বিশেষ সাক্ষাৎকার: মোস্তাফিজুর রহমান   

এলডিসিতে যাওয়াটা ঐচ্ছিক, বেরিয়ে আসাটা পূর্বনির্ধারিত

মোস্তাফিজুর রহমান বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে অর্থনীতির হালচাল, পাচার করা টাকা আনার উপায়, এলডিসি থেকে উত্তরণের বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ এবং ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের ফলাফল—এসব বিষয়ে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনোজ দে

প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস পেরিয়েছে। ভেঙে পড়া অর্থনীতিটাকে কতটা লাইনে আনা সম্ভব হলো?

মোস্তাফিজুর রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন ক্ষমতা নেয়, তখন আমাদের অর্থনীতি বড়  ধরনের চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সেটা অনেক বছরের পুঞ্জীভূত একটা চাপ।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল, বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। বিনিময় হারে বড় ধরনের অবনমন হয়েছিল, যেটা আমদানি করা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছিল। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করে দিয়েছিল। আমানতকারীরা টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছিলেন। ব্যাংক আমানতের একটা বড় অংশ দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছিল। এতে ব্যাংকাররা যে ঋণ দিচ্ছিলেন, তাতে সুদহার অনেক বেশি রাখতে হচ্ছিল। এর ফলে বিনিয়োগের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছিল। অনেক বেশি ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল। সবটা মিলিয়ে অর্থনীতির ওপর বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।

অন্যদিকে এনবিআর রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারিনি। আমাদের করব্যবস্থাকে অপ্রত্যক্ষ থেকে প্রত্যক্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারিনি। আমাদের অপ্রত্যক্ষ কর এখনো দুই-তৃতীয়াংশ। যাঁরা ক্ষমতাশালী ছিলেন, তাঁদের প্রত্যক্ষ করের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাক্স-ভ্যাট বাড়ানোর দিকেই সরকারের আগ্রহ ছিল।

এর ফলে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় পুরোটাই করতে হয়েছে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া ঋণের টাকা দিয়ে। এর সবটাই উত্তরাধিকার সূত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে গ্রহণ করতে হয়েছে।

প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনপ্রত্যাশার একটা বড় চাপও আছে…

মোস্তাফিজুর রহমান: সবাই মনে করেছেন, একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। সবাই ভেবেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগে ভাটা, বৈষম্য—দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এসব সমস্যা হয়তো অন্তর্বর্তী সরকার খুব দ্রুত সমাধান করে ফেলতে পারবে; কিন্তু এটা বাস্তবে সম্ভব নয়। সেটা সম্ভবও হয়নি। প্রত্যাশার চাপ ও পুঞ্জীভূত চাপ দুটো মিলিয়েই সরকারকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বড় ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে। সাপ্লাই চেইনে বড় ধরনের বিচ্যুতি হয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কম হয়েছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়েছে, বিনিয়োগে স্তিমিত ভাব দেখা গেছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়নি। প্রথম প্রান্তিকে এই প্রবণতাটা দেখা গেছে; কিন্তু ইতিবাচক ব্যাপারটা হচ্ছে, সর্বসাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তরণটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, সর্বনিম্ন জায়গায় নেমে যাওয়ার পর আমরা আবার ওপরের দিকে উঠতে শুরু করেছি। আমরা দেখছি, প্রবাসী আয় ভালো আসছে। এখানে নিঃসন্দেহে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অবদান আছে। আবার বৈধ পথে টাকা পাঠালে যে দেশের কাজে লাগবে, হুন্ডি-হাওলা যে ভালো নয় এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ, করখেলাপি, ঋণখেলাপি, রাজনীতিবিদদের একটা অংশ দেশ থেকে টাকা পাচার করে ফেলে—এখান থেকে প্রবাসীদের বের করে আনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের মধ্যে নিজেদের একটা পরিষ্কার ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছে। এর ফলে আমরা দেখেছি সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসছে।

