২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিশেষ সাক্ষাৎকার: মহম্মদ সেলিম

বাংলাভাষী মুসলমানরা তৃণমূল ও বিজেপির খেলা ধরতে পারছে

কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী) বা সিপিআই (এম)–এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার রাজ্য সম্পাদক হিসেবে ২০২২ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন মহম্মদ সেলিম। দলটির পলিটব্যুরোরও সদস্য তিনি। দুবার লোকসভার সদস্য ছিলেন। তার আগে রাজ্যসভার সদস্য এবং মাঝে বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ভারতের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক–গবেষক আলতাফ পারভেজঅর্ক ভাদুড়ি

প্রশ্ন:

ভারতে নির্বাচন আসছে। অনেকের অনুমান বিজেপি বড় ব্যবধানে জিতবে। নরেন্দ্র মোদি আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। আপনাদের অনুমান কী?

মহম্মদ সেলিম: চারদিকে কিছু ‘অনুমান’ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো আরএসএসের জনসংযোগ কাজ। শোর তোলা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি আরেকবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। যেন তিনি অবতাররূপে হাজির হচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে এখন নির্বাচনী প্রচারণা দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও করতে হয়। সে কারণে বাংলাদেশেও হয়তো আপনাদের সে রকম অনুমান। গতবার তো তিনি নির্বাচনকালে প্রচারণায় বাংলাদেশেও যান। আমরা ওসব অনুমান সামনে রেখে রাজনীতি করছি না। চাইছি নির্বাচনটা ধর্ম ও মন্দিরকে কেন্দ্র করে নয়, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান প্রশ্নে হোক।

প্রশ্ন:

ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি ও আরএসএস উভয়ে পুরোনো দল। আরএসএসের ব্যাপক বিকাশ ঘটল; আপনাদের ধারার সেভাবে ঘটল না। দুই রকম অবস্থার ব্যাখ্যা কী?

মহম্মদ সেলিম: এ রকম তুলনা করা ঠিক নয়। দুটি দুই মেরুর রাজনীতি। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আলাদা। পরিচালিতও হয় আলাদাভাবে। জন্মকালে কমিউনিস্টদের প্রয়াস ছিল স্বাধীনতা। আরএসএসের কাজ ছিল ভারতে মুসলমানদের বিরোধিতা। কমিউনিস্ট পার্টি বহুবার নিষিদ্ধ হলো। নেতারা জেলে গেলেন। বহু ষড়যন্ত্র মামলা হলো। আরএসএস ইংরেজ শক্তিকে মদদ দিয়ে গেল। তারা নিষিদ্ধও হয়নি। নানান খোলসে তারা বিভাজনের রাজনীতি করেছে। মুসলিম লিগও সেটা করেছে। আমরা জাতপাতের এরকম বিভাজনে নেই। 

আরএসএসের বিকাশের একটা কারণ গোটা বিশ্বে দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটছে। তারা বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোরও মদদ পাচ্ছে। করপোরেট শক্তিগুলোও তাদের পাশে। করপোরেটদের সঙ্গে কমিউনালদের জোট এখন। এরা হিংসা ও কুসংস্কারের চাষবাস করে। এ কাজে প্রযুক্তিকেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারছে তারা। একটা দক্ষিণপন্থী মনস্তত্ত্ব তারা তৈরি করে নিতে পারছে রাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতি সব জায়গায়। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা হেরেছি, কিন্তু হারিয়ে যাইনি। লড়াই চলছে।

প্রশ্ন:

আপনারা একসময় তিন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিলেন। সেই অবস্থা থেকে আজকে এ রকম হলো কেন?

মহম্মদ সেলিম: আমাদের অবক্ষয় ঘটেছে, এটা মানছি না। আমরা দুর্বল হয়েছি। বিপর্যয়ে পড়েছি। সোভিয়েত রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক শিবিরেও বিপর্যয় ঘটেছিল। কিন্তু আমরা আন্দোলনে আছি। তিনটি রাজ্যে আমরা নির্বাচনে জিতেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তো ছিলাম না। অবস্থাটা এমন ছিল দেশি-বিদেশি বহু শক্তি একজোট হয়ে বামপন্থীদের তাড়াতে চাইছিল। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা কিন্তু বিজেপিকে পেছনে ফেলে এগোতে পেরেছি পশ্চিমবঙ্গে।

প্রশ্ন:

আপনাদের দলে তরুণ নেতৃত্বের ঘাটতি কি বিকাশের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা?

