ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংস্কারের প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছে। আপনার বিবেচনায় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে প্রধান প্রধান সংস্কারের জায়গাগুলো কী?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: উচ্চশিক্ষায় সংস্কারের প্রথম ক্ষেত্র হলো প্রশাসন। কয়েক দশকে ব্যাপক রাজনৈতিকীকরণে আমাদের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থার তিনটি স্তম্ভ—শিক্ষার মান, কর্মযোগ্য প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী দিনে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিপ্রক্রিয়া হতে হবে মেধাভিত্তিক। স্বজনপ্রীতি নির্মূল করতে সাময়িককালের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানের বাইরের যোগ্য প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো উদ্যোগও বিবেচ্য হতে পারে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আন্তর্জাতিক মানের গবেষকদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা ও ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বদানের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় সংস্কারের ক্ষেত্র হলো ডিগ্রির মান ও স্বীকৃতি। বিদ্যমান তৃতীয় শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়–ব্যবস্থাকে রূপান্তর করতে দরকার প্রথম গ্রেডের রেগুলেটরি ব্যবস্থাপনা। সব ডিগ্রি প্রোগ্রাম ও পাঠক্রম নিরপেক্ষ পর্যালোচনা ও সংশোধন করা প্রয়োজন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি কর্মক্ষেত্রে নিয়োগযোগ্য শিক্ষা নিশ্চিত করে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের যা করণীয় তা নিশ্চিত করার সাপেক্ষে তাঁদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে একটি নিরপেক্ষ ও পেশাদার ইউজিসির কোনো বিকল্প নেই।
সংস্কারের তৃতীয় ক্ষেত্রটি হতে হবে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়নের জন্য ক্যাম্পাসে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বকে শিক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম বিষয়ে নিয়মিত এবং গঠনমূলক মতামত প্রদান করতে পারে। সর্বপোরি বিগত সরকারের উচ্চশিক্ষার জন্য সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনার (২০১৮-২০৩০) সমালোচনামূলক পর্যালোচনাও প্রয়োজন।
দীর্ঘ বিরতির পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে একটা বড় আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ কী?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবহেলা, শিক্ষার মানের নিম্নগতি, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং বহু বছরের অনিয়ম, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি ও অব্যবস্থাপনা—এ সব মিলিয়েই আজকে আস্থার এ সংকট। এই অবস্থা নিরসনে প্রথমেই প্রয়োজন দায়বদ্ধতা ও সংলাপের সংস্কৃতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নতুন বাস্তবতা স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের মূল অংশীজন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠের মান, শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা এবং ক্যাম্পাসে সামাজিক কল্যাণ ও নিরাপত্তা প্রদান—এ–সংক্রান্ত সংস্কারের বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে খোলামনে আলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়মের বিরুদ্ধে ছাত্র প্রতিনিধি যেন প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন দলীয় রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে ছাত্র-শিক্ষক কল্যাণ সংস্থার ক্ষমতায়ন। এই অন্তর্বর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক কর্মকাণ্ড ও আইনবহির্ভূত পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকে, সে জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে এমনকি এশিয়ার র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জায়গা থাকছে না। সামগ্রিকভাবে উচ্চশিক্ষার সংকটটাকে কীভাবে দেখছেন?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: আমাদের উচ্চশিক্ষার সংকটটাকে তিনটি মানদণ্ড দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়—সমতা, ব্যবস্থাপনায় দায়বদ্ধতা এবং জ্ঞানচর্চা ও গবেষণামুখী শিক্ষা। ১৯৭১–এর সাপেক্ষে উচ্চশিক্ষা খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। অবকাঠামো ও পরিসংখ্যান—দুই বিচারেই অগ্রগতি হয়েছে। স্বাধীনতার সময় আমাদের এখানে উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ। ২০১০ সাল নাগাদ এটা বেড়ে হয় ১০ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে, বা এক দশকে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণের এই ঊর্ধ্বগতি সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অবকাঠামোগত বিনিয়োগের ফল। মাথাপিছু (বিশ্ববিদ্যালয়) সংখ্যার বিচারে তাই বলা যায়, উচ্চশিক্ষা খাতে অগ্রগতি হয়েছে। এখন ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে।
দৃশ্যমান ও বাহ্যিক এই অগ্রগতি উচ্চশিক্ষার সংকটের একটি বড় প্রেক্ষাপটও তৈরি করেছে। এখানে আমি উচ্চশিক্ষার তিনটি অসামঞ্জস্যতার কথা বলব। এক. বিগত সরকার জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললেও বাস্তবতাটা হলো, দেশের ৪১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। মোট ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। সাধারণত বেসরকারি উদ্যোক্তারা ব্যর্থ হলে সরকার হস্তক্ষেপ করে। অর্থাৎ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততা থাকলে রাষ্ট্র এগিয়ে আসে। কিন্তু আমরা দেখছি উল্টোটা। ঢাকায় যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘাটতি নেই, সেখানে সরকারি ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় কী দরকার?
