আরব বসন্ত এখনো শেষ হয়নি: আমর আবদাল্লা
>মিসরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ড. আমর আবদাল্লা জাতিসংঘের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত ইউনিভার্সিটি অব পিসের ইমেরিটাস অধ্যাপক; ওয়াশিংটনভিত্তিক মুসলিম উইমেন লয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটসের (কারামান) কনফ্লিক্ট রেজল্যুশন-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ান লাইট ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের সেন্টার ফর তাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকটিভিজমের (সিটিএআরএ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নিতে তিনি সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি সামাজিক ও বৈশ্বিক পরিসরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সন্ত্রাস-সহিংসতা, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম।
প্রথম আলো: আপনি পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের অধ্যাপক, আবার এখানে যেমনটা দেখতে পাচ্ছি, একজন অ্যাকটিভিস্টও বটে।
আমর আবদাল্লা: প্র্যাকটিশনার বললেই ঠিক হয়।
প্রথম আলো: আচ্ছা। তাহলে আমরা জানতে চাইব, শান্তি ও সংঘর্ষের ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে আপনার প্র্যাকটিস, অর্থাৎ বাস্তবের প্রায়োগিক কর্মকাণ্ড
বর্ণনা করবেন?
আমর আবদাল্লা: আমি বলতে চাইব ক্ষমতায়নের কথা, সামর্থ্য সৃষ্টি করা, সামর্থ্য বাড়ানোর কথা। মানুষের মধ্যে, সাধারণের মানুষের মধ্যে সচেতনতা, জ্ঞান ও দক্ষতা সৃষ্টি করা। কী কী পন্থায় আরও ভালোভাবে, আরও কার্যকরভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের কাজগুলো করা যেতে পারে। কীভাবে নিজে শান্তিতে থাকা যায় এবং কীভাবে অন্যদের জীবনেও শান্তি আনতে সহযোগিতা করা যায়।
প্রথম আলো: অন্যদের বলতে আপনি কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রের কথা বলছেন, না সমাজ বা কমিউনিটির কথা বলছেন?
আমর আবদাল্লা: আমার একটা প্রধান ভাবনা হলো, দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুধু দেশে দেশে, আন্তর্জাতিক পরিসরেই নেই; একটা দেশের ভেতরেই সামাজিক পরিসরের বিভিন্ন স্তরে আছে। পাড়া-মহল্লায় বা কমিউনিটিতে, কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে, এমনকি ব্যক্তিতে ব্যক্তিতেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত কাজ করে। আমরা চাই মানুষের মধ্যে এমন সক্ষমতা বা দক্ষতা তৈরি করতে, যা দিয়ে তারা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে।
প্রথম আলো: আপনারা কীভাবে তা করেন?
আমর আবদাল্লা: মূলত প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে। কর্মশালাগুলোতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের বিভিন্ন কৌশল শেখানো হয়।
প্রথম আলো: আমরা যদি পৃথিবীর দিকে তাকাই, দেখি যে দেশে দেশে অশান্তি; কোথাও সরাসরি যুদ্ধ চলছে; কোথাও জাতিগোষ্ঠীগত নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ তো আছেই। তা ছাড়া, জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ ইত্যাদির নামে দ্বন্দ্ব-বিরোধ, উত্তেজনা বিরাজ করছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর আশা করা হয়েছিল পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হবে। কিন্তু তার উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। আপনার মন্তব্য?
