২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘কৃষকের বন্ধু’ এই সাপ মারবেন না, তাদের রক্ষা করুন

দেশের অন্যতম পরিচিত একটি সাপ দাঁড়াশ। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত এই সাপটির প্রধান খাবার ইঁদুর। মূলত ইঁদুর খেয়েই এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আড়ালে থেকেই কৃষকের বন্ধু হিসেবেও কাজ করে সাপটি। প্রায় ৩ বিঘা জমির ইঁদুর একটি দাঁড়াশ সাপ নিধন করতে সক্ষম। সে জন্য এই সাপকে বলা হয় কৃষকের বন্ধু।

প্রতিবছর ইঁদুর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট করে, তার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ধান ও গমের। ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের জন্য দাঁড়াশ সাপ প্রাকৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এই সাপকে রক্ষা করতে পারলেই বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার ফসল বাঁচানো সম্ভব হবে।

আমাদের দেশের লোকজনের মাঝে সাপটিকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন কুসংস্কার। অনেকেরই ধারণা, দাঁড়াশ সাপ মানেই বিষাক্ত। মানুষ না জেনে অকারণেই মেরে ফেলছে এই প্রাণীটিকে। তাই কৃষির জন্য অত্যন্ত উপকারী এই সরীসৃপের অস্তিত্ব আজ প্রায়ই বিপন্ন হতে চলেছে।

সাপ নিয়ে বিভিন্ন বেদে-সাপুড়েদের ভ্রান্ত কিছু প্রচারণা রয়েছে। তাদের ধারণা, দাঁড়াশ সাপের কোমরে বা লেজে বিষাক্ত কাটা আছে। সেই কাটা দিয়ে আঘাত করলে মানুষ মারা যায় এবং দাঁড়াশ সাপ রাতে গাভির দুধ চুষে খায়। অনেকে এটাও মনে করে যে, সাপটির শুধু মুখে নয় লেজেও বিষ আছে। মুখের পরিবর্তে লেজ দিয়ে আঘাত করলে ওই আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি ধীরে ধীরে পচে যাবে। কিন্তু এর সবই ভুল ধারণা। বাস্তবে সাপটি খুব নিরীহ।

দাঁড়াশ সাপের কোমর, লেজসহ সারা শরীরের কোথাও এমন কোনো কাটা নেই। এ ছাড়া দাঁড়াশ সাপের গাভির স্তন থেকে দুধ চুষে খাওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। এই সাপের জিহ্বা বিভক্ত থাকে। যার ফলে এই সাপ কিছুই চুষে খেতে পারে না। এদের অন্যতম প্রধান ও পছন্দের খাবার হলো ইঁদুর। তাই এরা ফসলি জমির আশপাশে থাকে এবং ফসলের জন্য ক্ষতিকারক ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে।

দাঁড়াশ সাপ যে জমিতে থাকে, তার আশপাশে প্রায় ৩ একর এলাকায় ইঁদুর শিকার করে। ফলে ইঁদুরের কারণে যে ফসলহানি ঘটে তার থেকে রক্ষা মেলে। এই সাপগুলো লম্বায় সাধারণত ২-৩ মিটার হয়। এদের দেহের রং হালকা বাদামি বা হলুদ বাদামি কিংবা জলপাই বাদামি হয়ে থাকে। মাথায় সাধারণত কোনো ফণা থাকে না এবং মাথা গোখরো সাপের তুলনায় বেশ সরু।

দাঁড়াশ সাপ গাছ বেয়ে উঠতে দক্ষ। এরা সাঁতার কাটতে, ডুব দিতে এবং দ্রুত ছুটতে ছুটতে পারে। এই প্রজাতির সাপ প্রায় ডজন খানিক আঠালো ডিম পাড়ে এবং দুই মাসের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ আছে। যার মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সাপ নির্বিষ অর্থাৎ বিষমুক্ত। তবুও সাপ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের অযাচিত ভয় ও অজ্ঞতার কারণেই প্রাণঘাতী মনে করে মেরে ফেলি।

সম্প্রীতি দেশ সাপ আতঙ্কে কাঁপছে। প্রায় বিলুপ্ত হয়ে আসা এক প্রজাতির বিষাক্ত সাপ রাসেলস ভাইপার তথা চন্দ্রবোড়া। বর্তমানে সাপটির উপদ্রব বেশ বেড়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের অনেক জেলায় সাপটির দেখা মেলেছে। সাপটির কামড়ে মৃত্যুর সংবাদও পাওয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বিষাক্ত সাপের উৎপাত বেড়েছে। এ ছাড়া খাদ্য সংকটের কারণে এ সাপ লোকালয়ে চলে আসছে।

এদিকে দেশের মানুষের আতঙ্কে দিন কাটছে। আবার কেউ কেউ নির্বিচারে সাপ নিধনের যুদ্ধে মেতে উঠেছে। আমরা অনেকেই জানি না যে সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসেলস ভাইপারেরও পছন্দের খাবার ইঁদুর। ফলে এই রাসেলস ভাইপারকেও ফসলি জমিতে দেখা যেতে পারে।
নির্বিচারে সাপ নিধন বন্ধ করতে হবে। আসুন সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হই এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করি।

এস.এম.রাহমান
শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম কলেজ
ঠিকানা: কলেজ রোড, চকবাজার, চট্টগ্রাম