মহম্মদ সেলিম: পশ্চিমবঙ্গে এখন তরুণেরাই বামপন্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দলগুলোর মধ্যে কেবল সিপিআই (এম) নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে গ্রহণ করে নিয়েছে। অন্যদের দেখুন, নির্বাচন এলে তারা হয় অন্য দল থেকে বাগিয়ে নিয়ে অথবা বিনোদনজগতের লোক ডেকে এনে ভোটে দাঁড় করায়।

■ নির্বাচনটা ধর্ম ও মন্দিরকে কেন্দ্র করে নয়, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান প্রশ্নে হোক। ■ তিস্তার জলে বাংলাদেশের মানুষের নিশ্চয়ই অধিকার আছে। ■ ভারতের বিদেশনীতিতে জনগণের স্বার্থ কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, সে প্রশ্ন গভীরভাবে আছে।
প্রশ্ন:

পশ্চিমবঙ্গে দলিত ও মুসলমানরা পিছিয়ে পড়া বর্গ। আদিবাসীরাও তা-ই। আপনাদের সঙ্গে এই তিন জনগোষ্ঠীর নিবিড় সম্পর্ক থাকার কথা। দেখা যাচ্ছে, মুসলমানদের ভোট পাচ্ছে অন্য দল। এটা কেন ঘটছে?

মহম্মদ সেলিম: আপনাদের কথার এই অংশটুকু ঠিক—আদিবাসী তফসিলিদের ভোট আগে বামদের দিকে ছিল। মুসলমান ভোট আগেও বিভক্ত ছিল, এখনো তা-ই। মুসলমানদের একটা অংশ আগে কংগ্রেসের পক্ষে ছিল। এখনো সে রকম কিছু আছে। সব মুসলমান ভোট ধর্মের বিবেচনা থেকে অন্য কোনো দলে চলে গেছে, তা নয়। এখানে হিন্দু ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে যেমন হিন্দুত্ববাদ এল, মুসলমান ভোটারদের আমাদের থেকে সরাতে আনা হলো ‘পলিটিক্যাল ইসলাম’।

দুই দিকের ধর্মগুরুদের নিয়ে আসা হয়েছিল এ কাজে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম লিগের যেটুকু অবশেষ ছিল, তারাও তৃণমূলে যুক্ত হয়ে গেল। মুসলমানদের ভেতর একটা কমিউনিস্টবিরোধী সুড়সুড়ি দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার মুসলমান ভোটের বড় অংশ তৃণমূলকে পছন্দ করছে না বলেই আমাদের ধারণা। অন্তত বাংলাভাষী মুসলমানরা তৃণমূল ও বিজেপির খেলা ধরতে পারছে। 

প্রশ্ন:

আপনাদের অনেক প্রতিপক্ষ বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে আপনাকে যে ২০২২ সালে সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক করল, সেটা মুসলমানদের মধ্যে এই দলের প্রতি আস্থা ফেরাতে? 

মহম্মদ সেলিম: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এমন নয়, কোনো মুসলমান কোনো দলের নেতা হলেই তারা মুসলমানদের ভোট পাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণে সব ‘ব্যানার্জি’দের ভোট কি তৃণমূল পায়? সিপিআই (এম)–এ মুসলমান নেতা আমিই প্রথম নই এবং এখনো একমাত্র নই। কাকাবাবু মোজাফ্‌ফর আহমদ তো আপনাদের ওই সন্দ্বীপ থেকে এসে এখানে এই পার্টি গড়েছেন। আমি সিপিআই (এম)–এর পলিটব্যুরোর সদস্য বহু আগে থেকে। জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে আছি বহুকাল। দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক হয়েছি অনেক পরে। 

প্রশ্ন:

এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ও কেন্দ্রে কাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করতে চলেছেন আপনারা?

মহম্মদ সেলিম: বিজেপি ও তৃণমূলবিরোধী সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাইছি আমরা। বিশেষ করে বামপন্থী দলগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করতে চাই।

প্রশ্ন:

আপনারা সব সময় বলেছেন পুঁজিতন্ত্র সংকটে আছে। কিন্তু ভারতে ও বৈশ্বিক স্তরেও পুঁজিতন্ত্র বিকশিতই হচ্ছে! 

