বিশেষ সাক্ষাৎকার: আবদুস সালাম
তুড়ি মারলাম আর বায়ুদূষণ কমে গেল, তা তো হবে না
ড. আবদুস সালাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ–গবেষক। অস্ট্রিয়ার টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা থেকে পিএইচডি করেছেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল অ্যাটমস্ফেরিক কেমিস্ট্রির (আইজিএসি) কো-চেয়ার। দেশের বায়ুদূষণ নিয়ে বর্তমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাফসান গালিব
প্রশ্ন :
বায়ুমানের দিকে ঢাকার পরিস্থিতি খারাপ বলেই আমরা জানতে পারছি। পরিস্থিতিটা আসলে কেমন?
আবদুস সালাম: বায়ুদূষণের বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বা ঢাকা শহরের অবস্থা খুব খুব খুবই খারাপ। আর আমাদের আশপাশের দেশগুলো যাদের একসঙ্গে ইন্দো গাঙ্গেটিক প্লেইন (আইজিপি) বলে, সেখানে বাংলাদেশসহ আছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল—এই সব দেশ। আইজিপির এসব দেশের বায়ুদূষণ কাছাকাছি। তবে আফ্রিকার চেয়েও আমাদের অবস্থা খারাপ। আর আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বাংলাদেশের বায়ুদূষণ নিয়ে যত কথাবার্তা হয়, সেখানে শুধু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা পিএম ২.৫-এর বিষয়টিই উঠে আসে। আসলে বায়ুদূষণের সঙ্গে অনেকগুলো রাসায়নিক উপাদান যুক্ত, সেগুলো নিয়ে তেমন কথাবার্তা নেই। সেগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ এখানে। এই যে কালো ধোঁয়া, যেখান থেকে ব্ল্যাক কার্বন বের হয়, এটিও একটি রাসায়নিক উপাদান। অনেকগুলো লম্বা চেইনে দীর্ঘ সময়জুড়ে স্থায়িত্ব থাকে এর। এর পরিমাণ বাংলাদেশে এখন প্রতি ঘনমিটারে ১০-১২ মাইক্রোগ্রাম। অথচ আমেরিকা বা ইউরোপের কোনো শহরে তা ০.১ থেকে ০.৫ মাইক্রোগ্রাম। তাহলে বাংলাদেশের বায়ুতে ব্ল্যাক কার্বনের উপস্থিতির পরিমাণ সেসব দেশের তুলনায় ১০০ বা ১২০ গুণ বেশি।
প্রশ্ন :
সংবাদমাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ে শিরোনামে দেখা যায়, ঢাকার বাতাস বিপজ্জনক, অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ। এসব কিসের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়। সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো কীভাবে বুঝবে?
আবদুস সালাম: এয়ার ভিজ্যুয়াল নামে একটা গ্লোবাল নেটওয়ার্ক আছে, এটি মূলত একটি কোম্পানি। তারা সারা বিশ্বের বায়ুদূষণ পরিমাপ করার জন্য একটি যন্ত্র বিক্রি করে। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আমার কক্ষেও এ রকম একটি যন্ত্র আছে। এ রকম যন্ত্র ঢাকা শহরে বেসরকারিভাবে আরও কয়েক জায়গায় আছে। গোটা বিশ্বে কোম্পানিটির যন্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোম্পানিটি এসব যন্ত্র থেকে সেই সব জায়গার তথ্য সংগ্রহ ও সমন্বয় করে তাদের একটি বিশেষ সফটওয়্যারের সাহায্যে। এর মাধ্যমে তারা একটা র্যাঙ্কিং দেয়। সেই র্যাঙ্কিং অনুযায়ী প্রায় সময় আমরা শুনি, ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর বা খুব খারাপ, বিপজ্জনক বা দুর্যোগপূর্ণ। মূলত বাতাসে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি মানে বাতাসে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তাদের আকার ২.৫ এর সমান বা ছোট, সেসবের ভিত্তিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব করে ইয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) বের করা হয়। সেখানে একিউআই যদি দেখা যায় ০-৫০ তাহলে বাতাসের অবস্থা স্বাস্থ্যের জন্য মোটামুটি ভালো, ৫০-১০০ থাকলে একটু খারাপ কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। এর ওপরে গেলে আরও খারাপ হতে থাকে। ২৫০-৩০০ হলে খুবই বিপজ্জনক। এই পর্যায়ে বাংলাদেশ বছরে অনেক দিন থাকে। তবে শুধু পিএম ২.৫ নয়, একিউআই পরিমাপ করার জন্য আরও প্যারামিটার আছে। একিউআইয়ের মান অন্য রকম হয়।
প্রশ্ন :
আগেও বায়ুদূষণের দিকে বিশ্বের শীর্ষ শহরের তালিকায় দেখা গিয়েছিল ঢাকাকে। এবার টানা অনেক দিন ধরে সেটি দেখা যাচ্ছে। কেন এমনটা হচ্ছে?