দুই. আমাদের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। আমরা গবেষণার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করিনি। কয়টি প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হবে, কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় নেতৃত্ব দেবে, কী মানের গবেষণা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা শিক্ষক হচ্ছেন ও প্রশাসনের দায়িত্ব পাচ্ছেন, শ্রমবাজারে বার্ষিক কত লাখ বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী কর্মী প্রয়োজন—এসব লক্ষ্য অর্জন করতে যথার্থ রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও বিনিয়োগ ছিল না।
একদিকে জিডিপি অনুপাতে যেমন শিক্ষা বাজেটের প্রবৃদ্ধি হয়নি, অন্যদিকে সীমিত বাজেটের অপচয় হয়েছে। সরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে রাজনৈতিক কারণে অগ্রাধিকার পেয়েছে। এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে এবং প্রযুক্তি, মাইক্রোচিপস ও এভিয়েশন শিল্পে এগিয়ে থাকা উন্নয়নশীল দেশে (যেমন মালয়েশিয়ায়) পর্যন্ত বিশেষায়িত অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় নেই। অথচ ২০১৯ সালে অনুমোদিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’। এ রকম প্রশ্নবিদ্ধ ‘শ্বেতহস্তী’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন কোন যুক্তিতে?
তিন. তরুণদের মধ্যে কোন জনগোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে এবং তারা প্রস্তুত কি না, এ রকম মৌলিক আলোচনা উপেক্ষা করে একতরফা উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ব্যাপক ‘লার্নিং গ্যাপ’ আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছে। উচ্চশিক্ষায় মোট ৮৮ লাখ শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২২৫৭টি কলেজের মাধ্যমে ন্যূনতম যাচাই-বাচাই ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত অনার্স/মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদানের স্ফীতি বিদ্যমান সংকটকে আরও প্রকট করেছে।
সার্বিক বিবেচনায় উচ্চশিক্ষা খাত সম্প্রসারণের চিত্র ২০৩১ সালের মধ্যে আমাদের মধ্য আয়ের অর্থনীতি ও শিল্পায়ন স্বপ্নের পরিপন্থী। মধ্য আয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ—মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং মাধ্যমিক শিক্ষা মান যাচাইয়ের র্যাঙ্কিংয়েও নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। অথচ বাংলাদেশের ১০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ও মান যাচাইয়ের আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং অনুশীলনে অংশ নেয় না। এর মূল কারণ হলো, উচ্চশিক্ষায় উৎকর্ষের মাধ্যমে টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়ন—এ রকম ফাঁকা বুলি ছাড়া সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোনো দায়বদ্ধতা ও দিকনির্দেশনা নেই।
কয়েক দশক ধরে আমরা দেখে আসছি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন, শিক্ষার অবকাঠামো নির্মাণে বিগত সরকারগুলোর যতটা আগ্রহ, শিক্ষার মান উন্নয়নের চিত্রটা হতাশাজনকভাবে বিপরীত। কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: শিক্ষার মান উন্নয়নে বিগত সরকারের মধ্যে সদিচ্ছার ব্যাপক ঘাটতি ছিল। শিক্ষা খাতে জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ বিচারে বাংলাদেশ রয়ে গেছে বিশ্বে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি। শিক্ষা ও অন্যান্য খাত—সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নপ্রক্রিয়া দলীয়করণ এবং প্রকল্পে প্রদত্ত বাজেট ভাগ-বাটোয়ারার অপসংস্কৃতির শিকার হয়েছে। এই কারণে শিখনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো উপেক্ষিত থেকে যায় এবং অবকাঠামো–সংক্রান্ত প্রকল্প অগ্রাধিকার পেয়েছে।
এক হিসাবে বিগত সরকারের সময় ১৪ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ রকম বরাদ্দ এবং প্রকল্প রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, ছাত্রসংগঠন, নেতা–কর্মী এবং ঠিকাদার গোষ্ঠীর জন্য ছিল লুটপাটের একটি বড় ক্ষেত্র। সরকারের দিক থেকেও এগুলো ছিল উন্নয়ন অর্জনকে দৃশ্যমান করা ও রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়ার একটি সস্তা কৌশল।
বাজেট না বাড়ালে শিক্ষার মান বাড়ার দৃশ্যমান কোনো সম্ভাবনা তো নেই...
