বিশেষ সাক্ষাৎকার: গোয়েন লুইস

সরকারের সঙ্গে সম্পর্কটা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ

আজ ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস।  এ বিশেষ দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্ক, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাহীদ এজাজ

প্রথম আলো:

৫ আগস্ট বাংলাদেশে তো একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সহযোগিতার ধরনটা কেমন হবে? 

গোয়েন লুইস: আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এ বছর আমরা সম্পর্কের পাঁচ দশক উদ্‌যাপন করছি। এই সম্পর্ক উত্তরোত্তর বেড়েছে। চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে অংশীদারত্বের পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন স্বাধীনতার পর সহযোগিতার মূল জায়গা ছিল খাদ্যসহায়তা, যুদ্ধোত্তর সংস্কারে সহায়তা। এখন সেটা অনেক বেশি কারিগরি বিষয়। কারণ, বাংলাদেশের চাহিদারও পরিবর্তন হয়েছে। এটা আসলে সরকারের অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে এগোতে থাকে। এ সরকারের অগ্রাধিকারের পরিবর্তন হয়েছে। 

সরকার বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের কথা শুনছি। প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টামণ্ডলীর সঙ্গে কথা বলছি। তাঁরা জাতিসংঘের কী ভূমিকা দেখতে চান, জানার চেষ্টা করছি। তাঁদের সেই প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমরা যুক্ত হওয়ার চেষ্টা
করব। তবে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কিছু মৌলিক কাজ করে থাকি, যা অব্যাহত থাকবে। যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগে সহায়তা, এনজিও কার্যক্রমে যুক্ততা, রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা। এই বিষয়গুলোয় কোনো পরিবর্তন হবে না। আমরা সুশাসনের মতো নানা ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। এ বিষয়গুলোয় পরিবর্তন আসতে পারে। 

প্রথম আলো:

তার মানে গত পাঁচ দশকে যে কার্যক্রম বা সহযোগিতাগুলো ছিল, সেগুলো অব্যাহত রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে এগোতে চান? সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে সংস্কার।

গোয়েন লুইস: জাতিসংঘের মহাসচিব এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন, সংস্কারে সহায়তায় জাতিসংঘ যুক্ত হবে। আমরা অব্যাহতভাবে সরকার এবং কমিশনের সংস্কারের এজেন্ডার সঙ্গে কাজ করে যাব। তবে আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই, সংস্কারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে কমিশন। আমরা গিয়ে বলব না যে আমরা এটা করব, সেটা করব। আমরা চাই কমিশনগুলো আমাদের জানাবে, আমাদের কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কোন জায়গায় তারা সহযোগিতা চায়। 

ধরা যাক, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও সংবিধান সংস্কারে কোথায় তারা আমাদের সহায়তা চায়, সেটা আমাদের বলতে হবে, সেভাবেই আমরা সহায়তা করব। অন্য দিকটা হলো সংস্কারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা আমাদের কাছ থেকে কী ধরনের সহায়তা চায়, সেটাও জানাতে হবে। 

■ আমরা অব্যাহতভাবে সরকার এবং কমিশনের সংস্কারের এজেন্ডার সঙ্গে কাজ করে যাব।

■ এখন যাঁরা বাংলাদেশে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের।

■ বাংলাদেশে এখন সব মত ও পথের মানুষ গণতন্ত্র, সংবিধান, সংসদে প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের মত দিচ্ছেন।

প্রথম আলো:

তার মানে দুইভাবে আপনারা সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চান? 

গোয়েন লুইস: একটি হচ্ছে কারিগরি সহায়তা, অন্যটি হবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা দেওয়া।

প্রথম আলো:

এখন যাঁরা সরকারে রয়েছেন, তাঁদের কেউই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের প্রতিনিধি নন। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে যেভাবে কাজ করতেন, এ ক্ষেত্রে কাজের ধারায় কি গুণগত পরিবর্তন আসবে? 

