বিশেষ সাক্ষাৎকার: এম হাফিজ উদ্দিন খান

গুলি–গ্রেপ্তার করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় না

এম হাফিজ উদ্দিন খান। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সোহরাব হাসানমনোজ দে 

প্রথম আলো:

একটা অভাবনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে রূপ নিল। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত আড়াই শ মানুষ নিহত হলো। অনেক রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হলো। সামগ্রিকভাবে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি, তখন আইয়ুব খানের মার্শাল ল জারি হলো। এরপর ’৬২-এর ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, এরপর বাংলাদেশ হওয়ার পর এরশাদবিরোধী আন্দোলন দেখেছি। কিন্তু কোনো আন্দোলনেই এবারের মতো দেখিনি। এবারের আন্দোলনে সরকার যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটাও আগে দেখা যায়নি। এত প্রাণহানি, এত রক্তপাত আমাদের দেশে কোনো গণ-আন্দোলনে হয়নি। এটা একটা অভাবনীয় ও অকল্পনীয় ঘটনা। খুবই মর্মান্তিক ও কষ্টের। সংবাদপত্রে দেখলাম, যেসব মৃত্যু হয়েছে, তাদের বড় অংশই সরাসরি গুলিতে মারা গেছে। চোখের সামনে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো যদি ঢাকার চেষ্টা করা হয়, সেটা ঠিক নয়। যেটা ঘটেছে, সেটার দায় সরকারের স্বীকার করা উচিত।

প্রথম আলো:

আগের আন্দোলনগুলো থেকে এবারের আন্দোলনের পার্থক্য কী মনে করছেন? শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ কেন নেমে এল? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: এবারের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ নেমে আসার কারণ হলো তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ রয়ে গেছে। গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও একনায়কতন্ত্র চলছে। এটার জন্য মানুষের মনে দুঃখ আছে, ক্ষোভ আছে। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন জেরবার। ৪০০ টাকা দিয়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনতে হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা না হয় কোনোমতে চলছি, কিন্তু সাধারণ মানুষের অবস্থা তো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। দিন দিন জিনিসপত্রের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের দিক থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নেই। 

প্রথম আলো:

আপনি দীর্ঘদিন প্রশাসনে ছিলেন। এখন যেভাবে প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটাকে কীভাবে দেখেন? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: দুর্নীতি বরাবরই ছিল। ১৯৬৪ সালে আমি যখন চাকরি শুরু করেছিলাম, তখনো দুর্নীতি ছিল। কিন্তু সেটা এত ব্যাপক মাত্রায় ছিল না। এখন তো আমলাতন্ত্র নয়, সরকারি দল, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী—সবখানেই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। 

■ জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের দিক থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নেই।

■ ঋণখেলাপিদের বেশির ভাগই সরকারের লোক, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। 

■ বিচারের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। দেশে আইনি প্রতিকারের সুযোগ কম।

■ মানুষ চায় গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার, সভা-সমিতি করার অধিকার এবং ভোট দেওয়ার অধিকার। 

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা বিদেশে অর্থ পাচার। এটা কীভাবে রোধ করা যায়?

এম হাফিজ উদ্দিন খান: একশ্রেণির লোক টাকা পাচার করে দেশকে ফতুর করে ফেলছে। এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যাঁদের টাকাপয়সা হয়েছে, তাঁদের প্রায় সবাই টাকা পাচার করেন। টাকা পাচার বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। ঋণখেলাপিদের নিয়েও সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোও লোকদেখানো, কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নয়। যাঁরা ঋণখেলাপি তাঁদের পাসপোর্ট জব্দ করেন, তাঁদের গাড়ির লাইসেন্স না দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। বরং প্রতিবছরই তাঁদের খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ করে দেওয়া হয়। 

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা বিদেশে অর্থ পাচার। এটা কীভাবে রোধ করা যায়?