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: বিশ্বব্যাপী শিক্ষার মান নিয়ে হতাশা আজ কেবল বাজেট বরাদ্দের স্বল্পতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যেমন ইন্দোনেশিয়ায় ২০০৬-২০১৫ সালে শিক্ষায় সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি স্কুলশিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের পাঠদানের মানের কোনো পরিবর্তন আসেনি। মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে প্রয়োজন সম্পূরক ও স্বচ্ছ শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশের নিকট অতীত অভিজ্ঞতা বিচারে দেখা গেছে, আমলাদের সক্ষমতার অভাবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের একটি বড় অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়।
অন্যদিকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও উপাচার্য নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও দলীয়করণ—এসব মিলিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা একরকম ভেঙে পড়েছিল বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সরকারের সামগ্রিক প্রশাসনিক ও তদারকি দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতার উন্নতি ছাড়া বাজেট বাড়ালেও শিক্ষার মানে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসবে না।
ব্রিটিশরা যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল, তার মূলে ছিল কলোনির শাসন চালু রাখার জন্য প্রশিক্ষিত সিভিল সার্ভেন্ট তৈরি। জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার বিষয়টি ছিল গৌণ। সেই ঔপনিবেশিক দর্শন থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটা বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রধানত বিসিএস ক্যাডার তৈরি করছে?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রধান তিনটি স্তম্ভ হলো শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা। একটিকে উপেক্ষা করে উন্নতিতে উৎকর্ষ অর্জন কঠিন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, তিন ক্ষেত্রেই ব্যাপক ঘাটতি ও অবহেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে এ রকম ছিল না, কেননা ব্রিটিশদের জন্য এটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাজনৈতিক প্রকল্প। কৌশলগত লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক কর্মযোগ্য ‘ব্রাউন সাহিব’ বানানো। ঐতিহাসিকভাবে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ও যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভেন্ট প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছে। সিনিয়র ও প্রভাবশালী ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস কর্মচারীদের তালিকায় উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আধিপত্য। এই ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে ১৯২১ সালে স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগের মতো একজন দক্ষ প্রশাসক, শিক্ষাবিদ ও গবেষকের হাত ধরে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। স্যার হার্টগ পরবর্তী সময়ে উপাচার্যের পদ ছেড়ে ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হন। ঐতিহাসিক বিবেচনায় সিভিল সার্ভেন্ট তৈরির প্রকল্পে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সফল হয়েছিল। ১৯৪৭–পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল চৌকস সিএসপি (পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস) অফিসার প্রশিক্ষণের কারখানা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুশাসন ও কার্যকারিতার দিক থেকে মানসম্মত ছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় ঐতিহাসিকভাবে উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ হার বেশি হওয়ার এটি একটি অন্যতম কারণ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে উৎকর্ষের সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। অনেকের মতে, বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আজ কেবলই বেকার তৈরির কারখানা। বিগত সরকারের আমলে একদিকে কর্মহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অন্যদিকে প্রশাসনিক খাতের সম্প্রসারণ এবং বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, এই দুই কারণে তীব্রতর হয়েছে আমলা হওয়ার প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো সুনির্দিষ্ট অবদান নেই।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একাডেমিক মডেলের আদলে স্থাপত্য সদৃশ বজায় রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতিক অবকাঠামো ও আবাসিক হল ব্যবস্থা তৈরি হলেও মৌলিক পরিবর্তন আসেনি শিক্ষা পাঠক্রমে। যেমন সিভিল সার্ভিস প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফলতার জন্য অক্সফোর্ডের ‘পিপিই’ (রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি) এবং কেমব্রিজের ‘ট্রাইপোস’ স্নাতক ডিগ্রি বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। কিন্তু আমাদের কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম যুগোপযোগী ও উদ্ভাবনীও ডিগ্রি প্রদান করা হয় না। এই কারণে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের চৌকস সিএসপি অফিসার তৈরির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। আজকের প্রশিক্ষিত বিসিএস ক্যাডার নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
