বিশেষ সাক্ষাৎকার: দেবাশীষ রায়

পার্বত্যবাসী মনে করে সেখানে সংঘাত ঘটতে দেওয়া হচ্ছে

পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার সহিংসতা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকা। এই সহিংসতা, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের শান্তি, ওই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ—এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা

প্রথম আলো:

আবার অশান্ত হয়ে উঠল পার্বত্য চট্টগ্রাম। গণপিটুনিতে একজন বাঙালি নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে কয়েক দিনের সহিংসতায় চারজন পাহাড়ির প্রাণ গেছে। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে যে মাত্রার সহিংসতা দেখা গেল, এর পেছনে কোনো বিশেষ কারণ আছে বলে মনে করেন কি?

দেবাশীষ রায়: মোটরসাইকেল চুরির একটি অভিযোগে এক বাঙালি যুবক গণপিটুনিতে নিহত হন, এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু এর সঙ্গে বাকি হত্যা ও সহিংসতাকে মিলিয়ে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জাতিগত বিষয় ছিল, উত্তেজনা ছিল। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা বা ভূমিকার অনুপস্থিতির বিষয়ও জড়িত ছিল।

এমন রটেছিল যে বাঙালি যুবককে পাহাড়িরাই হত্যা করেছেন। পরে দেখা গেল, সেই যুবকের স্ত্রী যখন মামলা করলেন, সেখানে তিনি সব বাঙালির নাম উল্লেখ করেছেন। তাই সেই যুবককে কেবল পাহাড়িরা মেরেছেন বলে যেটা বলা হয়েছিল, সেটা আসলে গুজব। পাহাড়িদের ওপর যাতে বাঙালিদের ক্ষোভ হয়, তা উসকে দিতেই বলব যে এই গুজব রটানো হয়েছিল। কোনো মহল থেকে এটা ছড়ানো হয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ জানে। দেশের বাকি অংশের মানুষ? তাঁরা কি আসলে জানতে চান কী হয়েছে?

প্রথম আলো:

পাহাড়ে এ ধরনের ঘটনা তো নতুন নয়। বারবার এটা কেন হয়?

দেবাশীষ রায়: এটা ঠিক বলেছেন। আমার সার্কেল চিফ হওয়ার ৪৭ বছরে কেবল রাঙামাটি শহরে এ ধরনের অন্তত চারটি সহিংসতা হলো। এর মধ্যে ১৯৯২ সালের ২০ মে, ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালের ১০ থেকে ১৩ জানুয়ারি এবং এবারে ২০২৪-এ ২০ সেপ্টেম্বর। প্রতিবার ঘটনা ঘটে আর প্রশাসন থেকে বলা হয় যে আমরা যেন পুরোনোটা ভুলে যাই। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের নিশ্চয় প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি (ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি) বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে বা থাকা উচিত। আগের তিন ঘটনায় কারা আক্রান্ত হয়েছেন, কত ক্ষতি হয়েছে, আর ঘটনার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের আদৌ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না—এগুলো না জানলে ও না বুঝলে ভবিষ্যতের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেব? কোনো ঘটনা কিন্তু রাতে হয়নি, দিনদুপুরে হয়েছে। আবার গ্রামে হয়নি, খোদ রাঙামাটি শহরে হয়েছে।

আগের ঘটনাগুলো যাঁরা ঘটিয়েছেন, তাঁরা যদি শাস্তি না পেয়ে থাকেন, তবে এটা কি তাঁদের পক্ষে ভাবা স্বাভাবিক নয় যে এসব করলে কোনোক্রমেই শাস্তি পেতে হয় না। এতে তাঁরা বা তাঁদের সমর্থনকারী মহল কি আরও উৎসাহিত হবে না? রাঙামাটির গত চারটি সহিংসতার ঘটনায় নিহত-আহত, ঘরবাড়ি ধ্বংস, সম্পদহানি—এসবের তালিকা যদি করেন, তবে দেখা যাবে ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষতি হয়েছে পাহাড়িদের। আর ক্ষতিমূলক কর্মকাণ্ড যাঁরা করেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে তাঁরা পাহাড়ি না, সেটা অঞ্চলের পাহাড়ি-বাঙালি সবাই জানে।

প্রথম আলো:

দেশে বড় ধরনের একটি গণ-আন্দোলন হলো। এরপর নতুন সরকার গঠিত হলে। যখন সেই সরকার কাজ ‍শুরু করেছে, কেবল তখনই এত বড় একটা ঘটনা ঘটল। এর নেপথ্যে কোনো বিষয় কাজ করেছে বলে আপনার মনে হয়?