আমর আবদাল্লা: আমার মন্তব্য হলো, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যে নতুন বিশ্বব্যবস্থা দেখা দিয়েছে, সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।
এক পরাশক্তির হেজিমনির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ার জায়গা বেড়ে গেছে। ধর্মের নামে সহিংস উগ্রপন্থা শক্তিশালী হয়েছে, গত ৩০ বছরে শ্বেতাঙ্গ উচ্চম্মন্যতা থেকে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি, এসবই এক পরাশক্তির আধিপত্যের প্রতিক্রিয়া। একক পরাশক্তি নিজের স্বার্থে পৃথিবী চালানোর চেষ্টা করছে, এই প্রক্রিয়ায় অনেক পক্ষের মনে হচ্ছে যে তারা ক্ষমতাহীন, অধিকারবঞ্চিত হয়ে পড়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের কালে যখন পৃথিবীতে দুই পরাশক্তি ছিল, তখন ক্ষমতার একটা ভারসাম্য ছিল; এখন সেই ভারসাম্য নেই।
প্রথম আলো: জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত, বর্ণগত ইত্যাদি নানা পরিচয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ বেড়েছে এবং বিভেদের রাজনীতিই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আমর আবদাল্লা: যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল, তখন তার বিভিন্ন প্রজাতন্ত্রের মানুষের জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিচয় চাপা পড়ে ছিল। সোভিয়েতের পতনের পর মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক শিবিরের দেশগুলোতে এই সব পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারা তাদের জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়। তবে আমার কাছে বড় প্রশ্নটা হলো, ধর্মের নামে সহিংস উগ্রপন্থার প্রসার ও বিস্তার।
প্রথম আলো: এর কারণ কী?
আমর আবদাল্লা: পৃথিবী যখন পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক—এই দুই শিবিরে বিভক্ত ছিল, তখন কে কোন শিবিরের সঙ্গে থাকবে, সেটাই ছিল প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এখন যখন আদর্শিক দিক থেকে সেই পরিস্থিতি আর নেই, তখন যেন একটা পেছনমুখী যাত্রা শুরু হয়েছে। এই যাত্রায় আদর্শিক শূন্যতার জায়গায় এসেছে ধর্মীয় মৌলবাদ ও উগ্রপন্থা। যারা এই আদর্শ অনুসরণ করতে চাইছে, তারা ভাবছে যে এভাবে তাদের অনেক অপূর্ণ আশা পূরণ হবে। কিন্তু এর ফলে পৃথিবীজুড়ে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম আলো: আপনার জন্ম মিসরে, অর্থাৎ আপনি একজন আরব। আমরা দেখছি, পুরো আরব দুনিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ ও সহিংসতা চলছে, প্রচুর
মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, দেশের ভেতরেই ঘরবাড়ি হারিয়েছে, স্থানচ্যুত হয়েছে। কীভাবে ও কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে?
আমর আবদাল্লা: অনেকগুলো কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে; অনেক কারণে এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকছে। এক নম্বর কারণ হলো, আরব দুনিয়ার তেল-গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বিদেশি শক্তিগুলোর লোভ এবং সেই লোভ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি-অর্থনীতিতে বড় শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ। তারা চায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে তাদেরই বশংবদ শাসকেরা যেন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে এবং তাদের ইচ্ছেমতো তেল-গ্যাস তারা পেতে পারে। বড় শক্তিগুলো তাদের পছন্দমতো শাসক পরিবর্তন করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তারা তেল-গ্যাস পাওয়া নিশ্চিত করতে সব সময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জারি রাখতে চেয়েছে, যাদের জনগণ ভোট দিয়ে সরাতে পারবে না।
প্রথম আলো: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে, স্নায়ুযুদ্ধের সময়ও কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে স্বৈরশাসকেরাই ছিলেন...
আমর আবদাল্লা: তবু তখন দুই পরাশক্তির কারণে একটা ভারসাম্য ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে আরও দুটো বড় ফ্যাক্টর আছে; একটা হলো ইসরায়েল, আরেকটা ইরান। অবশ্য আমি এ দুটো ফ্যাক্টরকে সমান্তরালভাবে দেখি না। আমি বলতে চাইছি, ইসরায়েলের অস্তিত্ব মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সমস্যার কারণ; অনেক বৈশ্বিক শক্তির কাছে ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি অবসেশনে পরিণত হয়েছে এবং সেটা আশপাশের অনেক দেশের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করেছে। তা ছাড়া, তেলসম্পদে ভরপুর একটা অঞ্চলে তারা ইরানকে দেখছে একটা অসুবিধাজনক শক্তি হিসেবে। একদিকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার নামে মদদ দেওয়া, অন্যদিকে ইরানকে চাপে রাখা, তাকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে না দেওয়া—এই দ্বিমুখী আচরণের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সমস্যা
সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম আলো: ইসলামি সন্ত্রাসবাদ বা সহিংস উগ্রপন্থা ভিত গেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যেই। এটা কি ওই অঞ্চলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি হয়েছে, না বাইরে থেকে সৃষ্টি
করা হয়েছে?