আমাদের রপ্তানিকারকেরা এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ১২ শতাংশের মতো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি করেছেন। রপ্তানির মাধ্যমে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং আমদানির মাধ্যমে ওভার ইনভয়েসিংয়ের প্রবণতাটা স্তিমিত হয়েছে। এর ফলে বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যের জায়গাটা স্থিতিশীল হয়েছে। এটা একটা বড় ঘটনা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকেও স্থিতিশীল করা গেছে। এতে বিনিময় হারটা স্থিতিশীল হয়েছে। এর ফলে আমদানি করা মূল্যস্ফীতির উচ্চ চাপটা সুস্থির অবস্থায় এসেছে।

এ ছাড়া আমদানির ওপর বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাটি শিথিল করা গেছে। আমদানিও কিছুটা চাঙা হচ্ছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ ভালো; কিন্তু চালের দামটা ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের সময়মতো চাল আমদানি করতে হবে, চালের পর্যাপ্ত মজুত করতে হবে। ওএমএস, ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। মূল্যস্ফীতির চাপটা কিছুটা নিম্নমুখী হলেও মূল্যস্তরটা ওপরের দিকে আছে। এর ফলে ক্রয়ক্ষমতার যে অবনমন, সেটা অব্যাহত আছে। বিশেষ করে মজুরি হার বৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি হারের বৃদ্ধির গড়টা বেশি।

সরকারের সামনে মূল চ্যালেঞ্জের জায়গাটা হলো বিনিয়োগটাকে আবার চাঙা করা। কিন্তু এখানে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা, ব্যাংকিং খাতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে উদ্যোক্তাদের উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। আমাদের গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। সরকার হয়তো যুক্তি দিতে পারে, আগের সরকারের আমলের ভুল নীতির খেসারত তাদের দিতে হচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে উদ্যোক্তা ও ভোক্তাকেই তো বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।

মোস্তাফিজুর রহমান
প্রথম আলো:

বিগত সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। পাচার করা টাকা ফেরত আনা কি দ্রুত সম্ভব?

মোস্তাফিজুর রহমান: এখানে দুটি দিক আছে। একটি হলো সামনের দিনে যাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়ে আমরা টাকা পাচার বন্ধ করতে পারি। দ্বিতীয়টা হলো যে টাকা পাচার হয়ে গেছে, সেটা আমরা কীভাবে ফেরত আনতে পারি।

অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে আমরা হিসাব দিয়েছি, হাসিনা সরকারের শাসনামলে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার আমাদের দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। এটা আমাদের জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, খেলাপি ঋণের একটা বড় অংশ বাইরে চলে গেছে। দুর্নীতি যাঁরা করেছেন, তাঁদের টাকাটাও বাইরে চলে গেছে। আমরা দেখেছি, হুন্ডি-হাওলা এবং রেমিট্যান্সের বিপরীতে একটা দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে, যারা দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় আমাদের এখান থেকে টাকা পাচার করেছে। তারা সেখানে ব্যাংক হিসাবে টাকাটা রেখেছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কিনেছে।

আমাদের এখান থেকে প্রকৃত যে ব্যক্তি টাকাটা পাঠিয়েছেন, আর বিদেশে বসে প্রকৃত যে ব্যক্তি টাকাটা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকগুলো স্তর তাঁরা তৈরি করেছেন। এমন করে ধূম্রজাল তাঁরা সৃষ্টি করেছেন যে পেপার ট্রেইলটা প্রতিষ্ঠা করা খুব মুশকিল। কিন্তু পাচার হওয়া টাকাটা আমাদের আনতেই হবে। সর্বসম্প্রতি অ্যাঙ্গোলা তাদের দেশে ৫ বিলিয়ন ডলার ফেরত এনেছে। ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া টাকাও ফেরত এনেছে। এমনকি আমাদের দেশ থেকে অন্য দেশ তাদের পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে গেছে।

প্রথম আলো:

আমরা কেন অন্য দেশ থেকে আমাদের টাকাটা ফেরত আনতে পারব না?