দেবাশীষ রায়: পাহাড়ের নানা ঘটনায় ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ থাকে। আমি তার মধ্যে যাচ্ছি না। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, নতুন যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেখানে যাঁরা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাঁরা যদি জানতেন যে এমন কিছু পাহাড়ে ঘটতে পারে, তাঁরা তা হতে দিতেন না। কিন্তু এসব ঘটনার প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি সরকারের আছে বলে আমার মনে হয় না। গোয়েন্দা দপ্তরগুলোর ফাইলে কী আছে, তা আমি জানি না।

এবারের ঘটনার দায়িত্ব নিতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামে যাঁরা সরকারি কর্মকর্তা আছেন, তাঁদের। তাঁরা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা বাহিনী, যারাই হন না কেন। এখন অন্তর্বর্তী সরকার যদি তার অবস্থান পরিষ্কার করতে চায়, তবে তাকে কিছু কাজ করতেই হবে নিজেদের সত্যিকারের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে। জাতিসংঘের ও বাংলাদেশের বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে।

প্রথম আলো:

এ ব্যাপারে আপনি বা আপনারা কি কোনো দাবি করেছেন সরকারের কাছে?

দেবাশীষ রায়: হ্যাঁ, ইতিমধ্যেই আমি সরকারের উপদেষ্টাদের সামনে পাহাড়ের ঘটনার তদন্তে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, যথাযথভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্ষমতায়িত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি। সেই তদন্ত কমিশনে অন্তত ৫০ শতাংশ নারী থাকা উচিত। সেখানে মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী, নৃবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী এবং অবশ্যই আইন ও বিচার বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি থাকা উচিত। সরকার চাইছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সংঘটিত নানা সহিংসতার তদন্ত জাতিসংঘের মাধ্যমে করতে। পাহাড়ে এত দিন ধরে বেশির ভাগ সহিংসতার বিচার হয়নি। জাতীয়ভাবে কমিশনের তদন্ত ছাড়াও জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি দ্বারাও তদন্ত করা উচিত। এর মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ হতে পারে।

কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট আছে ১৯৬৫-এর। সরকারের উচিত এর অধীনে কমিশন করা একাধিক সদস্য নিয়ে। তার একটা বৃহত্তর ম্যান্ডেট থাকবে। কী ঘটেছে সেটা জানা, শাস্তির বিধান এবং ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয় বিশদে থাকতে হবে। কমিশনের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

প্রথম আলো:

এসব সহিংসতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কোনো পথ আছে বলে মনে করেন কি?

দেবাশীষ রায়: একটা উদাহরণ দিই। এবারে রাঙামাটির সহিংসতার পর চারজন মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তি রাঙামাটি এসেছিলেন। তাঁদের সামনেই আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি বলছিলেন, পরিষদের ভবনে আগুন লাগার পর অনুরোধ করেও ফায়ার সার্ভিসের কাউকে সেখানে আনা যায়নি। চার ঘণ্টা পর তাঁরা এসেছেন। এই উদাহরণ দিলাম এ জন্য যে এখানকার নিরাপত্তা বাহিনীসহ যত ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, সবখানে নিরঙ্কুশ বাঙালি প্রাধান্য। অথচ এখানে একটি মিশ্র বাহিনী গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের এবং ১৯৮৯ থেকে এ বিষয়ে আইনি বিধানও রয়েছে। যেখানে পাহাড়ের প্রতিটি জাতিসত্তার মানুষের সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এটা তো ন্যায্য একটি বিষয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হলো না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য বিশ্বের নানা দেশে এমন বাহিনী হয়েছে এবং তার ইতিবাচক ফলও পাওয়া গেছে।