আমর আবদাল্লা: দুটোই। প্রথমত, মুসলিম দুনিয়ায় স্থানীয়ভাবে ধর্মীয় উগ্রপন্থী আন্দোলন বা সংগঠন গড়ে ওঠার সুযোগ ও সম্ভাবনা অনেক আগে থেকেই ছিল এবং আছে। এটা নতুন কিছু নয়। সমস্যা হলো, এই প্রবণতাকে বৈশ্বিক শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। যখন কোনো শক্তি দেখতে পায় যে কোনো একটা সহিংস গ্রুপের কর্মকাণ্ড তাদের স্বার্থের পক্ষে যাচ্ছে, তখন তারা ওই গ্রুপকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় তাদের বিরুদ্ধে ইসলামি আদর্শবাদী যোদ্ধাদের পশ্চিমা শক্তি সহযোগিতা করেছিল।
প্রথম আলো: মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটা অশান্তির বিষয় হলো ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার বিরোধ। এই বিরোধ কি মেটানো যায় না?
আমর আবদাল্লা: মেটানো যায়। আমি তো বলব, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ সমস্যাই মেটানো যায়, যদি ওই অঞ্চলে সব আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের অবসান ঘটানো যায়।
প্রথম আলো: কিন্তু বৈশ্বিক শক্তিগুলো তো সব সময়ই সারা দুনিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চেয়ে এসেছে এবং এটা তারা সব সময় করতে চাইবে...
আমর আবদাল্লা: হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, এটা বাস্তবতা।
প্রথম আলো: আরব দুনিয়ার মানুষ কেন নিজেদের মধ্যে শান্তি-সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে না? তারা কেন একে অপরকে হত্যা করছে? শিয়া-সুন্নি বিভেদে গোটা মধ্যপ্রাচ্য বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে, কেন?
আমর আবদাল্লা: এটা বড় সমস্যা বটে, তবে আমার মনে হয় এ সমস্যা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ভারত-পাকিস্তানসহ আরও অনেক দেশে আছে। আসলে শিয়া-সুন্নি বিরোধের শিকড় ইসলামের একদম গোড়ার দিকের ইতিহাস পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটা খুবই লজ্জার বিষয় যে আমরা এই বিরোধ মেটাতে পারছি না। তবে এ কথাও সত্য যে মুসলিম দুনিয়ার সর্বত্র শিয়া ও সুন্নিরা কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য নিয়েই যুগ যুগ ধরে মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করে এসেছে। আমি নিজে ইরাকে, লেবাননে এবং আরও কয়েকটা দেশে শিয়া ও সুন্নিদের দেখেছি, তারা খুব ভালোভাবে পাশাপাশি বাস করছে। তারা জানে যে তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে, কিন্তু তারা মেনে নিয়েছে যে এই পার্থক্য স্বাভাবিক। এটা নিয়ে সংঘাতের কিছু নেই। সংঘাত, সহিংসতা, রক্তপাত ইত্যাদি দেখা দেয় তখনই, যখন মতপার্থক্যটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সময়ে তা করা হয়েছে; কখনো আঞ্চলিক শক্তিগুলো করে, কখনো আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো করে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো যখন নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শিয়া-সুন্নি বিভেদকে ব্যবহার করে, তখন তা খুবই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথম আলো: তাহলে বাস্তবে কী দাঁড়াচ্ছে, আরব বিশ্বের মানুষ সব সময় বাইরের শক্তিগুলোর ভূরাজনৈতিক কারসাজির শিকারই থেকে যাচ্ছে? সেটা প্রতিরোধের জন্য কিছু করার সাধ্য তাদের নেই?