মোস্তাফিজুর রহমান: এর একটা প্রক্রিয়া আছে। বিশেষ আদালত করে টাকা পাচারের এসব অপরাধের দ্রুত বিচার করা প্রয়োজন। সেটা হলে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব যে এসব টাকা আমাদের দেশ থেকে দুর্নীতি, ঋণখেলাপিসহ নানা অবৈধ উপায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আমাদের দেশ থেকে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে যাওয়ার একটা বড় অংশ হলো ট্রেড মিস-প্রাইসিং। আমদানিকারক সেজে পাচারকারী যে পণ্যের দাম ১৫ ডলার, সেটাকে দেখিয়েছি ৫০ ডলার। এলসি খুলে সরকারি দামে ডলার কিনে তারপর সেটা পাচার করা হয়েছে। দেশকে কতভাবে ক্ষতি করা যায়, তার সবটাই তারা করেছে। এই লোকগুলোই বহু বছর ধরে ডলারের দামের বিপরীতে টাকার মান অবনমন করতে দেয়নি। কারণ, তারা ৮৬ টাকায় ডলার কিনে সেটাকে পাচার করতে চেয়েছিল। ১২২ টাকায় ডলার কিনতে গেলে তাদের তো কিছুটা লোকসান হয়!

টাকা পাচারের আরেকটা কৌশল হিসেবে স্বর্ণকে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম আলোতে দেখলাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১০ বছরে স্বর্ণ এসেছে প্রায় ৩৬৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের। টাকার অঙ্কে ৪০ হাজার কোটি টাকার। বাংলাদেশে আমদানি দেখানো হয়েছে মাত্র ৮২ লাখ ডলারের স্বর্ণ। এর মানে হচ্ছে, অর্থ পাচারের সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালানিদের একটি একটি দুষ্টচক্র সৃষ্টি হয়েছে।

দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনতে হবে তিনটি কারণে। এক. দেশ থেকে যারা অবৈধভাবে টাকাটা নিয়েছে, সেটা দেশের টাকা। দুই. যারা টাকাটা নিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, সামাজিকভাবে তাদের উন্মোচন করা। তিন. যারা এটা ভবিষ্যতে করতে চায়, তাদের হৃদয়ের ভেতরে একটু ভীতি ঢোকানো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, তাঁদের এই আমলেই তাঁরা পাচার হওয়া টাকার বড় একটা অংশ দেশে ফেরত আনতে পারবেন। সেটা আনতে পারলে ভালো, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় সেটা দুরূহ হবে। তবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য পাচারের অর্থ ফেরানোর একটা রোডম্যাপ রেখে যেতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান
প্রথম আলো:

পাচার করা টাকা ফেরত আনতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো কি যথেষ্ট?

মোস্তাফিজুর রহমান: পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটা বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আমরা দেখছি যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশন এ ব্যাপারে উদ্যম নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন দেশের কাছে তারা তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং বহুপক্ষীয় সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও তারা করছে। বিশ্বব্যাংকের স্টার প্রোগ্রামের তারা সদস্য হয়েছে। এর সবই ভালো উদ্যোগ।

কিন্তু আমাদের ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন করে এমন বিশেষজ্ঞ কোম্পানির সহায়তা নিতে হবে। সে জন্য বাজেটে আমাদের বরাদ্দ রাখাও দরকার। কেননা পাচারের পেপার ট্রেইলটা প্রতিষ্ঠা করা সোজা বিষয় নয়। সে কারণেই এ কাজে যাদের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের সহায়তা আমাদের নিতে হবে।

প্রথম আলো:

এলডিসির তালিকা থেকে উত্তরণের নির্দিষ্ট সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হবে কি হবে না, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে একটা দোদুল্যমান অবস্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি। সরকারের এ অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন?

মোস্তাফিজুর রহমান: আমার কাছে মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকার দোদুল্যমান অবস্থান থেকে সরে এসেছে। ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তারা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এটা ইতিবাচক।

কিন্তু আমাদের রপ্তানিকারকদের বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের দুশ্চিন্তা আছে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। আমাদের রপ্তানির ৭০ শতাংশ পণ্য বিভিন্ন ধরনের শুল্কমুক্ত সুবিধাও পায়। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে সাড়ে ১১ শতাংশ, কানাডার বাজারে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। ভারত ও চীনের বাজারে যেতে হলেও আমাদের একটা শুল্ক দিতে হবে। সাধারণভাবেই সারা পৃথিবীতে তৈরি পোশাকের ওপর শুল্কটা উচ্চস্তরে থাকে।

আমাদের ওষুধশিল্পের জন্য মেধাস্বত্বটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধের ক্ষেত্রে এখনো লাইসেন্স পেটেন্ট আমাদের কিনতে হয় না। পেটেন্টের ওষুধগুলো আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে এই সুবিধাগুলোও আমাদের থাকবে না। ফলে আমাদের পোশাকশিল্প, আমাদের ওষুধশিল্পের উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে একটা প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবেন। তাঁদের প্রতিযোগিতার পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