অতীতে সিভিল সার্ভেন্টরা ছিলেন চৌকস—জনপরিসরে কীভাবে কথা বলতে হবে, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে প্রশাসন চালাবে কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে অবস্থান, এসব বিষয়ে তাঁরা ছিলেন সুপ্রশিক্ষিত। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সে রকম চৌকস, নীতিমান ও আপসহীন আমলাও তৈরি হচ্ছে না। তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বিসিএস প্রস্তুতির ভিড় বাড়ছে। এটি এক অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, কোনো নীতিগত অর্জন নয়। শিক্ষার্থীদের এ রকম স্বতঃপ্রণোদিত প্রশিক্ষণ ও একমুখী ‘সরকারি চাকরির জন্য শিক্ষা’ চিন্তা এবং কর্মকাণ্ডের ভারে বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান ও গবেষণা চর্চার ক্ষেত্রটি আরও সংকুচিত হয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে গবেষণা হচ্ছে, সেগুলো কতটা মানসম্পন্ন? প্লেজারিজম, কপি পেস্টের নানা অভিযোগ উঠছে?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: গবেষণা প্রকাশনার মান ও সংখ্যা—দুটোতেই আমাদের সরকারি খাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভীষণভাবে পিছিয়ে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ও জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার খ্যাতি ও অবদানের কারণে ‘বিশ্বমানের ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে স্বীকৃত। এসব প্রতিষ্ঠানে গবেষণার শ্রেষ্ঠত্ব ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশ একটি ‘বিশ্বমানের ফ্ল্যাগশিপ ইউনিভার্সিটি’ থেকে বঞ্চিত।
এর পেছনে মূল দুটি কারণ হলো—একাডেমিক্যালি অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত গবেষণা ব্যবস্থাপনা। প্লেজারিজম, চৌর্যবৃত্তি, কপি পেস্টের এই অপসংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশনা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জার্নাল পরিচালনা ও প্রকাশনায় স্বজনপ্রীতি-অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তালিকাটি অনেক লম্বা। গবেষণার নামে লেখক, সম্পাদক ও রিভিউয়ারদের সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় ছাপা হচ্ছে অজস্র সাজানো প্রবন্ধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অব্যবস্থাপনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে প্রকাশ পাচ্ছে সহস্র জার্নাল, যার কোনো বৈশ্বিক স্বীকৃতি নেই। সম্পাদনা বোর্ডে নেই আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার। আবার নেই কোনো সুস্পষ্ট প্লেজারিজম নীতি ও ‘প্রকাশনা নীতিশাস্ত্র কমিটির’ অনুমোদন। অধিকাংশ জার্নাল স্কোপাস ইনডেক্স না হওয়ায় বৈশ্বিক যে জ্ঞানভান্ডার সেখানে এসব প্রকাশনার তেমন কোনো নলেজ ফুটপ্রিন্ট নেই। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার নামে চলছে একরকম প্রহসন। নেই কোনো জবাবদিহি। গবেষক শিক্ষকের একটি বড় অংশের নেই কোনো যাচাইযোগ্য গবেষণা প্রোফাইল (যেমন অর্কিড, গুগল স্কলার পেজ)। এই দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার আঁতাত চক্রে সাদা ও নীল দলের কোনো ভেদাভেদ আমরা দেখি নাই।
এ ক্ষেত্রে রেগুলেটরি সংস্থা হিসেবে ইউজিসির ভূমিকাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: আমাদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা খাতের পিছিয়ে থাকার দায়ের অনেকটাই ইউজিসির ওপর বর্তায়। গবেষণা ক্ষেত্রে মান নির্ধারণ, তদারকি, যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ—এ বিষয়গুলো রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিশ্চিত করবে ইউজিসি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ইউজিসি এসব ক্ষেত্রে একদিকে যেমন কাযর্কর ভূমিকা রাখেনি, অন্যদিকে ‘বিশ্বমানের ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান’ গড়ে তুলতে যে দিকনির্দেশনা প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রেও নেই কোনো দিকনির্দেশনা। ইউজিসি পরিচালনার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা গবেষণা প্রশাসন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী নীতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তেমন অবগত নন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ইউজিসির ক্ষমতায়ন, নেতৃত্বের অরাজনৈতিকীকরণ এবং আন্তর্জাতিকীকরণ এখন সময়ের দাবি।
