বিশেষ সাক্ষাৎকার: মনজুর আহমেদ
ডিজিটালে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে অনেক কিছু করা উচিত
শিক্ষা নিয়েই আজীবন কাজ করে এসেছেন ড. মনজুর আহমেদ। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের সহসভাপতি। কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান হালচাল এবং নতুন চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক শরিফুজ্জামান।
প্রশ্ন :
এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত কি না, এই প্রশ্নে দুটি পরস্পরবিরোধী মত আছে। এক পক্ষ মনে করছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আরেক পক্ষ বলছে, লেখাপড়ার আগে জীবন। আপনার কী মনে হচ্ছে?
মনজুর আহমেদ: কোভিড পরিস্থিতির গ্রহণযোগ্য উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে না। কারণ, করোনাভাইরাস কবে, কীভাবে শেষ হবে—সে বিষয়ে আমরা কেউই নিশ্চিত নই। বিশ্বের বহু দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেও আবার বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, কিছু বন্ধ। ওদের সুবিধা হচ্ছে, স্থানীয়ভাবে ওরা সেগুলো খোলার বা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমাদের এখানে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব নয়। তবে ডিসেম্বর নাগাদ করোনাভাইরাসের টিকা আসবে এবং করোনার প্রকোপ কমবে, এমন একটি আশাবাদ তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন :
তবে এটা সত্য যে শিক্ষার্থীরা বড় ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে কী করণীয়?
মনজুর আহমেদ: বস্তুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেই যে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে ব্যাপক পরিমাণে শিখে ফেলে, এমন নয়। কিছু না শেখা বা কম শেখার সমস্যা সব সময়ই ছিল। বলতে পারেন, এ সময়ে সেটা প্রকট হয়েছে।
প্রশ্ন :
এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাবর্ষের কী হবে? মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে যাওয়া মানে তো শিক্ষাবর্ষের আর কিছুই বাকি থাকল না। এই শূন্যতা পূরণ হবে কীভাবে?
মনজুর আহমেদ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখনই খুলুক, বড় একটা চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। সে চ্যালেঞ্জ হলো স্বাস্থ্য–সুরক্ষা বজায় রেখে লেখাপড়া শেষ করার চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাবর্ষ তো একটি প্রশাসনিক বিষয়। তাতে নড়চড় হলে ক্ষতি তেমন একটা হবে না। তবে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগের রুটিনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিতে হবে এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। সব বিষয়কেই যে সমান গুরুত্ব দিতে হবে, তা নয়। যেমন প্রাথমিকে গণিত ও বাংলা, মাধ্যমিকে গণিত, ইংরেজি, বাংলা ও বিজ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে এক শ্রেণির সঙ্গে আরেক শ্রেণির পাঠ্য সম্পর্কিত। সেগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রশ্ন :
করোনার প্রকোপ কমলে কি একযোগে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বতোভাবে খুলে দেওয়া ঠিক হবে?
মনজুর আহমেদ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও এক দিনে সব শ্রেণির ক্লাস নেওয়া ঠিক হবে না। এক দিন হয়তো প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি, আরেক দিন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি—এভাবে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সাবান ও পানি রেখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং শরীরের তাপমাত্রা দেখার সুযোগ থাকতে হবে। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।
প্রশ্ন :
এসবের খরচ কোত্থেকে আসবে? অনেক প্রতিষ্ঠানেরই তো আর্থিক সক্ষমতা নেই।
মনজুর আহমেদ: কিছু খরচের ব্যাপার তো আছেই। সব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংগতিও এক নয়। তবে কাজটি কঠিনও নয়। প্রাথমিকের এ বছরের বাজেট ২৫ হাজার কোটি টাকা। মাধ্যমিকেরও বড় বাজেট আছে। এত টাকা তো এ অর্থবছরে খরচই হবে না। সে সুযোগই নেই। আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চেয়ে জীবন নিশ্চয়ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিবেচনায় বাজেটের বেঁচে যাওয়া অর্থ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ করা যেতে পারে। প্রতিটি উপজেলা ধরে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা যায়। সেই গ্রুপে
জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় শিক্ষা কার্যালয়, বেসরকারি সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা থাকতে পারেন। সব স্তরের মানুষ যুক্ত হলে সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। শিক্ষাব্যবস্থা ঢাকা থেকে পরিচালিত হওয়ায় স্থানীয় মাত্রা যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ততটা পায় না। শিক্ষার বাজেট আসবে স্থানীয় পর্যায় থেকে। বাজেট ব্যবস্থাপনা হবে স্থানীয় পর্যায়ে। এখন যেটা হচ্ছে, তা হলো রাজনৈতিক প্রভাবে স্থানীয় পর্যায়ে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা আর ভবন নির্মাণ।
প্রশ্ন :
অনলাইনে পাঠদানের ধারণা আমাদের দেশে নতুন। কোভিডকালে এটি শুরু হয়েছে। এটি কেমন চলছে? এর বাস্তবতা ও উপযোগিতা কতটুকু?