আবদুস সালাম: বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ দেশ বা শহরের তালিকায় বাংলাদেশ বা ঢাকার নাম বছরের অনেক দিনই থাকে। এমন পরিস্থিতি এবারই প্রথম হয়েছে তা কিন্তু নয়। এবার হয়তো কয়েক দিন বেশি থাকতে পারে। কিন্তু আমি গত ২০১৮ সাল থেকে টানা পর্যবেক্ষণ করে দেখছি। বাংলাদেশ টানা সময় পিএম ২.৫-এর জন্য বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। কেন এমনটি হচ্ছে বলতে গেলে, সরকার বা এ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
প্রশ্ন :
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সব দিন ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে। এটি তো ভয়াবহ একটি ব্যাপার।
আবদুস সালাম: আমরা গবেষকেরা মনে করি, এটি ৪৮ দিন নয়, আরও কম। আমি শুরুতে যে র্যাঙ্কিংয়ের বিষয়ে বললাম, সেই অনুসারে দিনগুলো গণনা করে বের করা হয়েছে। আমরা ভালো বাতাস পাই বছরে মাত্র ৩০-৩৫ দিন। বছরের বাকি সব দিনের অবস্থা খারাপ। এখন যে কয়টা দিন বাতাসের অবস্থা ভালো থাকে বলা হচ্ছে, তার মানে এই নয় যে ওই সময় আমরা দূষণ কম করছি বা দূষণ রোধে কোনো ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নিচ্ছি। মূলত জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। ফলে বাতাসে দূষণের উপাদানগুলো বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এ জন্য বাতাসটা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার থাকে। এটি আসলে প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে।
প্রশ্ন :
ঢাকা শহরের পরিস্থিতি কি দিল্লি বা বেইজিংয়ের দিকেই যাচ্ছে?
আবদুস সালাম: বেইজিংয়ের অবস্থা এখন বেশ ভালো। দিল্লি, বেইজিং, ঢাকা—এই তিন শহরের বায়ুদূষণ তুলনা করলে বেইজিংয়ের অবস্থা একসময় খুব খারাপ ছিল। সবচেয়ে খারাপ ছিল। বেইজিং কিন্তু পরে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে তাদের বায়ুদূষণ এখন কমে আসছে। দিল্লির অবস্থা এখনো খারাপ আছে। তবে তারাও অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের এখানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি না। বায়ুদূষণ রোধে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন করুণ পরিণতি দেখতে হবে আমাদের।
প্রশ্ন :
বিশ্বের অন্যান্য শহর বায়ুদূষণ রোধে কী রকম উদ্যোগ নিয়ে থাকে? আমরা কীভাবে তাদের অনুসরণ করতে পারি?
আবদুস সালাম: এখন থেকে ৭০ বছর আগে গেলে দেখা যাবে, আমেরিকার অনেক শহরে আমাদের মতো বায়ুদূষণ ছিল। ১৯৫৪ সালে লন্ডন স্মোক নামে একটি ঘটনা আছে। সে সময় সেখানে ভয়াবহ বায়ুদূষণ দেখা দিয়েছিল। কিছু মানুষও মারা যায়। ৫০-৬০ বছর আগে জাপানেও অনেক শহরে বায়ুদূষণ ছিল। তারা কিন্তু বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। সেখানকার শহরগুলোর অবস্থা এখন বেশ ভালো। বেইজিংসহ চীনের অনেকগুলো শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা এখন নিচের দিকে। কারণ, তারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। বৈদ্যুতিক যানবাহন চালু করছে। ডিজেল বা অকটেন মানে জীবাশ্ম জ্বালানির গুণগত মান নিশ্চিত করছে। অবকাঠামো নির্মাণ কর্মকাণ্ডে তারা পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এ রকম অনেকগুলো পদক্ষেপ তারা নিয়েছে। সেগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি। বিষয়টা এমন না যে একটা তুড়ি মারলাম, সঙ্গে সঙ্গে বায়ুদূষণ কমে গেল।
প্রশ্ন :
নানা গবেষণায় বায়ুদূষণের কিছু কারণ আমরা ঘুরেফিরে শুনে থাকি। আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই, প্রধান কারণগুলো কী?