মহম্মদ সেলিম: এ হলো আপনাদের দেখার সমস্যা। বড় পুঁজিপতিরা নিশ্চয়ই সংকটে নেই। কিন্তু নিচুতলার মানুষ, এমনকি ছোট পুঁজির ব্যবসায়ীরাও সংকটে আছে। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বের বড় শক্তিগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা দিক কাজে লাগিয়ে এই ব্যবস্থার সংকটের দিকটা অন্যদের দিকে চালান করে দিচ্ছে। সে কারণে তাদের মুনাফা কমছে না হয়তো, কিন্তু অন্যদের সংকট ঘিরে ধরছে।

প্রশ্ন:

এ রকম একটা মত আছে এবং আমরাও তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখেছি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিরোধিতা থেকে আপনাদের অনেক ভোট বিজেপি শিবির পেয়েছিল। আপনি কি এ মত মানবেন?

মহম্মদ সেলিম: ওপরে ওপরে অনেক সময় মনে হতে পারে বামপন্থীদের ভোট বিজেপি পেয়েছে। ভোট স্থানান্তর ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু সেটা কেবল বামপন্থীদের থেকে বিজেপিতে গেছে, এমন নয়। আমাদের ভোটের একাংশ হয়তো বিজেপিতে গেছে, খানিকটা তৃণমূলেও গেছে। আবার তৃণমূলের একটা অংশের ভোটও বিজেপি পেয়েছে। ভোট স্থানান্তর যেমন হয়, নেতা স্থানান্তরও হয়।

পশ্চিমবঙ্গের যিনি বিজেপির নেতা, তিনি তো তৃণমূলের বিরাট নেতা ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ধরন বদলে গেছে। ভাসমান ভোট তৈরি হয়েছে বিরাট পরিমাণে। এর সঙ্গে বিভাজনের রাজনীতি আছে। তৃণমূলের ব্যাপক সন্ত্রাস বামপন্থীদের দুর্বল করে বিজেপির উত্থানে ভূমিকা রেখেছে। তৃণমূলকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সমাজের বাম-কাঠামোটা ভাঙা হয়েছে।

প্রশ্ন:

অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলছেন, ভারতজুড়ে বিজেপি এবার চার শর কাছাকাছি আসন পেয়ে যেতে পারে। তখন হয়তো তারা দেশটিকে সাংবিধানিকভাবে ধর্মরাষ্ট্রও করে ফেলতে পারে। এ রকম কি হতে পারে?

মহম্মদ সেলিম: সে রকম হলে হয়তো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে মৌলবাদী শক্তিগুলোর সুবিধা হবে। আমি বলব, আপনাদের সংবাদসূত্র একপেশে। আপনি যে অনুমানের কথা বললেন, সেটা এককথায় নাকচ করছি। যদি বিজেপি এভাবে বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতো তাহলে অন্য দলগুলো ভাঙাভাঙিতে, বিভিন্ন দলের নেতাদের নিজেদের দিকে নিয়ে আসাতে এত কিছু করছে কেন? তাদের আবার রামমন্দিরের রাজনীতিতে নামতে হলো কেন? বিজেপির প্রতি ভোটারদের যদি এত আস্থা থাকত, তাহলে পাঞ্জাবের কৃষকেরা আবার রাস্তায় নামল কেন? 

প্রশ্ন:

জাতীয় পর্যায়ে আপনারা অনেক সময়ই কংগ্রেসের মিত্র ছিলেন। অনেক জায়গায় এখনো আছেন। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবেন। নির্বাচনে তারাও ভালো করছে না। প্রধান বিরোধী দলের এ রকম করুণ দশার কারণ কী বলে মনে করছেন?

মহম্মদ সেলিম: কংগ্রেস একটা মধ্যপন্থী শক্তি। দক্ষিণ পন্থার উত্থানে বামপন্থীদের পাশাপাশি মধ্যপন্থীরাও বিভক্ত হয়েছিল। মধ্যপন্থীদের একাংশ ডান দিকে চলতে শুরু করেছিল। ভারতের মধ্য-বাম চরিত্র ফিরিয়ে আনা জরুরি। আপাতত এটা প্রয়োজন। কংগ্রেস বামপন্থীদের কিছু কিছু ইস্যু নিয়েও কথা বলে। তারা ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করছে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হচ্ছে। কংগ্রেস তার যে সামাজিক ভিত্তিটা হারিয়ে ফেলেছিল, যেটা থেকে তারা বিগত সময়ে সরে গিয়েছিল, সেটা আবার পুনর্গঠন করতে নেমেছে মনে হচ্ছে। 

প্রশ্ন:

পশ্চিমবঙ্গে সমাজে এবং ভারতের অন্যত্রও রাজনীতির পাশাপাশি সমাজজীবনে হিন্দুত্ববাদের প্রবল প্রতাপ দেখছি আমরা। এ অবস্থাটা কীভাবে তৈরি হলো? 