আবার এটাও সবার মনে রাখা দরকার যে এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টা আমাদের ওপর নির্ভর করে না। এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারটা একটা দেশের জন্য ঐচ্ছিক। যেমন: জিম্বাবুয়ে এলডিসির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কিন্তু এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টা ঐচ্ছিক নয়। এটা অনেকটাই পূর্বনির্ধারিত। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—তিন সূচকের তিনটিতেই আমরা প্রত্যাশিত ফল অর্জন করেছি।

৫০ বছর ধরে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা নিয়ে আসছি। সব কটি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা সবচেয়ে বেশি ভোগ আমরাই করতে পেরেছি। তার কারণ, অনেকগুলো স্বল্পোন্নত দেশের সরবরাহ সক্ষমতাই নেই।

বাস্তবতা হলো, একটা পর্যায়ে এলডিসি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে। ২০২৬ সালের ২৩ নভেম্বর এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নেপাল প্রস্তুত হচ্ছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভুটান ২০২৩ সালে এলডিসি থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমরা বেরিয়ে না এলে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে থাকবে। এটা আমাদের জন্য খুব ইতিবাচক হবে না।

প্রথম আলো:

এলডিসি থেকে বেরিয়ে এলে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। তৈরি পোশাকশিল্প ও ওষুধশিল্পে একটা বড় ধাক্কা লাগবে। এর জন্য কতটা প্রস্তুতি আছে বাংলাদেশের।

মোস্তাফিজুর রহমান: তৈরি পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্পসহ রপ্তানির অন্য খাতগুলোকে সহায়তা করতে হবে, যাতে তারা বাজার সুবিধানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থেকে দক্ষতা-উৎপাদনশীলতানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় উত্তরণ করতে পারে। আমাদের অবশ্যই ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

আমাদের রপ্তানিকারকের ব্যাংক থেকে ১৪-১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হয়, কিছুদিন পরপর গ্যাসের দাম বাড়ে, বন্দরে দেরি হয়—এসব কারণে ব্যবসার খরচটা বাড়ে। অন্য দেশের বাজারে শূন্য শুল্কের যে সুবিধাটা তাঁরা পান, সেটা দিয়ে এই বাড়তি খরচের বোঝাটা তাঁরা পূরণ করতে পারেন। এখন দুই দিকটাই তাঁদের যদি হারাতে হয়, তাহলে তাঁরা তো বড় ধরনের সমস্যায় পড়বেন।

এলডিসি থেকে বেরিয়ে এলে আমরা এখানে আর রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতে নগদ প্রণোদনা দিতে পারব না। আমদানিতে স্থানীয় উৎপাদনের সঙ্গে বৈষম্য হয় এমন কোনো ট্যাক্স–ভ্যাট বসাতে পারব না।

এর জন্য আমাদের প্রস্তুতিটা নিতে হবে। আমরা যেসব জায়গায় নগদ প্রণোদনা দিচ্ছি, সেগুলো ধীরে ধীরে তুলে নিতে হবে। আমাদের দক্ষতা, আমাদের ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। রপ্তানি ব্যয়ের সাশ্রয় করার উপায় বের করতে হবে।

আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার বাজারে অতিরিক্ত তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাব। চীনও আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে চেয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। একটা ব্যাপার হলো, ভিয়েতনাম ৫২টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে ফেলেছে। আমরা কিন্তু ভুটানের সঙ্গে পিটিএ (অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি) ছাড়া কারও সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারিনি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি করেই আমাদের শুল্ক সুবিধা নিতে হবে।

একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে, জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের খুব জোরালোভাবে কাজটি করতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান
প্রথম আলো:

প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতিটা আসলে কোথায়? এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে করণীয় কী?

