্শতার কবল থেকে মুক্তি। আমরা যদি সবাই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হই, আমার ধারণা তা একটু হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
জারিয়াতুল হাফসা
শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়