উচ্চশিক্ষার সঙ্গে আমাদের কর্মসংস্থানের সংযোগটা খুবই কম। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি। তাঁদের মধ্যে দক্ষতার ব্যাপক ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: তরুণ বেকারত্ব ও স্নাতক পাসদের বেকারত্ব—দুই ক্ষেত্রেই আমরা এক মহা সংকটে। আমাদের মাধ্যমিক-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা এবং শ্রমবাজারে প্রস্তুতির যোগ্যতা ও প্রত্যাশার মধ্যে ব্যাপক বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমরা উদ্বৃত্ত ডিগ্রিধারী তৈরি করছি। মূল সমস্যা হলো এই ডিগ্রিধারীরা চাকরির বাজার প্রয়োজনীয় দক্ষ যুবগোষ্ঠীর জোগান দিচ্ছে না। প্রতিবছর হার্ড স্কিল ও সফট স্কিলের ঘাটতি নিয়েই শ্রমবাজারে চাকরির খোঁজে প্রবেশ করছে লাখ লাখ তরুণ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ধরনের ভর্তি বাণিজ্য চলে তাতে একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষার জন্য অপ্রস্তুত অনেক তরুণকে ভর্তি করা হচ্ছে, একইভাবে শ্রেণিকক্ষে মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। সে কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আজ কর্ম অদক্ষ, শিক্ষিত বেকার উৎপাদনের কারখানা। আমাদের উচ্চশিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের সংযোগটা শক্ত করতে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি দূর করতে হবে। উত্তরণের জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষার নিয়ন্ত্রিত প্রসার। এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে নজর দিতে হবে: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত স্নাতক শিক্ষার পাশাপাশি বাজারমুখী বৃত্তিমূলক ডিপ্লোমা/সার্টিফিকেটে প্রশিক্ষণ প্রদান; জনশক্তি পরিকল্পনা ব্যবস্থায় সংস্কার এবং নতুন ডিগ্রি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি ও অনুমোদন এবং নীতির নিয়মিত পর্যালোচনা।
হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতো রয়েছে। আমাদের বেসরকারি খাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে কতটা প্রস্তুত?
নিয়াজ আসাদুল্লাহ: উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নব্বইয়ের দশকে স্থাপিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো সন্ত্রাস ও সেশন-জ্যাম মুক্ত নিরাপদ ও নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিশ্চিত করে। বিকল্প বেসরকারি ধারার মোকাবিলা করতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভৌত অবকাঠামোতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। একটা বিষয় হলো বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি—কোনো ক্ষেত্রেই অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও গবেষণার সক্ষমতা বিচারে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের প্রস্তুতি নেই।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) থেকে জেনারেল আজিজ আহমেদের এবং পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের ঢাকা থেকে ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি দুটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। তা সত্ত্বেও একতরফা আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সুযোগটা পাচ্ছে। তার সূত্র ধরেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার দাবি এসেছে।
এটা সত্যি যে বিদ্যমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিও গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষা বা পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অনিয়ন্ত্রিতভাবে সম্প্রসারণ হয়ে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা এখন ১৫৫, যার অনেকগুলোর অনুমোদন প্রশ্নবিদ্ধ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাজারমুখী সনদ বিক্রি করে বিনিয়োগটাকে উঠিয়ে আনা। প্রয়োজনীয় শিক্ষকের বিবেচনায় প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে এগিয়ে। তবে গবেষণার সক্ষমতা বিচারে সরকারি ও বেসরকারি, দুই খাতের একটিও সব বিষয়ে পিএইচডি প্রশিক্ষণের যোগ্য নয়।
তাই সময় এসেছে, সরকারি না বেসরকারি, এই বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে উচ্চশিক্ষা খাতে মৌলিক সংস্কার শুরু করা প্রয়োজন। আমাদের একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু ও নিয়ন্ত্রণের কার্যকর নীতিমালা নেই, একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলপত্রে গবেষণা ডিগ্রিকে অগ্রাধিকার দেয়নি। প্রস্তুতি ও সক্ষমতা–নির্বিশেষে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলেই পিএইচডি প্রোগ্রাম থাকবে, এই প্রথা বন্ধ করতে হবে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সর্বজনীন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং মানদণ্ড সূচক নির্ধারণ, যা পূরণ সাপেক্ষেই কেবল গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।