বিশেষ সাক্ষাৎকার: মো. আবদুল মতিন

বিচার বিভাগ নিয়ে বেশি অনাস্থা তৈরি হয় আওয়ামী আমলে

মো. আবদুল মতিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই আনরিটেন কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ আ টেল অব টু সুপ্রিম কোর্টস। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। এর মধ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগ ও সংবিধান সংস্কার, বিচারক নিয়োগে আইনের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয় রয়েছে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুরুল ইসলাম

প্রথম আলো:

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের আগে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়েও অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত, কোথাও ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি—প্রায়ই এ রকম অভিযোগ উঠেছে। গত সরকারের আমলে বিচার বিভাগ নিয়ে এমন প্রশ্ন ও অভিযোগগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?

এম এ মতিন: আদালতে যত মামলা হয়ে থাকে, তার একটা বড় অংশই সরকার বনাম নাগরিকের মামলা। অনেক সময় এসব মামলায় সরকার ও সরকারদলীয় লোকজনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত ছিল। এসব কারণেই বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল। গত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদেই এটা শুরু হয়। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে এটা সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

এই দুই মেয়াদে বিচার বিভাগে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করা হয়। উচ্চ আদালতে এমন কিছু লোককে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাঁদের আইনকানুন, বিচার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জানাশোনা নেই এবং এমনকি তাঁদের মেরুদণ্ডও নেই। তাঁরা যে নিজেদের যোগ্যতায় নয়, সরকারের কৃপায় বিচারক হয়েছেন, এটা তাঁরা জানতেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের কোনো নৈতিক শক্তি ছিল না। তাঁরা যেমন সরকারের নির্দেশনামতো কাজ করতেন, অনেক সময় আবার সরকার কিছু না বললেও সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ভবিষ্যতে সরকারের কাছ থেকে আরও সুবিধা পাওয়ার আশা থেকেই তাঁদের মধ্যে এমন প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এ কারণে তাঁদের পক্ষে ন্যায়বিচার করা সম্ভব ছিল না।

এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগ নিয়ে একধরনের আস্থার অভাব তৈরি হয়েছিল। সহজভাবে বলা যায়, দলীয়করণ, অযোগ্য ও মেরুদণ্ডহীন লোকদের বিচারক হিসেবে নিয়োগের ফলে বিচার বিভাগ নিয়ে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। বিচার বিভাগ নিয়ে অনাস্থা হয়তো আগেও কিছুটা ছিল, তবে গত সরকারের আমলে যেটা হয়েছে, তা সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

প্রথম আলো:

মাসদার হোসেন মামলার সূত্র ধরে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ সালের আগের তুলনায় এরপর বিচার বিভাগের ভূমিকা বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাহলে বিচার বিভাগ পৃথক করে কি কোনো লাভ হলো?

এম এ মতিন: মাসদার হোসেন মামলার রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। কিন্তু সেখানে যে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিছু বিষয় ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ (সুবিধামতো বাছাই) করা হয়েছে। কোনো একটা স্কিম বা প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হলে সেটা ভালোর চেয়ে খারাপ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।

বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করতে চাইলে এই পৃথক্‌করণের পথে যত সাংবিধানিক, আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক, এমনকি অর্থনৈতিক বাধা আছে, তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল। তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এর ফলে সত্যি সত্যি বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে বা নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়েছে—এমনটা বলা যায় না।

প্রথম আলো:

নতুন বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ সম্প্রতি বিচার বিভাগ নিয়ে একটি ‘রোডম্যাপ’ দিয়েছেন। সেটাকে কীভাবে দেখছেন?

এম এ মতিন: তিনি যা বলেছেন, সেটা বেশ ইতিবাচক। এগুলোর অনেক কিছুই মাসদার হোসেন মামলার নির্দেশনায় বলা হয়েছিল। সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, আলাদা বাজেট বরাদ্দ দেওয়া এবং নিম্ন আদালতগুলোকে সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে নিয়ে আসা—এ বিষয়গুলো নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ একটি বাধা। এই অনুচ্ছেদের ফলে বিচার বিভাগে এখন ‘দ্বৈত শাসন’ চলছে। নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনতে হলে এটাকে বাহাত্তরের সংবিধানে যেভাবে ছিল, সেই অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে।

প্রথম আলো:

শুধু সাংবিধানিক, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকলেই কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, নাকি এ ক্ষেত্রে বিচারকদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রয়োজন আছে?