এম হাফিজ উদ্দিন খান: একশ্রেণির লোক টাকা পাচার করে দেশকে ফতুর করে ফেলছে। এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যাঁদের টাকাপয়সা হয়েছে, তাঁদের প্রায় সবাই টাকা পাচার করেন। টাকা পাচার বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। ঋণখেলাপিদের নিয়েও সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোও লোকদেখানো, কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নয়। যাঁরা ঋণখেলাপি তাঁদের পাসপোর্ট জব্দ করেন, তাঁদের গাড়ির লাইসেন্স না দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। বরং প্রতিবছরই তাঁদের খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ করে দেওয়া হয়। 

প্রথম আলো:

আপনি তো অর্থনীতিবিদ। উপদেষ্টা হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে কীভাবে দেখছেন? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এমনিতেই কমে গেছে, ডলার-সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এবারের অসন্তোষে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসাও কমে গেছে। সব মিলিয়ে আর্থিক খাত দুরবস্থার মধ্যে আছে। এসব দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সুপারিশের কোনো অভাব নেই। কিন্তু সরকার সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করে না। ঋণখেলাপিদের বেশির ভাগই সরকারের লোক, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। 

প্রথম আলো:

এই আন্দোলনে নিহতদের যেসব তথ্য এসেছে, তাতে দেখা যায়, ৭৫ শতাংশ কম বয়সী। আরেক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৭৮ শতাংশ মৃতের শরীরে প্রাণঘাতী বুলেটের ক্ষত। বিক্ষোভ প্রশমনে এভাবে নির্বিচার গুলিবর্ষণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

এম হাফিজ উদ্দিন খান: সিআরপিসি (ফৌজদারি কার্যবিধি) এবং অন্যান্য আইনে বলা আছে, পুলিশকে গুলি করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ থাকতে হয় এবং পায়ে গুলি করতে হয়। কিন্তু এবার আমরা দেখলাম, যাঁরা গুলিতে হতাহত হয়েছেন তাঁদের মাথায়, চোখে, বুকে, পেটে গুলি লেগেছে। এর মানে হলো, ন্যূনতম যে আইন আছে সেটাও মানা হয়নি। কোথাও কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছিল বলে শুনিনি।

সংবাদপত্রে দেখলাম পুলিশ বলছে, যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছেন। যদি এভাবে সত্যকে বিকৃত করা হয় তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো গুলি চালাতে উৎসাহিত হবেই। আইন প্রয়োগ যাঁরা করছেন, তাঁদের মধ্যেই আইন না মানার প্রবণতা দেখা যায়। 

প্রথম আলো:

এবারের আন্দোলন এভাবে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ঘটনাটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে, খুব কাছ থেকে আবু সাঈদের বুক, পেট বরাবর গুলি ছোড়া হচ্ছে। অথচ পুলিশের এফআইআরে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের গুলি ও ইটপাটকেলে নিহত হয়েছেন তিনি। কীভাবে দেখছেন? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: সরকার চেষ্টা করছে দোষটা যেন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর না আসে। আবু সাঈদের বুকে পুলিশের গুলির ঘটনা দিবালোকের মতো সত্য। সবাই দেখেছে। ফলে সরকার সত্য আড়াল করার চেষ্টা করছে। আমরা প্রথম আন্দোলন দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কয়েকজন শহীদ হওয়ায় কত কী ঘটে গেল। এবারে তো কত বড় আন্দোলন, কত আত্মত্যাগ।

প্রথম আলো:

চলমান আন্দোলনে নিহতের ঘটনা তদন্তে সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। এই তদন্ত কমিশনের ওপর কতটা আস্থা রাখা যায়? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাতেই যদি ভিন্ন রকম বয়ান তৈরি করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তদন্ত কমিশনের ব্যাপারটা কী হতে পারে, সেটা তো বোঝাই যায়। 

প্রথম আলো:

সরকার বলছে, এ ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়া হবে। এ ধরনের তদন্তে বাইরের সহযোগিতা কার্যকর? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: আন্দোলনকারী ও নাগরিক সমাজের জায়গা থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করার দাবি উঠেছে। সরকারের দিক থেকেও এ ব্যাপারে বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বললে তখন এ ধরনের তদন্তের প্রশ্ন আসবে। তখন কারা আসবে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী, কাজের আওতায় কতটুকু—এসব বিষয় না দেখে এখনই মন্তব্য করা যাবে না।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা তদন্তে এফবিআইয়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। তারা এসেছিলও। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে জাতিসংঘ আসুক কিংবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাই আসুক, তদন্তের বিষয়টি সরকারের সদিচ্ছার ওপরেই নির্ভর করে। 

প্রথম আলো:

একটা গণতদন্ত কমিটি হয়েছে। গণতদন্ত কমিটি সত্য বের করতে পারবে? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: তাদের যদি বাধা না দেওয়া হয়, তাহলে তারা চেষ্টা করলে সত্যটা বের করে নিয়ে আসতে পারবে বলে আমি মনে করি। কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা আমাদের সমাজের শ্রদ্ধেয় ও প্রথিতযশা মানুষ। 

প্রথম আলো:

কিন্তু বিচার হতে গেলে তো প্রতিটি লাশের ময়নাতদন্ত দরকার। অনেক লাশের তো ময়নাতদন্ত ছাড়া বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা ময়নাতদন্ত না করেই স্বজনের লাশ নিয়ে গিয়ে দাফন করেন। তাঁরা ঝামেলা এড়াতে চান। এর কারণ হলো, বিচারের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। দেশে আইনি প্রতিকারের সুযোগ কম। বিচার তো হবে পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। সেই তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া গেলে বিচার কেমন করে হবে! 

প্রথম আলো:

প্রথম আলো: দেখা যাচ্ছে শুধু ঢাকাতেই ২২৯টি মামলা হয়েছে। আসামি প্রায় ২ লাখ। এলাকা ঘিরে ব্লক রেইড দিয়ে গণগ্রেপ্তার চলছে। এভাবে কি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: সাড়ে ১৭ বছরের একটা কিশোরকে হাতকড়া লাগিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল। আদালত তাকে রিমান্ডও দিয়েছিল। পরে তার রিমান্ড বাতিল করে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। আইনকানুন যারা প্রতিষ্ঠা করবে, তারা যদি আইনকানুন না মানে, সেখানে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। গুলি চালিয়ে, গণগ্রেপ্তার করে কখনো কোথাও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। বাংলাদেশেও সেটা হবে না। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন এখন এক দফার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। সরকারের ব্যর্থতার জন্যই এটা হয়েছে। 

প্রথম আলো:

আমাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সুষ্ঠু নির্বাচন—এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন? বিশেষ করে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ। 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: ভূরাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে। কিন্তু শুধু ভূরাজনৈতিক স্বার্থের জন্য সেটা বলা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিনেটর আমাদের এখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। এবারের ঘটনায়ও অনেকে নিন্দা জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, নিন্দা জানিয়েছে। 

প্রথম আলো:

ছয়জন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আটকে রাখা হলো। তাঁদের দিয়ে বিবৃতিও দেওয়ানো হলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি কাউকে এভাবে আটকে রাখতে পারে? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: এরপর কেমন করে মানুষ আইন ও বিচারব্যবস্থার ওপর নির্ভর করবে? ছয়জনকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হলো ডিবি কার্যালয়ে। সবাই জানে এটা বেআইনি কার্যক্রম। তারপরও তাঁদের ছয় দিন আটকে রাখা হলো। বলা হলো নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। 

প্রথম আলো:

অতীতে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকত। সাম্প্রতিককালে তাদের সে রকম অংশগ্রহণ লক্ষ করা যাচ্ছে না। 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় এবার তাদের কিছু ভূমিকা দেখা গেছে। কিন্তু যতটা জোরালো ভূমিকা দরকার, সেটা হয়তো নেই। আমার মনে হয়, এর পেছনে একটা ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আজাদ সম্পাদক শামসুদ্দীন আবুল কালাম প্রাদেশিক পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু এখন তো সেটা কল্পনা করা যাবে না। 

প্রথম আলো:

যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলো, তা থেকে উত্তরণের পথ কী? 

এম হাফিজ উদ্দিন খান: শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। ছাত্রদের যে আন্দোলন ছিল, তাদের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকেরা যোগ দিল, সেটা শুধু কোটা আন্দোলনের বিষয় থাকল না। মানুষ চায় গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার, সভা-সমিতি করার অধিকার এবং ভোট দেওয়ার অধিকার। এগুলো তো সাংবিধানিক অধিকার। ক্যাম্পাসে ছাত্ররা যাতে নিরাপদে ও নির্ভয়ে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

সমস্যা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ভাগাভাগি আছে, আইনজীবীদের মধ্যে ভাগাভাগি আছে। সাংবাদিকদের মধ্যে ভাগাভাগি। দেশটা তো দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এটা দেশের জন্য খুব খারাপ দিক। একটি ন্যায়সংগত দাবি নিয়েও আমরা এক হতে পারি না। এই যে ভাগাভাগি, সেটা নীতি–আদর্শের কারণে নয়, বরং ক্ষমতার ও স্বার্থের কারণে। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।