আমর আবদাল্লা: শুধু বাইরের শক্তিগুলোর কারসাজির শিকার নয়, নিজের দেশেও স্বৈরতান্ত্রিক শাসকদের দুঃশাসনের শিকার। কিন্তু এখন আমরা জনগণের জেগে ওঠার নানা উপাদান দেখতে শুরু করেছি। উদাহরণস্বরূপ আরব বসন্তের কথা বলা যেতে পারে।
প্রথম আলো: আরব বসন্ত তো সফল হয়নি।
আমর আবদাল্লা: আরব বসন্ত শেষ হয়ে যায়নি। না, আরব বসন্ত এখনো শেষ হয়নি। তার একটা প্রমাণ সুদানের আন্দোলন। কে ভাবতে পেরেছিল যে সুদানে এমন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ ধরে এ রকম পরিবর্তন আসবে? ইরাক আর লেবাননেও গণ-আন্দোলন শক্তিশালী হচ্ছে। অনেক লক্ষণ দেখে আমার মনে হচ্ছে, আরব বসন্তের শেষটা আমরা এখনো দেখিনি, সেটা এখনো আসেনি এবং আমি আশা করি, একটা সময়ে আমরা আরব বিশ্বে পরিবর্তন দেখতে পাব।
প্রথম আলো: একটা প্রশ্নের উত্তর পাইনি, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার বিরোধ কীভাবে দূর করা যেতে পারে?
আমর আবদাল্লা: এই বিরোধের অনেকগুলো পরত আছে। এর একটা উপাদান অবশ্যই শিয়া-সুন্নি বিভাজন; কিন্তু এই বিভাজন এমন তীব্র শত্রুতার উৎস নয়। মূল সমস্যা হলো, সৌদি আরব ও ইরান উভয় দেশের শাসকদের আচরণ এমন যে, এ দুটি দেশ প্রকৃত রাষ্ট্র নয়, প্রক্সি রাষ্ট্র। ইরান যতটা, তার থেকে অনেক বেশি সৌদি আরব। তারা নিজেদের জনগণের স্বার্থে চলে না, বাইরের রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থে পরিচালিত হয়। বাইরের রাষ্ট্রগুলো সৌদি আরবকে এমন ধারণা দিচ্ছে যে ইরান সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর অস্তিত্বের জন্য হুমকি। সৌদিরা তাদের সব শক্তি দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধতা করে চলেছে; নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ইরানও ফেরেশতা নয়; তারাও নিজেদের স্বার্থে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবাননে নিজেদের মিত্রদের দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে চলেছে। সৌদি আরব ও ইরান এই প্রতিযোগিতায় আটকে গেছে। এর পেছনে তাদের বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তারা নিজেরা যদি উপলব্ধি করতে না পারে যে এটা তাদের নিজেদের জন্য এবং গোটা অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে, তাহলে এই বিরোধের অবসান হওয়া কঠিন।
প্রথম আলো: বিশ্বজুড়ে শান্তি, সম্প্রীতি, মিলন, সহযোগিতা ইত্যাদির বিপরীত যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে আপনার কী মনে হয়, পৃথিবী কোন দিকে যাচ্ছে?
আমর আবদাল্লা: শঙ্কা হচ্ছে, পৃথিবীতে নানা সংকীর্ণ পরিচয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ-সংঘাত-সহিংসতা বাড়তে পারে। তবে আমার এটাও মনে হয় যে মানুষ হিসেবে আমাদের সর্বজনীন মঙ্গলের ধারণাও আছে, মানবিক মর্যাদার বোধ আছে। ফলে সংঘাত-সহিংসতা আরও কিছু কাল চললেও শেষ পর্যন্ত শান্তি ও মিলনের আকাঙ্ক্ষাই একসময় আবার জোরালো হয়ে উঠবে।
প্রথম আলো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমর আবদাল্লা: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।