এম এ মতিন: আমি মনে করি দুটিই সমানভাবে প্রয়োজনীয়। একজন বিচারক ব্যক্তিগতভাবে কতটা দক্ষ, যোগ্য, সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক—সেটা অনেক ‍গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিচারকাজ কার্যত রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার বাস্তবায়ন। একজন বিচারক যদি সেই ক্ষমতা ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারেন কিংবা ভুল বা অপব্যবহার করেন, তাহলে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। এ কারণে সঠিক ব্যক্তিদের বিচারক হিসেবে নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।

প্রথম আলো:

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার হাইকোর্টে ২৩ জন অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের তো কোনো আইন নেই। তাহলে এটা কোন প্রক্রিয়া বা কীভাবে হচ্ছে?

এম এ মতিন: উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে একটি আইন করা উচিত। তবে আইন না থাকলেও আপিল বিভাগের কিছু নির্দেশনা আছে। আমি বিচারপতি থাকা অবস্থায় আপিল বিভাগ এ নির্দেশনাগুলো দিয়েছিল।

এ নির্দেশনায় বার ও বেঞ্চের সঙ্গে আলোচনা করে বিচারক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। সেই আলোচনার লিখিত রেকর্ড রাখার কথাও বলা হয়েছিল, যাতে কারও ব্যাপারে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা পরবর্তী সময়ে জানা যায়। কিন্তু সেসব নির্দেশনা মানা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে।

উচ্চ আদালতে বেশির ভাগ বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয় আইনজীবীদের মধ্য থেকে। আমাদের দেশে অন্যান্য শ্রেণি–পেশার মানুষের মতো আইনজীবীরাও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। এ কারণে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন আইনজীবীদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়াই শ্রেয়। আমি মনে করি, যাঁদের বিচারক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা হয়, তাঁদের নামের তালিকা অন্তত এক মাস আগে প্রকাশ করা উচিত। এতে কারও ব্যাপারে কোনো আপত্তি থাকলে সেটা জানা বা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে। এতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের বিচারক হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

মনে রাখতে হবে, জনগণই শ্রেষ্ঠ ‘বিচারক’। তাই জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করা যাবে না। বিশেষ দল বা মতের মানুষের চেয়ে সাধারণ মানুষের বিবেচনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সম্প্রতি যেভাবে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হলো, সেটা নতুন কোনো কিছু নয়। হয়তো কিছু লোক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তালিকা করেছেন। এটাকে অনেকটা আগে যেভাবে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটার পুনরাবৃত্তি বলা যেতে পারে।

প্রথম আলো:

বিচার বিভাগ সংস্কার করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনের কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?

এম এ মতিন: বিচার বিভাগ নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। কেন এই অনাস্থা তৈরি হলো এবং কীভাবে এই অনাস্থা দূর করা যায়, কমিশনকে সবার আগে সেটা অনুসন্ধান করতে হবে। বিচার বিভাগের কিছু সমস্যা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কমবেশি আলোচনা হচ্ছে। কিছু কিছু সমস্যার সমাধান স্বল্পমেয়াদি, আবার কিছু সমস্যার সমাধান দীর্ঘমেয়াদি।

নিম্ন আদালতে মামলা অনুপাতে বিচারকের সংখ্যার স্বল্পতা আছে, সেটার জন্য বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। আদালতগুলোর অবকাঠামোগত সংকট কীভাবে দূর করা যায়, সেটা একটা চিন্তার বিষয়। বার ও বেঞ্চের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়—সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। বিচারালয়কে দলীয় আনুগত্য থেকে মুক্ত রাখতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণে সব বিভাজন দূর করে সবার একটিমাত্র পরিচয় হওয়া উচিত, ‘আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত সেবক।’

এসব কিছুর উদ্দেশ্য হলো মানুষ যাতে স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার পেতে পারে। ন্যায়বিচার পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। বিচার বিভাগ কীভাবে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভালোভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, কমিশনকে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

প্রথম আলো:

সংবিধান সংস্কারের জন্যও সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে, সে বিষয়ে আপনার মতামত কী?