মোস্তাফিজুর রহমান: আমাদের চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। এখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে করণীয় আছে। প্রথমত, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলো আমরা কীভাবে করতে পারি, তার একটা সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ থাকতে হবে। অনেকগুলো দেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা করলেও বাণিজ্য চুক্তি করিনি। অন্য দেশে বাজার সুবিধাটা আমরা চাইলেই তো হবে না, আমাদেরও সেটা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, এলডিসি থেকে উত্তরণ হোক আর না হোক, বৈশ্বিক ব্যবসার পরিবেশ বদলাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রশ্ন তুলছে, পোশাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কতটা হচ্ছে, বা পানি কতটা ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এখানে আমাদের প্রস্তুতি অনেক কম। আমাদের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি আনতে হবে। সেই প্রযুক্তিটা যাতে শূন্য শুল্কে আনা যায়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, শ্রমমান কী হবে, সেটা নির্ধারণ করতে হবে। শ্রম আইন কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সভাগুলোতে বছরের পর বছর ধরে শ্রমমান, শ্রম আইনের প্রয়োগ না হওয়া নিয়ে তারা একই ধরনের উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। এলডিসির দেশ হিসেবে তারা হয়তো অন্য দিকে তাকিয়ে রয়েছে, কিন্তু উত্তরণ হলে তারা কিন্তু অন্যদিকে তাকিয়ে থাকবে না।

আমাদের নেগোসিয়েশন করার সক্ষমতা খুবই দুর্বল। এ জন্য আলাদা সেল গঠন করা দরকার। এখন বলা হয় যে আলোচনাগুলোতে একটি দেশ সেটাই পায়, যেটা সেই দেশটি নোগোসিয়েট করে, দেশটি যেটা প্রত্যাশা করে, সেটা পায় না।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাটা ঠিক করতে হবে। এখন যদি উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে ঋণের সুদহার অনেক উঁচু রাখতে হয়, তাহলে আমাদের উদ্যোক্তারা তো প্রতিযোগিতা করতে পারবেন না। আমাদের এখানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন হয়েছে ২০১৮ সালে। কিন্তু এই আইনের বাস্তবায়ন কোথায়? বিডা বলেছে তারা ৫টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোদমে চালু করবে। সেটা দ্রুত করতে হবে। আমাদের চামড়াশিল্প আমরা পরিবেশবান্ধবভাবে করতে পারিনি। সাভারে একটা কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) করতে ১৫ বছর লেগেছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস পার্কে ২০ বছরেও আমরা একটা সিইটিপি করতে পারিনি। এই যে আমাদের অদক্ষতা, এর পরিবর্তন আনতে হবে।

উদ্যোক্তা পর্যায়ে করণীয় হচ্ছে, কমপ্লায়েন্সগুলো নিশ্চিত করা। শোভন কর্মপরিবেশ আছে কি না, শোভন মজুরি আছে কি না, উৎপাদনশীল প্রযুক্তি আসছে কি না—এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা তাদের বাড়াতে হবে। দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা ও প্রযুক্তির ত্রিমাত্রিক সংমিশ্রণ করে শূন্য শুল্ক সুবিধার যে বাড়তিটা তাঁরা পেতেন, সেটাকে কমপেনসেট করতে হবে।

প্রথম আলো:

এলডিসি থেকে উত্তরণে আমাদের লাভ ও লোকসানের যদি হিসাব কষি, তাহলে কোন দিকে পাল্টাটা ভারী রাখবেন। বাংলাদেশের লাভ কোথায়, আর লোকসান কোথায়?

মোস্তাফিজুর রহমান: এটাকে আমি লাভ–লোকসান বলব না। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আমাদের রপ্তানির ওপর বড় ধরনের চাপ পড়বে। উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। ২০২০ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একটা হিসাব আছে, যে ১২টি দেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে রপ্তানি বাণিজ্যে যতটা প্রভাব পড়বে, তার ৮৫ শতাংশের বেশি পড়বে বাংলাদেশের ওপর। ফলে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি।

সবচেয়ে বড় লাভের জায়গাটা হলো, আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংটাকে বদলে ফেলার সুযোগ এসেছে। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে আমরা ৫০ বছর ধরে এলডিসিতে আছি। উত্তরণটা আমাদের সাফল্যের পরিচয়। বাংলাদেশ খুব কম দেশগুলোর একটি, যারা তিন সূচকেই ভালো ফল অর্জন করেছে।