মনজুর আহমেদ: অনলাইনে কিছুটা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে, তা–ও বিশেষ করে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বেতার-টিভির মাধ্যমে যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা মন্দের ভালো বলা যায়। তবে এর ফলে শিক্ষার্থীরা খুব একটা উপকৃত হচ্ছে তা–ও নয়, আবার বড় অংশের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, যে পরিবারে টেলিভিশন নেই, তাদের পক্ষে তো এ শিক্ষা পাওয়া কঠিন। আবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষার সীমাবদ্ধতা অনেক। ডিজিটাল বাংলাদেশ তো এখনো পুরোপুরি হয়নি। ইন্টারনেট সর্বত্র পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও নেটওয়ার্ক দুর্বল। সবার কাছে স্মার্টফোন নেই। আবার স্মার্টফোন থাকলেও ডেটা কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের। তাই সব মিলিয়ে অনলাইন শিক্ষার নামে ‘ঠেকার কাজ’ চলছে। বলা যায় ‘মন্দের ভালো’। তবে কিছু শিক্ষার্থী অন্তত লেখাপড়ায় যুক্ত থাকছে, যদিও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এর বাইরে আছে। এই বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার, মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, মুঠোফোন কোম্পানি, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানসহ অনেকেরই অনেক কিছু করা উচিত ছিল। এখন প্রকৃত অনলাইনে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে, যা কাজ করবে শ্রেণিকক্ষের পরিপূরক হিসেবে।
প্রশ্ন :
স্কুলে শিক্ষা তো শুধু পাঠ্যবই নয়। শৃঙ্খলাচর্চা, সহযোগিতা, দলবদ্ধ কাজসহ অনেকগুলো বিষয় শেখার আছে। সেই শূন্যতা পূরণ হবে কীভাবে?
মনজুর আহমেদ: সমবেত শিক্ষা তো শিক্ষার অপরিহার্য অংশ। শিক্ষার্থীর আচার-ব্যবহার, মূল্যবোধ, সহনশীলতা, সহমর্মিতাসহ অনেক কিছুই এর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই একটি বছরে এসব কর্মকাণ্ড অনুপস্থিত হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে তো ক্লাস ও পরীক্ষার ধুম পড়ে যাবে। সমবেত শিক্ষা কার্যক্রমও আমাদের এখানে খুব দুর্বল। কোভিড পরিস্থিতিতে সেটি শূন্য হয়ে পড়েছে। তাই এ শূন্যতা পূরণে শিক্ষকদের ভূমিকাই মুখ্য। তাঁরা যেন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শুধু পড়াশোনাই প্রত্যাশা না করেন। সহশিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যায়, ওই শিক্ষককে নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার চাপ কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঠিক করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা ও আন্তরিকতা মুখ্য।
প্রশ্ন :
আমাদের এখানে সাধারণভাবে শিক্ষকদের অবস্থা কি সন্তুষ্ট হওয়ার মতো?
মনজুর আহমেদ: শিক্ষকদের নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করা দরকার। চিকিৎসক ও প্রকৌশলী তৈরি করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে, কিন্তু শিক্ষক তৈরির ন্যূনতম প্রস্তুতি নেই। অনেকেই শিক্ষক হন ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোনো উপায়ান্তর না দেখে। এরপর কেউ কেউ প্রশিক্ষণ পান, অনেকেই পান না। শিক্ষকতা পেশায় প্রকৃত মেধাবীরা আসছে না। এই পেশায় আকৃষ্ট করার মতো বেতন ও সুযোগ-সুবিধা নেই।
প্রশ্ন :
বলা হচ্ছে, আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতি সংশোধন করা হবে। গত এক দশকে যা বাস্তবায়ন করা হয়নি, সেটি সংশোধনের যৌক্তিকতা কতটা? কিংবা সংশোধন করা হলেও সেটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কতটুকু?
