>আজ ১২ সেপ্টেম্বর বায়ান্নর ভাষাসংগ্রামী ও লেখক আহমদ রফিকের ৯০তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতি ও চলমান ঘটনাবলি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতা পাঠকের কাছে তুলে ধরতেই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
প্রথম আলো:প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। যে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আপনারা জয়ী হয়েছিলেন, সালাম-বরকতেরা জীবন দিয়েছিলেন, সেই ভাষার এখনকার অবস্থা কী?
আহমদ রফিক: এ কথা ঠিক যে ভাষা আন্দোলনে আমরা জয় চেয়েছিলাম, জয়ী হয়েছিলাম। সেই ভাষিক জাতীয়তার পথ ধরে একাত্তরে স্বাধীনতাও অর্জিত হয়েছে। আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে: ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।’ কিন্তু জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা প্রচলিত হয়নি, যেমন উচ্চশিক্ষায়, উচ্চ আদালতে। তা ছাড়া, সমাজের উচ্চ স্তরে-মধ্য স্তরে ইংরেজি-বাংলার দো-আঁশলা ব্যবহার ‘সর্বস্তরে বাংলা চালু’ করার উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছে। প্রতিদিন আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করে চলছি।
প্রথম আলো: তাহলে কি বলব আপনাদের সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে?
আহমদ রফিক: একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিলেও এর নেতৃত্বে ও সহযোগী হিসেবে ছিল মধ্যবিত্ত, ব্যবসায়ী ও এলিট শ্রেণি। স্বাধীন বাংলাদেশ তাদের শ্রেণিস্বার্থই পূরণ করেছে বেশি। তারা রাজভাষা ইংরেজির শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য যেমন বর্জন করার কষ্ট স্বীকার করতে চায়নি, তেমনি নিম্নবর্গীয়দের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষায় আগ্রহী হয়নি। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও সব নাগরিককে সাক্ষরজ্ঞান করে তোলার কোনো কার্যকর কর্মসূচিও নেওয়া হয়নি। সদিচ্ছার অভাবেই ভাষা ও শিক্ষার এ বেহাল অবস্থা
প্রথম আলো: রাজনীতি কি সঠিক পথে চলছে? না চললে এ জন্য কাদের দায়ী করবেন?
আহমদ রফিক: কথিত উন্নয়নকে গ্রাস করছে সামাজিক-রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও অবক্ষয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ঘাটতি, গুম-খুন-সন্ত্রাস, দুর্নীতির মতো বহুবিধ ঘটনা। বায়ান্ন থেকে একাত্তর অবধি সামাজিক সহমর্মিতার যে দৃশ্যগুলো দেখেছি, বর্তমানে তার অনুপস্থিতি বেদনাদায়ক। হত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা বাড়লেও এর প্রতিকারে সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। বিচার ও শাস্তির ঘাটতিও অপরাধ বৃদ্ধির বড় কারণ। রাজপথে-সড়কে-মহাসড়কে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু, যা প্রায়ই হত্যাকাণ্ডের তুল্য, পরিবহন খাতের চরম নৈরাজ্য অনেক হৃদয়স্পর্শী মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দিয়ে চলেছে।
প্রথম আলো: এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আহমদ রফিক: সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিকারের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয় আন্দোলনের পরও প্রতিদিন বেপরোয়া বাস চালনায় পথে রক্ত ঝরছে, মৃত্যু ঘটছে নরনারী, শিশুর। কিন্তু এ নিয়ে সমাজ ও প্রশাসনে দুশ্চিন্তা আছে বলে মনে হয় না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত নিরাপত্তার দায় যে সরকারের, সে সম্বন্ধেও সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে।
কেবল সড়কেই নৈরাজ্য নয়। চলছে ভূমি দখল, নদী দখল, খাল-বিল দখল, দেদার চাঁদাবাজি, সামাজিক-রাজনৈতিক সন্ত্রাস। তা ছাড়া, পেশিশক্তি, অর্থশক্তির দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এসবের বিরুদ্ধে টেকসই দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সমাজের কাঠামোই একসময় ভেঙে পড়বে। সুশাসন, অপরাধের বিরুদ্ধে পক্ষপাতহীন কঠোর অবস্থান, সমাজে মানবিক ও গণতান্ত্রিক চেতনার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তি ও সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় হতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, পাকিস্তান আমলে সুস্থ সংস্কৃতির হাত ধরেই রাজনীতি সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছিল। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চেও নবীন শক্তির উত্থান ঘটেছিল।
প্রথম আলো: আপনার গবেষণার একটি বড় অংশ পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ। পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চাও বেড়েছে। কিন্তু তাঁর সাহিত্য ও জীবনদর্শন সমাজে আদৌ প্রভাব ফেলেছে কি?