প্রথম আলো:

পার্বত্য চুক্তিতে তো এমন বিষয় যুক্ত ছিল।

দেবাশীষ রায়: শুধু পার্বত্য চুক্তি নয়, ১৯৮৯ সালে যখন তিন জেলা পরিষদ গঠিত হলো, তার আইনেও পুলিশের কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল। আইনে বলা হয়েছিল, ‘অন্য কোনো আইনে যাহাই থাকুক না কেন …’, এই আইন বলবৎ হবে। অর্থাৎ ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে বিধান না থাকলেও জেলা পরিষদ আইনের মাধ্যমে তা করা সম্ভব ছিল। পরে ১৯৯৭-এর পার্বত্য চুক্তিতে সাব-ইন্সপেক্টর বা এসআই পর্যন্ত নিয়োগ জেলা পরিষদ করতে পারবে বলে বলা হয়, কিন্তু তা হয়নি। বিশ্বের নানা অঞ্চলে, যেমন পূর্ব ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক হানাহানি নিরসন করতে মিশ্র পুলিশ বাহিনী ভূমিকা রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এমন একটি বাহিনী তৈরি করতে প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। কেন হয়নি তা, সেই প্রশ্ন তোলা জরুরি। তার মানে কি আমরা ধরে নেব যে সরকার বা কোনো মহল চায় না পাহাড়ে হানাহানি বন্ধ হোক।

পাহাড়ের শহরাঞ্চলে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় শতভাগ বাঙালি। তাহলে ক্ষমতার ভারসাম্য কোথায় থাকল? এসব বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে কি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতে নিরপেক্ষতা অবলম্বন সম্ভব? ইতিহাস তো তা বলে না!

প্রথম আলো:

নতুন সরকার নানামুখী সংস্কার করতে চায়। এর প্রভাব নিশ্চয়ই পাহাড়েও দেখা যাবে। ইতিমধ্যে আপনি ও পাহাড়িদের একাধিক প্রতিনিধি সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানি। নতুন সরকারের কাছে আপনাদের চাওয়াগুলো কী থাকবে?

দেবাশীষ রায়: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। তাঁরা ধৈর্যসহকারে আমাদের কথা শুনেছেন। নতুন সরকার আমাদের কতটুকু করল, তা তো আমরা তাদের কাজের মাধ্যমেই দেখব। তবে আমাদের প্রথম চাওয়া হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিক প্রশাসন যেন স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা। এখানে সহিংসতা যত থাকুক, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তো কোনো যুদ্ধাবস্থা চলছে না।

এটা ঠিক, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে কিছু সংঘাত হয়েছে। কিন্তু বড় আকারে তো সংঘাতের উদাহরণ নেই। এখানে সাধারণ যেসব সহিংসতা হয় বা হচ্ছে, তা পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ করা ‍উচিত, সামরিক বাহিনীর না। মশা মারতে কামান দাগানোর তো দরকার নেই। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ তো পুলিশের কাজ। তাদের কাজ তাদের করতে দেন, বিজিবির কাজ বিজিবিকে করতে দেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যাঁরা সেনা কর্মকর্তা আছেন, তাঁরা সিভিল প্রশাসনের অধীনে কাজ করুক। সিভিল প্রশাসন যদি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে, ফায়ার সার্ভিস যদি তার কাজ না করতে পারে, ডেপুটি কমিশনার যদি তার কাজ না করতে পারে, তাহলে চলবে কীভাবে? এসপির কাজ এসপি করবেন, তাঁর কাজ ব্রিগেড কমান্ডার করে দিলে ভুল হবে তো। ঠিক তেমনই ব্রিগেড কমান্ডারের কাজ ডিসি করে দিলে তো ভুল হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের দপ্তরগুলো তাদের ওপর আইনত যে দায়িত্ব, তা তারা পালন করতে পারছে না।