এম এ মতিন: বাংলাদেশে গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে সংবিধানের একটা সম্পর্ক আছে। সাংবিধানিকভাবে কোনো সমাধান সম্ভব হয়নি বলেই ২০২৪ সালে গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলো।

বর্তমান সংবিধান অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। সংবিধানের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নেই, বরং নির্বাহী বিভাগের একক কর্তৃত্ব রয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদের মতো অগণতান্ত্রিক ধারার কারণে সংসদ সদস্যরা কার্যত দলের হাতে ‘বন্দী’ থাকেন। এসব অনুচ্ছেদকে যুক্তিসংগত সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানকে গণতান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, সংবিধান সংস্কার কমিশন এসব বিষয় ভালোভাবে পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়ন করবে।

প্রথম আলো:

সংবিধান সংশোধন, পুনর্লিখন নাকি নতুনভাবে প্রণয়ন—কোনটা এখন বেশি প্রযোজ্য বলে মনে করেন?

এম এ মতিন: বাহাত্তরের সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখন কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়ন—যেকোনোভাবেই সংবিধান পরিবর্তন করা যেতে পারে। কোনটা, কীভাবে করা হবে, সেটা নির্ভর করছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর। যেটাই করা হোক, রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে করতে হবে। তা না হলে এই পরিবর্তন টেকসই হবে না।

প্রথম আলো:

আমাদের সংবিধানে ধর্মের অবস্থান একটি আলোচিত ইস্যু। সংবিধানে একদিকে যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা আছে, আবার রাষ্ট্রধর্মও আছে। এই বিতর্কের অবসান কীভাবে হবে?

এম এ মতিন: এখন সংবিধানে যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম—দুটোই রাখা হয়েছে তা সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্র একটি প্রতিষ্ঠান। এর কোনো ধর্ম থাকতে পারে না, ধর্ম থাকে ব্যক্তির। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি তখন কোনো রাজনৈতিক দলের বা নাগরিকের দাবি ছিল না। এটা ছিল স্বৈরাচার এরশাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার একটি রাজনৈতিক কৌশল। ধর্ম যেহেতু আমাদের দেশে একটি স্পর্শকাতর ইস্যু, তাই পরবর্তী সময়ে কেউ আর এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

প্রথম আলো:

আমাদের সংবিধানে নাগরিকত্ব ও জাতীয়তা নিয়েও কিছু অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি আছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকেরা বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত হবেন। এর ফলে কি অন্য জাতিসত্তার মানুষদের ‘অস্বীকার’ করা হলো?

এম এ মতিন: বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসরত সব নাগরিকের একটি সাধারণ পরিচয় থাকতে হবে। এটা আমাদের একটা ঐক্যের জায়গা। অন্যদিকে বাংলাদেশে শুধু বাঙালি নয়, অন্য জাতির মানুষও আছেন। এটা একটা বৈচিত্র্যের বিষয়। সংবিধানে সেই স্বীকৃতিও থাকা উচিত। তাঁরা কীভাবে নিজেদের পরিচিতি চান, সেটা নিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের উচিত হবে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা। এ বিষয়গুলো এখনই সুরাহা করার সময়। এসব ইস্যুর মীমাংসা না হলে তা বারবার ফিরে আসবে।

প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আমলের অনেক মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী নেতা ও বিভিন্ন বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মামলা, গ্রেপ্তার, রিমান্ড নিয়ে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ বিষয়টা নিয়ে আপনার মতামত কী?

এম এ মতিন: গণ–অভ্যুত্থানের সময় যাঁরা হত্যা-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু গণহারে গ্রেপ্তার করা হলে সেটা ঠিক হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, এজাহারে কারও নাম থাকলেই তিনি অভিযুক্ত হয়ে যান না। পুলিশের তদন্তের পর আদালত যখন অভিযোগপত্র আমলে নেন, তখনই শুধু একজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত বলা যেতে পারে। তাই আদালত অপরাধ আমলে নেওয়ার আগে কাউকে অহেতুক নাজেহাল করা উচিত হবে না। যে যতটুকু অপরাধ করেছে, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ততটুকু ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হওয়া যাবে না, তাহলে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

প্রথম আলো:

আদালতে নেওয়ার পথে কোনো কোনো গ্রেপ্তার ব্যক্তির ওপর আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলোকে কীভাবে দেখছেন?

এম এ মতিন: আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনাগুলোকে ‘মব ট্রায়াল’ বা ‘মব জাস্টিস’ বলা যেতে পারে। যখন একজন মানুষ আইনের আশ্রয়ে থাকেন, তখন এমনটা করা কোনোভাবেই উচিত নয়। এ ঘটনাগুলো আদালতের প্রতি অপমান বা অবমাননা। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের শাসন এবং আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

এম এ মতিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।