আবদুস সালাম: গাড়ি বা বিভিন্ন কলকারখানার যন্ত্রপাতি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া এখানে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। তারপর অবকাঠামো নির্মাণের ফলে সৃষ্ট দূষণ। ইটভাটার কথা বলা হয়ে থাকে, তবে এখন ঢাকায় বায়ুদূষণের জন্য এটি বড় কোনো কারণ নয়। অন্য কারণগুলোই এখানে প্রধান। হাজার রকমের উৎপাদন কারখানা আছে, চালকল আছে, প্লাস্টিক বা টায়ার রিসাইক্লিং আছে। হয়তো এদের অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান, কিন্তু এরা যে বায়ুদূষণ তৈরি করে তা বেশি মাত্রায়। এরপর আছে রান্না থেকে সৃষ্ট দূষণ। এটি শুধু লাকড়ি দিয়ে রান্না নয়, গ্যাসের রান্নার ক্ষেত্রেও, যেহেতু আমাদের বাসাগুলো বাতাস চলাচলের পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয় না। আবার শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চার মাসে দেশের বাইরে থেকেও প্রচুর পরিমাণ দূষিত বায়ু বাংলাদেশের ওপরে আসে।
প্রশ্ন :
পরিবেশ অধিদপ্তর দাবি করে থাকে, বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটাগুলো সবচেয়ে বেশি দায়ী। আবার পরিবেশমন্ত্রীর বক্তব্য, দেশের ৬০ শতাংশ ইটভাটাই অবৈধ। সেসব ইটভাটা বন্ধ করার দায়িত্ব তো তাঁদের। সেটি তো তাঁরা করছেন না।
আবদুস সালাম: আপনি আসলে ঠিকই বলছেন। এখানে মূলত সিস্টেমটা দায়ী। একদিকে তারা বলছে এরা দূষণ তৈরি করছে। আরেক দিকে বলছে, এরা অবৈধ। অথচ এদের ছাড়পত্র তারাই দিচ্ছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, সিস্টেমে কোনো না কোনোভাবে গলদ আছে বা গাফিলতি আছে। আরেকটি জিনিস এখানে আমি বলতে চাই, ইটভাটা অবশ্যই বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে। তবে ইটভাটার বিষয়ে যেভাবে দাবি করা হচ্ছে, তা আমার কাছে অতিরিক্ত বলে মনে হয়। অন্য কারণগুলোকে আড়ালে রাখার জন্য ইটভাটার বিষয়টিকে বেশি করে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে।
প্রশ্ন :
বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্ট থেকে করণীয় নির্দেশ করা হলেও তা কতটা মানা হচ্ছে আসলে?
আবদুস সালাম: আদালত বিভিন্ন সময় বায়ুদূষণ নিয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেখানে কিছু করণীয় কথা বলা থাকে। কিন্তু যখন আদালত এসব দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন, তখন সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো একটু তৎপর হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। একটা জিনিস খেয়াল করবেন, সরকারের যেসব সংস্থা এখানে দায়িত্ব পালন করা কথা, তারা সব সময় বলে থাকে যে তাদের জনবলসংকট, তাদের সামর্থ্যের নানা ঘাটতি আছে। আমার মনে হয়, তারা যখন সবকিছুই নিজে করতে যাবে, এতে সহজে সমাধান আসবে না। তারা মূলত কাজটিকে সমন্বয় করবে, সবাইকে নিয়ে করবে। সেখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এমনকি সংবাদমাধ্যমও থাকবে। সবাই যার যার জায়গায় তার ভূমিকাটা পালন করবে।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশে বায়ুদূষণ রোধে আইনগুলোকে কতটা কার্যকর বলে মনে করেন? এখানে দূষণকারীরা যে সাজা বা শাস্তি পেয়ে থাকেন, তা যথেষ্ট কি না?
আবদুস সালাম: এখানে যে আইনগুলো আছে, সেগুলো শতভাগ কার্যকর করা হয় না। আমাদের অনেক সুন্দর সুন্দর আইন আছে। যেমন কেউ যখন বাড়ি করবে, নির্মাণসামগ্রী রাস্তাঘাটে ফেলে রাখতে পারবে না। কিন্তু এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি, বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারীকে জরিমানা করা হয়। শুধু জরিমানা যথেষ্ট কোনো শাস্তি নয়। অনেকে নতুন আইন করার জন্য বলে থাকেন। কথা হচ্ছে, যেসব আইন আছে, সেগুলোই তো আমরা ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারি না। এখানে অনিয়ম, দুর্নীতি বা নানা যোগসাজশের ঘটনা থাকে। সেগুলো তো দূর করতে হবে। আইনে কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী গাড়ি চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তাহলে সেই গাড়ি রাস্তায় কীভাবে চলে? এগুলো তো আগে বন্ধ করতে হবে।
প্রশ্ন :
সরকারের কোন কোন সংস্থাগুলো বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে?
