২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আন্দালিব রহমান পার্থের সাক্ষাৎকার

ক্ষমা না চাইলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনীতি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নানা উদ্যোগ ও সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

প্রথম আলো:

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটল। নতুন সরকার দায়িত্ব নিল। কী পরিবর্তন হলো বলে মনে করেন?

আন্দালিব রহমান পার্থ: রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আমরা নির্ভয়ে রাজনীতি করতে পারি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব ছিল। বর্তমানে সেই দূরত্বটা কমে এসেছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করছেন। ১৯ অক্টোবরও (শনিবার) আমরা আমাদের কথা বলেছি।

প্রথম আলো:

রাষ্ট্র সংস্কারে সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আন্দালিব রহমান পার্থ: ভালো হতো, কমিশন গঠনের পর সরকার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করত। তারা রাজনৈতিক দল ও কমিশনের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারত। সে ক্ষেত্রে কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা রাজনীতিকদের মনোভাব সহজে জানতে পারত। আমরাও আমাদের মনোভাব জানাতে পারতাম। মনে রাখতে হবে, সংস্কার এটি চলমান প্রক্রিয়া।

প্রথম আলো:

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে আপনি ১৫ আগস্ট সম্পর্কে যে মত দিয়েছিলেন, তা অন্যদের থেকে ভিন্ন ছিল।

আন্দালিব রহমান পার্থ: আমরা বলেছি, ১৫ আগস্টকে যথাযথ সম্মান দেওয়া উচিত। ১৯৭১ সালের আগের ও পরের আওয়ামী লীগ এক নয়। ইতিহাসে যার যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু দিতে হবে।

প্রথম আলো:

সংবিধান সংশোধন না পুনর্লিখন—এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। আপনাদের অভিমত কী?

আন্দালিব রহমান পার্থ: সংবিধান পুনর্লিখন একটি বড় বিষয়। বড় কাজ করার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট প্রয়োজন। আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনেরও গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য যেটুকু সংস্কার অপরিহার্য, সেটুকু কমিশনের করা উচিত। বাকি কাজটা করবে নির্বাচিত সরকার।

প্রথম আলো:

ভোটব্যবস্থা নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কোনো কোনো দল বর্তমান ব্যবস্থার পক্ষপাতী, আবার অনেক দল আনুপাতিক ভোটের পক্ষে। আপনি কী বলবেন?

আন্দালিব রহমান পার্থ: এটাও নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমাদের এখানে দীর্ঘদিন ওয়েস্টমিনস্টার ধারা চলে এসেছে। এটা পরিবর্তন করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া প্রয়োজন। আনুপাতিক হারে ভোট করার আগে ভোটারদের সচেতন করতে হবে।

প্রথম আলো:

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারেও একটি কমিশন গঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আপনারা কোনো সুপারিশ করবেন কি?

আন্দালিব রহমান পার্থ: বর্তমান আইনে কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বা নির্বাহীপ্রধান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তাঁর সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেন। আমি মনে করি, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়। সার্চ কমিটি বা এ ধরনের যেই কমিটি থাকবে, তাদের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

প্রথম আলো:

অন্তর্বতী সরকারের কাজের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

আন্দালিব রহমান পার্থ: অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। তাহলে রাষ্ট্রের কোথায় কী ঘটছে, তারা জানতে পারবে। আমি মনে করি, সরকারের প্রধান দুটি কাজ হলো গণহত্যার বিচার ও নির্বাচনমুখী সংস্কার। তাঁরা বড় বড় কাজ হাতে নিলে অনেক বেশি সময় লাগবে, জনগণের মধে৵ও নানা প্রশ্ন উঠবে। এটা রাজনীতিকদের জন্যই রেখে দেওয়া উচিত।

প্রথম আলো:

জনগণের নিরাপত্তা বিধানে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা কি যথেষ্ট?

আন্দালিব রহমান পার্থ: যথেষ্ট নয়। নিরাপত্তার কাজটি করে মূলত পুলিশ। পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় ও সচল করতে হবে। আন্দোলনের সময় তো অনেক পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, আহত হয়েছেন। সবাই যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তা নয়। অনেকে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। যেসব পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে সহায়তা করা উচিত। পুলিশকে ঘৃণিত বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। তাহলে তো ভালো মানুষ কেউ পুলিশ বাহিনীতে যাবে না। সরকার পুলিশ বাহিনীর মনোবল ফিরিয়ে আনতে চাইছে। কিন্তু আপনি যখন যাত্রাবাড়ী থানার হত্যাকাণ্ডের জন্য উত্তরা থানার ওসিকে আসামি করেন, তখন তাদের মধ্যে মনোবল ফিরে আসবে কীভাবে? ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও অনেক মামলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই আশ্বাস দেওয়া উচিত যে বা যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত না, তাদের সমস্যা হবে না।

প্রথম আলো:

আপনি গণহত্যার বিচারের কথা বলছেন, সেটা ব্যক্তির না দলের?

আন্দালিব রহমান পার্থ: কেবল ব্যক্তি নয়, দলেরও বিচার করতে হবে। ১৪ দলসহ আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, সেটা তো সাধারণ ঘটনা না। এই হত্যাকাণ্ড বিচারহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। অবশ্যই এর বিচার হতে হবে। আওয়ামী লীগারদের মধ্যে অনুশোচনার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না; বরং তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা না চায়, তাহলে তাদের রাজনীতি করারও নৈতিক অধিকার নেই।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

আন্দালিব রহমান পার্থ: আপনাকেও ধন্যবাদ।