মহম্মদ সেলিম: এটা তো এক দিনে হয়নি। বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবীর ভেতর আরএসএস বহু দিন ধরে কাজ করছে। তাদের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি ছিল। এর পেছনে বড় পুঁজি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তিরও মদদ ছিল। বিজেপি যখন ক্ষমতায় এল তখন ওই পুঁজি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তির মিলিত প্রচেষ্টায় এ অবস্থাটা তৈরি হলো। 

প্রশ্ন:

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দিকে এ রাজ্য ভেঙে আরও রাজ্য গড়ার দাবি আছে। এ বিষয়ে সিপিআই (এম)–এর অবস্থান কী? আঞ্চলিক এসব আন্দোলন জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

মহম্মদ সেলিম: আমরা রাজ্য বিভাজনের বিরুদ্ধে। এসব আন্দোলনের পেছনে বিজেপির রাজনীতি রয়েছে। তারা ভারতকে এককেন্দ্রিক একটা রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। সে জন্য রাজ্যগুলোকে দুর্বল করা দরকার। ভেঙে ভেঙে সেটা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে তারা জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখকে ভেঙেছে। এখানে দার্জিলিংয়ে গুর্খাল্যান্ডের আওয়াজ তোলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গও তারা আলাদা করতে চায়। আমরা ভারতজুড়ে রাজ্যগুলোর পুনর্গঠন চাই বটে, কিন্তু সেটা ভারতকে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ার জায়গা থেকে নয়। ওরা আসলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে অধিকার দেওয়ার কথা বলে জাতীয়ভাবে এক দল, এক নেতা, এক ধর্ম—এ রকম একটা বিষয় চাইছে।

প্রশ্ন:

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, তিস্তার পানি নিয়ে কী হচ্ছে। আপনারা কি এ বিষয়ে কিছু সহযোগিতা করবেন?

মহম্মদ সেলিম: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বাংলাদেশের এখনকার সরকারের বেশ সুসম্পর্ক আছে বলে জানি। তারা তিস্তার পানি দিল না কেন? আমরা যেটা মনে করি, এ বিষয়ে রাজ্যের তেমন কিছু করার নেই। এটা ভারত সরকারের বিষয়। বিশ্বজুড়ে সভ্য প্রতিবেশীরা তো পানি ভাগ করে নিতে পারে। আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাইলে তিস্তার পানিতে সেখানকার ধানচাষিদের পাওনা দিতে হবে। তিস্তার জলে বাংলাদেশের মানুষের নিশ্চয়ই অধিকার আছে। 

প্রশ্ন:

সম্প্রতি আমরা দেখছি, মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন চলছে। ভারতের সঙ্গে আশপাশের দেশগুলোর এ রকম হচ্ছে কেন?

মহম্মদ সেলিম: প্রশ্ন হলো, আমাদের সরকার এমন কী করল যে সেখানে ভারতবিরোধী অবস্থা তৈরি হলো? আমরা বিশ্বনেতা হতে চাইছি অথচ আঞ্চলিক নেতাও কেন হতে পারছি না? কেবল মালদ্বীপ নয়, অনেক প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে। ভারতের বিদেশনীতিতে জনগণের স্বার্থ কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, সে প্রশ্ন গভীরভাবে আছে। গোটা বিশ্বে আঞ্চলিক নানান ফোরাম থাকে। এখানে জেদাজেদি করে সার্ক উঠিয়ে দেওয়া হলো। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার ফোরাম থাকল না।

প্রশ্ন:

আপনারা একসময় টানা সাড়ে তিন দশক সরকারে ছিলেন। অথচ এখন বিধানসভায় শূন্য। আদৌ কি পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ নিরাপদ?

মহম্মদ সেলিম: নির্বাচনী পাটিগণিতে বামপন্থী রাজনীতিকে মাপা যাবে না। গত ৭ জানুয়ারি কেবল সিপিআই (এম)–এর যুব সংগঠন একক শক্তিতে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ করল। যুব সংগঠনের একক উদ্যোগ ছিল এটা। আমরা বিধানসভায় শূন্য হলেও পশ্চিমবঙ্গে আমাদের শিকড় অনেক গভীরে।