মনজুর আহমেদ: এক দশক আগে যে শিক্ষানীতিটি করা হয়েছিল, সেটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ছিল। তার বাস্তবায়ন না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। গত ১০ বছরে শিক্ষায় অনেক কাজ হয়েছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি ধরে তেমন কিছু হয়নি। নীতি ধরে এগোতে পারলে অনেক উপকার হতো। সেই নীতি এখন পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে কিছু বিষয় যুক্ত হতে পারে। তবে সেটি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা কোথায়, জানি না। আগের শিক্ষানীতিতে ছিল স্থায়ী একটি শিক্ষা কমিশন হবে। ধরুন, কমিশন হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কমিশনে কারা আসবে, তাদের কাজ কী হবে এবং তা সরকারের কাছে কতটা গুরুত্ব পাবে।
প্রশ্ন :
শিক্ষানীতি কার্যকর হলো না কেন? অর্থের অভাব নাকি সদিচ্ছার?
মনজুর আহমেদ: শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণ সদিচ্ছার অভাব, অর্থের অভাব নয়। আর এটি বাস্তবায়িত না হওয়ার দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের। তাঁদের অনেকেরই শিক্ষা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ছিল বা আছে বলে আমার মনে হয় না। ৫০ বছর আগে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো আমাদের চেয়ে ভালো ছিল না। তারা এখন অনেক এগিয়ে গেছে। তাদের সেসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। প্রথমে আমাদের মানতে হবে, আমরা পিছিয়ে আছি। আর প্রবল সদিচ্ছা থাকতে হবে।
প্রশ্ন :
শিক্ষানীতি কার্যকর করার জন্য শিক্ষা আইনের দরকার ছিল। সে আইনও তো এক দশকে করা যায়নি।
মনজুর আহমেদ: শিক্ষা আইন হয়নি বলে শিক্ষানীতি কার্যকর হয়নি, তা আমি বলব না। তবে কিছু ক্ষেত্রে আইনটির দরকার ছিল। শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনি কাঠামো দরকার। আবার নোট-গাইড বা প্র্যাকটিস বুক অথবা কোচিং সেন্টার—এসব তো আইন করে বন্ধ করা যাবে না। আগে শ্রেণিকক্ষে লেখাপড়া নিশ্চিত করতে হবে। নইলে অব্যবস্থা চলবেই। পরীক্ষাগুলোও এমনভাবে রাখা হয়েছে যে কোচিং বা গাইডে উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা ঢুকিয়ে অসম্ভব সর্বনাশ করা হয়েছে। লেখাপড়ার ধরন ও পরীক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তন না হলে কোচিং বা গাইডের দৌরাত্ম্য থাকবেই। সর্বোচ্চ আদালতের রায় নোট-গাইডের বিরুদ্ধে। কোচিং সেন্টার বন্ধেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ ছিল এবং আছে। কিন্তু কিচ্ছু আসে বা যায় না। কারণ, পরীক্ষাপদ্ধতির কারণে সেসবের চাহিদা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়ে আছে।
প্রশ্ন :
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ শিক্ষার কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে আপনার পর্যালোচনা কী?
মনজুর আহমেদ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙে দুই ভাগ করার ফলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে না পারার কারণ দুই মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলি বা প্রশাসনিক জটিলতা। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য আরেকটি মন্ত্রণালয় পৃথিবীর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। আমাদের দেশে এই অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়। এ ছাড়া শিক্ষার সবকিছুই এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক। শিক্ষককে বদলির জন্য ঢাকায় আসতে হয়। মন্ত্রণালয়ে বা অধিদপ্তরে যেতে হয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষাব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা ছিল। সেটি হয়নি; বরং কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বেড়েছে। কেউ ক্ষমতা বা দায়িত্ব ছাড়তে চায় না, কমাতেও চায় না। কারণ, এর সঙ্গে দুর্নীতির যোগসাজশ আছে। আমরা দেশ হিসেবে উন্নত হতে চাই। সেটা করতে হলে সবচেয়ে আগে শিক্ষাটা উন্নত করতে হবে। উন্নত দেশ মানে তো কেবলই অর্থনৈতিক অবস্থার বা অবকাঠামোগত উন্নতি নয়। সেটা করতে হলেও শিক্ষার মান ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সর্বজনীন করতে হবে। সে জন্য একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মনজুর আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।