আহমদ রফিক: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার গবেষণার মূল কারণ ছিল পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চার ঘাটতি, অবহেলাও বলা যায়। পাকিস্তান আমলে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি রবীন্দ্রবিরোধিতায় নেমেছিল। বাংলাদেশ আমলে সরাসরি বিরোধিতা নেই। তবে উদাসীনতা আছে। রবীন্দ্রচর্চার চেয়ে আনুষ্ঠানিকতা প্রাধান্য পাচ্ছে। রবীন্দ্রসংগীতের অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের উপচে পড়া ভিড় আছে, রবীন্দ্রসংগীত চর্চায় অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানও সক্রিয়; কিন্তু রবীন্দ্র-সাহিত্যের মর্মবস্তু, তাঁর শিক্ষাদর্শন, জীবনদর্শন, বিশ্বজনীন চেতনার চর্চা তেমন ছিল না। এই ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যেই আমরা রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্ট গড়ে তুলি। এক দশক সক্রিয় ছিল সংগঠনটি। এমনকি দুই বঙ্গের রবীন্দ্রানুরাগীদের নিয়ে একাধিকবার রবীন্দ্র-সাহিত্য সম্মেলন ও সেমিনার করেছি। কিন্তু আর্থিক কারণে সংগঠনটি এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। আমাদের লক্ষ্য ছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জনমানসের আত্মীয়তা গড়ে তোলা, শিক্ষিত শ্রেণিতে রবীন্দ্রচেতনা ও রবীন্দ্রভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি। প্রথমটি একেবারেই হয়নি, দ্বিতীয়টি আংশিক হয়েছে। তবে আমরা উৎসাহিত হয়েছি গত এক দশকে একাধিক রবীন্দ্রচর্চা সংগঠনে তরুণ-তরুণীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখে। তারপরও বলব, এ দেশের শিক্ষিত সমাজ এখনো রবীন্দ্রদর্শন থেকে অনেকটা দূরে, রবীন্দ্র-সংস্কৃতির সামাজিক আলোড়ন দেখা যায় একমাত্র গানে, কদাচিৎ মঞ্চনাটকে।
প্রথম আলো: সব আন্দোলন-সংগ্রামে তরুণেরা অগ্রণী ভূমিকা রেখে থাকে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনেও সেটি প্রমাণিত হলো। এ থেকে আমরা কী শিক্ষা পেলাম?
আহমদ রফিক: ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলন ও ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলন আমাদের শিক্ষিত শ্রেণি, নাগরিক সমাজ ও শাসক শ্রেণিকে বুঝিয়ে দিয়েছে জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধানে তারা কতটা উদাসীন। তারুণ্য বরাবর এ দেশে সমাজ ও রাজনীতিকে পথ দেখিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেখাবে, এমনই আমার বিশ্বাস। তারুণ্যের পেছনে জনশক্তির সক্রিয় সমর্থন থাকলেই সমাজ ও শাসনব্যবস্থায় তা আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনবে।
প্রথম আলো: চিকিৎসাবিজ্ঞানে পাস করে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেন না কেন?
আহমদ রফিক: ভাষা আন্দোলন থেকে তৎকালীন প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ার কারণে ১৯৫৪-তে আমার ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয়। সরকারি রোষের কারণেই জীবিকা পরিবর্তন করতে হয়। এ নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই।
প্রথম আলো: একসময় বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়েছিলেন। পরে রাজনীতি ছাড়লেন কেন?
আহমদ রফিক: শিক্ষাজীবন শেষে দুটো বিষয়ের মধ্যে একটি আমাকে বেছে নিতে হয়—সার্বক্ষণিক রাজনীতি অথবা সাহিত্যকর্ম। আমি ১৯৫৮ সালে দ্বিতীয়টি বেছে নিই। অন্য কারণেও দলীয় রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারাই। তাই বলে বাম আদর্শকে ত্যাগ করিনি।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে বাম রাজনীতি ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী?
আহমদ রফিক: বাম রাজনীতিতে যেমন সুদক্ষ, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাব ছিল, তেমনি মতাদর্শগত বিভ্রান্তি নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে ত্রিধাবিভক্ত উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে। বাংলাদেশ তা থেকে ব্যতিক্রম নয়।
প্রথম আলো: দেশভাগ নিয়ে বই লিখেছেন। আপনার কি মনে হয় দেশভাগ এড়ানো যেত?
আহমদ রফিক: হ্যাঁ, আমি মনে করি দেশভাগ অনিবার্য ছিল না। কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ রাজনীতির বিভ্রান্তিকর সংঘাত এবং নেপথ্যে ঔপনিবেশিক শাসকের কূটচাল দেশভাগ অনিবার্য করে তোলে। ১৯৪৭–এর মধ্য আগস্টে রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে দেশভাগ ঘটে।
প্রথম আলো: ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার একটি লেখায় বলেছিলেন, দেশভাগে উপমহাদেশের মুসলমানরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আপনি কি একমত?
আহমদ রফিক: রাষ্ট্রীয় আদর্শ বিচারে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত—কম আর বেশি।
প্রথম আলো: আপনারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তারপরও তাদের উত্থান দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ কি আপনাদের আন্দোলন-সংগ্রাম ব্যর্থ হয়েছে?