আবদুস সালাম: আমি মনে করি, এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের বড় ভূমিকা রাখা দরকার। এখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা বিভিন্ন নির্মাণকাজের জন্য দায়ী হয়তো সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা ওয়াসা। বর্জ্য অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী সিটি করপোরেশন। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বিআরটিএ ও পুলিশের। বড় বড় প্রকল্প চলছে, সেগুলো বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়, এতে বড় দূষণ তৈরি হয়, সেগুলোও দেখার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে নানা সংস্থার। রাজউক নতুন করে শহর পরিকল্পনা করছে, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলার মাঠ, লেক, স্কুল হচ্ছে কি না, সেটি দেখার দায়িত্ব তাদের। ফলে এখানে অনেকগুলো মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব আছে। সবাই যার যার দায়িত্ব ঠিকমতো মেনে চললে বায়ুদূষণ এমনিতেই কম হবে। এ ছাড়া সবার কাজের মধ্যে একটি সমন্বয় করতে হবে। একটি সংস্থার কাজের জন্য একটি রাস্তা খোঁড়া হলো, দেখা গেল আরেকটি সংস্থা কিছুদিন পর তাদের কাজের জন্য আবার রাস্তাটি খুঁড়ল। কথা হচ্ছে সমন্বয় থাকলে একবার খুঁড়েই তো উভয় সংস্থা তাদের কাজটি করতে পারত। সবাই তো সরকারি সংস্থা। যাঁরা কাজগুলো করছেন, তাঁদেরও তো বিষয়গুলো ভাবতে হবে। কারণ, তাঁরা নিজেরাও বা তাঁদের সন্তানেরাও তো এখানে নিশ্বাস নিচ্ছেন। তাঁরাও তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সবাই হচ্ছে।
প্রশ্ন :
বায়ুদূষণের কারণে বছরে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এরপরও এটি নিয়ে কারও মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে না কেন?
আবদুস সালাম: কারণ হচ্ছে, বায়ুদূষণের কারণে এ মৃত্যুটা ঘটছে অদৃশ্যভাবে ঘটছে। কেউ ক্যানসারে মারা গেলে সেটি নিয়ে উদ্বেগ দেখা যায়। কিন্তু ক্যানসারটা যে বায়ুদূষণের কারণেও হতে পারে, সেটি কেউ ভাবে না। আর অনেকে জানেই না যে বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যু হতে পারে। আমরা পুরান ঢাকায় একটি কারখানায় গিয়েছিলাম স্যাম্পলিংয়ের জন্য। সেখানে এত বেশি বায়ুদূষণ ঘটছে যে আমাদের স্যাম্পলিং একেবারে কালো হয়ে যাচ্ছিল। এখন সেটি নিয়ে তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব নয়। ২৪ ঘণ্টা ধরে স্যাম্পলিং করার কথা থাকলেও মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর আমাদের ফিরে আসতে হয়। সেখানে অল্পবয়সী বা শিশুরাও কাজ করছিল। তারা বায়ুদূষণের বিষয়টা জানেই না। দীর্ঘদিন ধরে যদি তার জীবনযাপন ট্র্যাক করা যায়, তাহলে দেখা যাবে সে বেশি দিন সুস্থ থাকতে পারছে না। এভাবে কিন্তু মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে। প্রসূতি মা ও নবজাতকের পরিচর্যার নানা কর্মসূচিতে দেশে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। দেশের গড় আয়ু বেড়েছে। কিন্তু সরকারের সেই সাফল্য খাদ্যে ভেজাল বা বায়ুদূষণের মতো কারণে থমকে যাচ্ছে।
প্রশ্ন :
এখানে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
আবদুস সালাম: বায়ুদূষণ এখন এ রাষ্ট্রের বড় একটি সমস্যা। রাষ্ট্র সেটি কেন বুঝছে না বা বুঝতে চাইছে না। এখানে সরকার বলেন বা রাজনৈতিক নেতা বলেন, তঁাদের সদিচ্ছাটা জরুরি। কারণ, তাঁরাই আইনপ্রণেতা হন। আমরা ব্যক্তিগতভাবে যত কথাই বলি, এতে পরিস্থিতি বদলাবে না। সেটি করতে পারে সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ সমস্যার দিকে মনোযোগী হতে হবে। সামনেই একটি জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার দেয়। আমি মনে করি, প্রতিটি দলের ইশতেহারে থাকা উচিত, পরিবেশ বা বায়ুদূষণ রোধে আমরা কাজ করব। দেশকে বায়ুদূষণমুক্ত করব।
প্রশ্ন :
আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুস সালাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।