শ্বেতপত্রে আমরা বলেছি, আমাদের যে তথ্য–উপাত্ত নিয়ে ঘাটতি আছে, যেসব তথ্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিলেও তিন সূচকেই আমাদের অনেক উদ্বৃত্ত আছে। এই অর্জনটা শুধু সরকারগুলো করেছে, তা নয়। আমাদের সাধারণ জনগণ, উদ্যোক্তা, এনজিও, বেসরকারি খাত—সবারই বড় ধরনের অবদান এখানে আছে। ফলে এটা আমাদের সবার জন্য একটা স্বীকৃতি। ক্রেডিট রেটিং বা সভরেন বন্ডের ক্ষেত্রে এই অর্জন আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে।

এফডিআই আকর্ষণের ক্ষেত্রেও আমরা সুবিধা পাব। আমরা যে উন্নয়নশীল দেশ, আমাদের অর্থনীতিটা গতিশীল, আমাদের একটা বড় অভ্যন্তরীণ চাহিদা আছে—এটা তো আমাদের বিনিয়োগকারী বলি আর বিদেশি বিনিয়োগকারী বলি, তাদের কাছে বিশাল একটা আকর্ষণ। আমাদের এখানে যদি ১০ শতাংশও মধ্যশ্রেণি হয়, সেটাও তো সিঙ্গাপুরের ৫ গুণের বড় বাজার।

প্রথম আলো:

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ ও শুল্কনীতি বিশ্বে একটা নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। অনেকে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কাও করছেন। এ বাস্তবতা বাংলাদেশের সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে?

মোস্তাফিজুর রহমান: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকালীন সময়টা একটা বৈরী বৈশ্বিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে যেসব স্বল্পোন্নত দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করছিল, তারা সবাই উত্তরণের সময়টা দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছিল। এরপর শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধের প্রলম্বিত নেতিবাচক অভিঘাত। সর্বসম্প্রতি ট্রাম্পের শুল্কনীতি। অনেকে বলছেন, চীনের ওপর বাড়তি শুল্কের কারণে বাংলাদেশের সুবিধা হতে পারে। কিন্তু আমি সেটা মনে করি না। চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ম্যান মেড ফাইবারের পোশাক রপ্তানি করে। আর আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প মূলত তুলাভিত্তিক। ফলে চীন যে পণ্য রপ্তানি করে, সেই বাজারে আমরা প্রতিযোগিতাও করি না। এখানে লাভবান হতে পারে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত।

ট্রাম্পের উচ্চ হারের শুল্কনীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তারা তাদের চাহিদাটাই কমিয়ে দিতে পারে। ফলে একটা বৈশ্বিক মন্দাও আসতে পারে। এসব মিলিয়ে এলডিসি থেকে আমাদের উত্তরণটা হচ্ছে একটা বৈরী বৈশ্বিক পরিবেশে। এবং আমাদের মতো দেশগুলোতে আগের সরকারগুলো বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেনি। ২০১৮ সাল থেকে আমরা প্রস্তুতির সময় পেয়েছি। একটা রূপান্তরের একটা পথনকশা তৈরি করা হয়েছিল; কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি।

সর্বসম্প্রতি আমরা দেখেছি, অ্যাঙ্গোলা ২০২১ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। কারণ, তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় অ্যাঙ্গোলার অর্থনীতি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সলোমন আইল্যান্ডের উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে ২০২৭ সালের মার্চ মাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মালদ্বীপের উত্তরণের সময়সীমা ছিল ২০০৫, সেটাকে পিছিয়ে করা হয়েছিল ২০১১-তে। সুতরাং উত্তরণের সময়সীমাকে যে বিলম্বিত করা যায় না, তা নয়। ২০২৬ সালে কোনো কারণে আমাদের অর্থনীতি যদি চাপে পড়ে, সূচক যদি নিম্নমুখী হয়, তাহলে তখনকার নির্বাচিত সরকার জাতিসংঘে আবেদন করতে পারে। চাইলে নেপাল ও লাওসের সঙ্গে সম্মিলিতভাবেও আবেদন করতে পারে। সেটা আরও জোরালো হবে।

এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলার সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনারও উত্তরণ ঘটাতে হবে। আগামী নির্বাচিত সরকার যারাই আসুক না কেন, এ খাতে তাদের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ থাকতে হবে। তাহলে জনগণও সরকার ও রাজনৈতিক দলকে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে পারবে।