আহমদ রফিক: হ্যাঁ, একদিক থেকে ব্যর্থ তো বটেই—সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের উত্থান আমরা রোধ করতে পারিনি। সমাজে, রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে পারিনি। তারপরও আমি বলব আন্দোলন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি। ইতিহাসের ধারায় মানুষ আশাকে জিইয়ে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। ভবিষ্যতে শুভশক্তির জয় হবেই।
প্রথম আলো: মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বেশি বাধা আসে কার কাছ থেকে, রাষ্ট্র না মৌলবাদী গোষ্ঠী?
আহমদ রফিক: দুই পক্ষ থেকেই আসে। তবে সার্বিক বিচারে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়ই বেশি। মৌলবাদী গোষ্ঠীকে নিবৃত্ত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হয়।
প্রথম আলো: দেশের বর্তমান অবস্থাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এক পক্ষ বলছে, ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, অপর পক্ষের দাবি, গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রগুলো আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
আহমদ রফিক: অর্থনীতিবিদদের বিচার-ব্যাখ্যার নিরিখে অর্থনৈতিক খাতে দেশের অগ্রগতি হয়েছে, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, বাড়ছে ধনী মানুষের সংখ্যাও। কিন্তু শ্রেণিগত বৈষম্যও বেড়েছে অনেক বেশি। অন্যদিকে মননশীলতা, মানবিক চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংকুচিত হচ্ছে। এই বিপরীতমুখী ধারা কোনো দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
প্রথম আলো: প্রথম জীবনে কবিতা লিখেছেন, গল্প লিখেছেন। কিন্তু পরে প্রবন্ধের দিকে ঝুঁকলেন কেন?
আহমদ রফিক: কবিতার চেয়ে প্রবন্ধে রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য রাখা যায় অর্থাৎ যোগাযোগ সহজতর। তাই প্রবন্ধ অধিক প্রাধান্য পেয়েছে। তা ছাড়া, সম্পাদকদের তাগিদও ছিল। বলা যায়, সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজস্ব মতামত প্রকাশের জন্য মননশীল মাধ্যমটিকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমি কবি-লেখক-শিল্পী-সাংবাদিক সবার সামাজিক দায়বদ্ধতায় বিশ্বাসী, এমনকি সাংস্কৃতিককর্মী ও অন্য পেশার মানুষেরও।
প্রথম আলো: পাকিস্তান আমলে যে মনন চর্চার উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা নাগরিক বের করেছিলেন, এখন তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে?
আহমদ রফিক: সাহিত্য পত্রিকা নাগরিক প্রকাশের (১৯৬৪-৭০) উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বসাহিত্যযোগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গীয় পাঠকসমাজে প্রগতিবাদী আধুনিকতার প্রকাশ ঘটানো, সাহিত্যিক বিতর্কে গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতার বিস্তার ঘটানো। আধুনিক বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তরকালে শিল্পোদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ততার কারণে অনেকের অনুরোধ সত্ত্বেও নাগরিক প্রকাশ সম্ভব হয়নি। তবে এ ধরনের পত্রিকার প্রয়োজন এখনো আছে বলে মনে করি।
প্রথম আলো: এ দেশে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন হয়েছিল বিশ শতকের গোড়ার দিকে। সে সময় বুদ্ধির মুক্তির বিপক্ষ শক্তি যেভাবে প্রবল ছিল, এখনো তারা প্রবল। তাহলে চিন্তাচর্চায় আমরা কতটা এগোলাম?
আহমদ রফিক: বিশ শতকের শুরুতে বাঙালি মুসলমান সমাজে যুক্তিবাদী চিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ তৎকালীন শিক্ষা ও সামাজিক চেতনার পশ্চাৎপদতা। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিস্তার ঘটেছিল। অবশ্য নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছিল দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষা ও আর্থসামাজিক বৈষম্য। সংক্ষিপ্ত পথে পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন সামাজিক মননশীলতা ও যুক্তিবাদী চেতনার চর্চায় কিছুটা হলেও বাধা এবং ধর্মীয় রক্ষণশীলতার প্রাধান্য সৃষ্টি করেছে। তাই শিক্ষা-জ্ঞান-যুক্তিবাদী মুক্তচিন্তার চর্চার প্রয়োজন এখনো রয়েছে, কিছুটা বেশি মাত্রায় রয়েছে।
প্রথম আলো: পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের লেখনী দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ আমলে পারলেন না কেন?
আহমদ রফিক: প্রশ্নটি চমকপ্রদ। পাকিস্তান আমলে শ্রেণিস্বার্থের প্রয়োজনে সর্বমাত্রিক প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীরা এখন আয়েশে আরামে আছেন। তাই তাঁরা যুক্তিবাদী-মুক্তবুদ্ধির সামাজিক আন্দোলনের ঝুঁকি কাঁধে নিতে চান না। এ ছাড়া স্বার্থহানিরও আশঙ্কা রয়েছে।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
আহমদ রফিক: আপনাকেও ধন্যবাদ।