গোয়েন লুইস: এখন যাঁরা বাংলাদেশে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের। বিশেষ করে আমরা কীভাবে কাজ করি, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার শ্রদ্ধাশীল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ। আমরা দুই পক্ষই একই ভাষায় কথা বলি। কারণ, আমরা সবাই উন্নয়ন পরিসরের প্রতিনিধি। 

অন্তর্বর্তী এ সময়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা শ্রদ্ধাশীল। কাজেই সম্পর্কটা আগের চেয়ে একটু আলাদা হবে। সরকারের ধরন ভিন্ন। মানুষগুলো আলাদা। তবে অতীতে যেভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার সঙ্গে কাজের যে ধারা ছিল, সেটিও কিন্তু অক্ষুণ্ন থাকবে।

প্রথম আলো:

মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে আগের সরকারের আমলে আপনাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়; বরং তা ছিল তিক্ততার। এই সরকার মানবাধিকারে জোর দিয়েছে। গুম নিয়ে কমিশন গঠন করেছে।

গোয়েন লুইস: গুম নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আসছিলাম। এটা সত্যি যে এখন অনেক বেশি খোলামেলাভাবে এবং সহজে কাজ করা যাচ্ছে। আমি এখন একই সময়ে সরকার এবং গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। মানে আমরা একসঙ্গে বসে এ নিয়ে আলোচনা করতে পারছি। অতীতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসাটা কঠিন ছিল। কাজেই এ ধরনের বিষয়গুলোয় পরিবর্তনটা তাৎপর্যপূর্ণ এবং অনেকটা নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।

প্রথম আলো:

এ বছর বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এবারের বন্যার অভিজ্ঞতায় জাতিসংঘ ভবিষ্যতে কী ধরনের সহায়তার কথা ভাবছে? 

গোয়েন লুইস: বন্যার সময় তৃণমূল পর্যায়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁরা তাঁদের জীবদ্দশায় এমন বন্যা দেখেননি। কাজেই এবারের বন্যা যে অভূতপূর্ব, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। দেশের ৪৫ শতাংশ এলাকা এবং ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মে থেকে এই বন্যার শুরু হয়েছিল। অথচ বন্যার ক্ষতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট সহায়তা পায়নি। 

ভবিষ্যতের কথা যদি বলি, বন্যার পূর্বাভাসে নতুনত্ব আনা, বন্যার প্রকোপ সামাল দিতে পারে, এমন অবকাঠামো, জলবায়ু অভিযোজন ইত্যাদি খাতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। এ বিনিয়োগের মূল লক্ষ্যই হবে লোকজনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে যেসব লোক দুই থেকে তিন সপ্তাহ পানির মধ্যে বসবাস করেন, ভবিষ্যতে তাঁদের সুরক্ষা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেটা বিশেষভাবে দেখতে হবে। বন্যাদুর্গত এসব মানুষের দুর্ভোগ, মানসিক ভীতি যে কতটা ভয়াবহ, তা তাঁদের সঙ্গে কথা না বললে বোঝা দুরূহ।

বন্যা মোকাবিলায় ভবিষ্যতে অতিরিক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পর্যায়ে বন্যার পূর্বাভাস ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বড় দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় ভবিষ্যতে আমরা যেন বাংলাদেশকে আরও জোরালোভাবে সহায়তা দিতে পারি, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে আলোচনায়। 

প্রথম আলো:

রাখাইনে সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা সংকট জটিলতর হয়েছে। এই সমস্যাকে এখন কীভাবে দেখছেন? 

গোয়েন লুইস: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। গত বছর রাখাইনে যে লড়াই–সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা অব্যাহত আছে। লোকজনের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা থামছে না। স্বাভাবিকভাবে সীমান্তের ওপর চাপ বাড়ছে। নিউইয়র্কে ড. ইউনূস তিন দফা যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেই আহ্বানই যথাযথ। কাজেই এই তিন দফা বাস্তবায়ন এবং সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও যুক্ততা প্রয়োজন। 

প্রথম আলো:

কিন্তু রাখাইনের সবশেষ পরিস্থিতি এখন কেমন? সেখানে তো জাতিসংঘের কোনো উপস্থিতি নেই বলেই আমরা জানি।

গোয়েন লুইস: ইয়াঙ্গুনে জাতিসংঘের একটি শক্তিশালী কর্মী বাহিনী রয়েছে। মিয়ানমারের জাতিসংঘের দপ্তর সেখানকার স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাখাইনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকজনকে যুক্ত করে মানবিক সহায়তার কাজটি চলছে। এমনিতেই রাখাইনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানো দুরূহ। পাশাপাশি চলমান সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। রাখাইনে কিছু কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও মানবিক সহায়তা যে মাত্রায় প্রয়োজন, সে অনুযায়ী হচ্ছে না। বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। লোকজন ক্ষুধার্ত, তাঁদের খাদ্যের সংকট আছে। চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। শিশুরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না।