প্রথম আলো:

একটি প্রসঙ্গ আপনিই তুললেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিবদমান নানা গোষ্ঠী আছে। তাদের ভেতরকার অন্তর্ঘাত এবং তার নিয়ন্ত্রণে এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের প্রশ্নটিকে সামনে আনা হয়। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

দেবাশীষ রায়: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হলো ১৯৯৭ সালে। সেই চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ নামের একটি সংগঠন হলো। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের ঘটনা আছে। কিন্তু এখন তো পাহাড়ে এমন গোষ্ঠী অন্তত সাতটি। এর মধ্যে আবার ইসলামি একটি গোষ্ঠীও ‍যুক্ত হয়েছে। এখানে এত যে নিরাপত্তার অজুহাত, তাহলে এত গোষ্ঠীর জন্ম হলো কীভাবে? এখানে পার্বত্য অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতার প্রশ্ন চলে আসে। তবে অনেক স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস হলো, পাহাড়ে সন্ত্রাস বন্ধ হোক, এটা কোনো কোনো মহল চায় না। জনমানুষের আরও অভিযোগ, পার্বত্য অঞ্চলের বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত ঘটতে দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম আলো:

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সফল বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এসব সহিংসতা বা ভূমিকেন্দ্রিক নানা জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হলো না কেন? আর এর বাস্তবায়নে সরকারের কাছে আপনার কী প্রত্যাশা থাকবে?

দেবাশীষ রায়: দেখুন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কিন্তু সবকিছুর পরিসমাপ্তি নয়। পার্বত্য চুক্তির অনেকগুলো আইনি দলিলের মধ্যে একটি। এর মাধ্যমে পাহাড়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের সমাপ্তি হয়েছিল। পার্বত্য চুক্তিকে অবশ্যই বাস্তবায়ন করা উচিত। এর মৌলিক দিকের বাস্তবায়ন হয়নি বলেই তো এত সমস্যা। তবে এই চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের স্পৃহা বা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারে পুরোপুরি, তা বলা ঠিক হবে না। কিন্তু অবশ্যই এটা সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ ছিল।

প্রথম আলো:

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কি কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তাহলে?

দেবাশীষ রায়: হ্যাঁ, তা তো আছেই। এ চুক্তিতে যতটা আঞ্চলিক স্বশাসন দেওয়া হয়েছে, তা নগণ্য। আমরা যদি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর দিকেই তাকাই, সেখানকার স্বায়ত্তশাসন কিন্তু অনেক বিস্তৃত। সেখানকার স্বায়ত্তশাসিত জেলাগুলোর স্বায়ত্তশাসন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। তারপরও পার্বত্য ‍চুক্তিতে জেলা পরিষদগুলোকে যেসব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ভূমি ও পুলিশ-সংক্রান্ত, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। আঞ্চলিক পরিষদকে সাধারণ প্রশাসনের কাজের সমন্বয়ের যে দায়িত্ব আছে, তা করতে দেওয়া হয়নি।

প্রথম আলো:

নতুন এই সময়ে তাহলে আপনি আগামী দিনের পাহাড়ের জন্য কী প্রত্যাশা করেন?

দেবাশীষ রায়: সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ের নানা স্থানে যে সহিংসতা হলো, এর প্রতিকারের জন্য কমিশন গঠনের এবং পাহাড়ি-বাঙালি মিলে মিশ্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছি। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ভূমি সমস্যার সমাধান দেখতে চাই। আঞ্চলিক পরিষদসহ জেলা পরিষদগুলোকে কাজ করতে দেওয়া হোক। পার্বত্য ভূমি কমিশন কাজের মাধ্যমে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করুক, যার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমতলের আদিবাসীদের ভূমির সমস্যা এমনকি দেশের মূলধারার কৃষিনির্ভর মানুষের ভূমি বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তির নতুন উদ্ভাবন আনা যায়।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

দেবাশীষ রায়: আপনাকেও ধন্যবাদ।