‘বিজয়’ শব্দটি তিনটি অক্ষরে হলেও, শব্দটির পেছনে কত সংগ্রাম, কত ত্যাগ-তিতিক্ষা, কত বেদনা, কত প্রিয়জনের জীবন উৎসর্গ লুকায়িত, তা কেবল উপলব্ধি করার বিষয়। মাঝেমধ্যে আমার কল্পনার রাজ্যে আমি ভাবী, আমি যদি মুক্তিযোদ্ধা হতাম আর নিয়াজির আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় স্বচক্ষে দেখতাম; কিংবা শহীদ হয়ে বাংলার মাটি–পানি ও বাতাসের সঙ্গে মিশে যদি জন্মভূমির শ্রেষ্ঠ সন্তান হতাম। তখন আমি এই দুনিয়ার স্বর্গতুল্য প্রশান্তি অনুভব করতাম অথবা আমার স্বজনেরা নিজেদের ধন্য মনে করত নিজ পরিবারের এক সদস্যের আত্মত্যাগের কারণে।
সে সুযোগ বিধাতা না দিলেও ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আবেশে সৃষ্ট তারুণ্যশক্তি সুপ্ত লুকিয়ে থাকা দেশপ্রেমকে আন্দোলিত করে। মুক্তিযোদ্ধারা নানান বয়সের হলেও তারুণ্যের শক্তিতে সবার এক বিন্দুতে সমাগম আর স্বদেশপ্রেমের শক্তির মাধ্যমে বিজয়ের পতাকা বহনকারী হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা আমরা শিক্ষা নিতে পারি। এটাই জীবনের সার্থকতা। আর এই সার্থকতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ–জাতি আজও তাঁদের মনে রাখছে, মনে রাখবে অনন্তকাল। বিজয়ের আবেশ তাঁদের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বহমান হয়, আন্দোলিত হয়। বিজয় দিবসে সব শহীদদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি রইল।
আমরা অনাগত উত্তরসূরিদের জন্য রেখে যেতে পারি এক নতুন পৃথিবী। যেমনি করে আমাদের পূর্বপুরুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা প্রকৃতিতে প্রাণভরে প্রশ্বাস নিতে পারছি, যার প্রতিটি সেকেন্ড একেকটি স্বস্তির উপন্যাস। এখন আমাদের তারুণ্যশক্তির জাগরণ ঘটাতে হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পেছনেই গল্পের দিকে তাকাতে হবে। সেই গল্পকে যে যত বেশি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারবে, সে তত বেশি সফলকাম হবে ও দিনশেষে বিজয়ের মুখ দেখবে।
মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য হয়নি নবীন প্রজন্মের। কিন্তু বিজয়ের আবেশ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। সেই আবেশ পাওয়া নবীন প্রজন্মের কাতারে বসে লিখে যাচ্ছি আজকের কবিতা। যে কবিতার শিরোনাম তারুণ্য দীপ্তি আর প্রতিটি অক্ষর নেওয়া হয়েছে শহীদের স্বদেশপ্রেমের জাগ্রত তারুণ্যের শক্তি থেকে। আর কবি হলাম আমরা সব নবীন প্রজন্ম। আর ১৬ ডিসেম্বর এই কবিতার জন্ম হয়। কেননা যখনই বিজয়ের মাস আসে তখন দেহ-মন-প্রাণে এক নব স্বদেশপ্রেম ও তারুণ্য জোয়ার আসে আর সেই জোয়ার খোরাক জোগায় তারুণ্যশক্তির। উৎসাহ দেয় নতুন কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করার। আর এই তারুণ্যশক্তির জোয়ার পৃথিবীর সব অন্যায়–অবিচারকে এমনভাবে আছাড় মারতে পারে, যার প্রভাবে এই অন্যায়–অবিচার ও দুর্নীতি দূর করা সম্ভব। আর প্রাপ্ত সুফল ভোগ করবে প্রতিটি জনগণ।
আমরা অনাগত উত্তরসূরিদের জন্য রেখে যেতে পারি এক নতুন পৃথিবী। যেমনি করে আমাদের পূর্বপুরুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা প্রকৃতিতে প্রাণভরে প্রশ্বাস নিতে পারছি, যার প্রতিটি সেকেন্ড একেকটি স্বস্তির উপন্যাস। এখন আমাদের তারুণ্যশক্তির জাগরণ ঘটাতে হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পেছনেই গল্পের দিকে তাকাতে হবে। সেই গল্পকে যে যত বেশি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারবে, সে তত বেশি সফলকাম হবে ও দিনশেষে বিজয়ের মুখ দেখবে। আমরা তো সেই জাতিরই উত্তরসূরি। আমরা সেই চেতনার অংশ। আমাদের রক্তে মিশে আছে সেই শহীদদের, সেই গাজিদের বীরত্ব সাফল্যগাথার গল্পে।
এই তারুণ্য দীপ্তির আন্দোলন হবে সব অন্যায়–দুর্নীতি ও দুঃখ–কষ্টের বিরুদ্ধে। সমাজে কত অন্যায়–অবিচার, কত কুসংস্কারে নিমগ্ন আছে জাতি। নিপীড়িত ও অসহায় মানুষের কষ্ট ও দুর্দশার কথা এখনো আমাদের কানে কি পৌঁছায় না? ভাবতে অবাক লাগে আমরা কি সেই মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি? আমরা কেন সমাজের খবর রাখি না, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই না? তাহলে আমাদের মাঝে কিসের অভাব? কেন এই স্বাধীন দেশে দুঃখ-দুর্দশা ও অন্যায়–অবিচার? কেন আমাদের চেতনাকে আমরা সীমাবদ্ধ রেখেছি। শুধুমাত্র বিজয় দিবসে নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সাফল্য চেতনা সারা বছর আমাদের আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে। তারুণ্য দীপ্তিকে ছড়িয়ে দিতে হবে নবীন প্রজন্মের শিরা–উপশিরায়। প্রতিটি নিশ্বাস-প্রশ্বাস যেন বিজয় আবেশে তারুণ্য দীপ্তিতে উচ্চারিত হয় সেই মূলমন্ত্র ‘জয় বাংলা।’
শেখ সায়মন পারভেজ হিমেল
শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়