প্রথম আলো:

মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার নিরাপত্তা আইন (আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নিয়ে বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা হচ্ছে। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য এবং মিথ্যা তথ্য বিস্তারের প্রবণতাও বাড়ার বিষয়টি আমরা লক্ষ করছি। সামগ্রিকভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সামাজিক পরিসরে গুজব প্রতিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এখানে কীভাবে ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

গোয়েন লুইস: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশে অতীতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। ভিন্নমতাবলম্বী যে কাউকে এই আইনের মাধ্যমে কণ্ঠরোধ করা হতো। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমস্যাগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশও দিয়েছেন।  

ভিন্নমত প্রচারে বাধা দেওয়া এবং সমালোচনার পথ রোধ করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কে কীভাবে পোশাক পরবেন, কীভাবে চলাফেরা করবেন, তা নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে। কাজেই এ ধরনের তৎপরতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধ করতে হলে কিছু আইনের প্রয়োজন। বিশেষ করে কারও ওপর হামলা, সহিংসতা প্রতিহত করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিংবা বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপতথ্য প্রচার রোধের স্বার্থে আইনের প্রয়োজন। কাজেই এক দিকে নেতিবাচক এসব বিষয় প্রতিহত করা যেমন জরুরি, তেমনি অবাধে মতপ্রকাশ করতে পারে, সেটা নিশ্চিতও জরুরি। 

এ কাজ করা জটিল। তাই আমরা বলেছি, লোকজনের সুরক্ষার স্বার্থে সাইবার নিরাপত্তা আইন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু রাজনৈতিক আলাপ রোধ করার জন্য নয়। সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করার জন্য না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথম আলো:

বিদেশি কোনো কোনো গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক এবং জনপরিসরে ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি বেড়ে গেছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন? 

গোয়েন লুইস: ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও তাদের বক্তব্য গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশ, ফলে ইসলামি দলগুলোর বক্তব্য সামনে আসা স্বাভাবিক। 

প্রথম আলো:

বিষয়টি কি এমন যে বিগত সরকারের আমলে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করা হতো বলে তখন জনপরিসরে ইসলামি দল বা সংগঠনগুলোর উপস্থিতি ছিল না। উন্মুক্ত পরিবেশে এখন তাদের উপস্থিতি হঠাৎ করে বেশি চোখে পড়ছে?

গোয়েন লুইস: মতপ্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে থেকে বলতে পারি, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালনের সময়টাতে বিদ্যমান পরিবেশ নিয়ে আমি আশাবাদী। এখন যে সবার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, এটাই একটা ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশে অতীতে এটার অনুপস্থিতি ছিল। আপনি বলছেন, অতীতে দমবন্ধ একটা পরিবেশ ছিল, এখন মুক্ত পরিবেশে সবাই কথা বলতে পারছে কি না? 

ইতিহাস অন্তত সেটাই সাক্ষ্য দেয়। বাংলাদেশে এটা কতটা সত্য, তা এখন বলতে পারছি না। বাংলাদেশে এখন সব মত ও পথের মানুষ গণতন্ত্র, সংবিধান, সংসদে প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি নানা বিষয়ে তাঁদের মত দিচ্ছেন। খোলা মন নিয়ে সবাই নিজের মতো করে কথা বলবেন, এটাই তো গণতন্ত্র। 

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী? বিশেষ করে শুরুতে আমরা নানা চড়াই–উতরাই দেখছি।

গোয়েন লুইস: যদিও পথটা বন্ধুর এবং সামনে আরও চড়াই–উতরাই আসতে পারে, তারপরও আমি অনেক আশাবাদী। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের স্বপ্ন আর অঙ্গীকার পূরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিতও আমরা দেখছি। তাই জাতিসংঘের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশকে জোরালোভাবে সমর্থন দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ এখন যে সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে, সে জন্য অনেক মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের সেই আত্মত্যাগ আর এ দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে আমাদের বাংলাদেশের পাশে থাকা উচিত। 

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

গোয়েন লুইস: আপনাকেও ধন্যবাদ।